মানবাধিকার-ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় একজন মানবতাবাদি ন্যায় বিচারক সিজেএম, মোহাম্মদ আলী আহসান এর নজির বিহীন রায়

September 5, 2022,

মুজিবুর রহমান মুজিব॥ মানবজাতি ও মানবসভ্যতার অভিনব ও ঐতিহাসিক অবদান আইনের আবিস্কার ও প্রয়োগ। আধুনিক মানব সভ্যতা একটি আইনগত মৌলিক অবকাঠামোর উপর ভিত্তি করে দাড়িয়ে আছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিশ্বসমাজের সর্ব্বোচ্য সংস্থা সম্মিলিত জাতিসংঘ কতেক নির্ধারিত আইনী বিধিবিধান দ্বারা পরিচালিত। আধুনিক বিশ্বে আইনের শাসনের বিকল্পনাই।আধুনিক কল্যান কামি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গঁ আইন সভা, ২ বিচার বিভাগ ও ৩ প্রশাসন, লেজিস লেটিভ এ্যসেম্বিলি, জুডিসিয়ারী ও নিব্বাহী বিভাগ পরস্পর স্বয়ং সম্পূর্ন ও স্বাধীন-স্বাংবিধানিক এই স্বীকৃতির মাঝে ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ন স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারেনি। ফলতঃ আইন অঙ্গঁনে দীর্ঘ দিন যাবত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথকিকরন আন্দোলন দীর্ঘ দিন ধরে চলছিল। অবশেষে মাজদার হোসনে মামলার রায় ইতি বাচকহলে বিগত দীর্ঘ মেয়াদী তত্ত্বাবধায়ক সরকারামলে বিচার বিভাগ প্রশাসন থেকে সম্পূর্নরূপে স্বাধীন হয়ে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেসী সিষ্টেম চালু হয়। আইন কানুনের আধুনিক আমলে এমন সংযোজন পরিবর্তন নতুন ও ব্যতিক্রমী। ইতি পূর্বে নিম্ন আদালতের বিজ্ঞ হাকিমগন ম্যাজিষ্ট্রেসীর সঙ্গেঁ সঙ্গেঁ প্রশাসনিক কার্য্যক্রমেও ব্যস্ত থাকতেন। পরিবর্তিতও সংশোধিত সংযোজিত ব্যবস্থায় বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যেিজষ্ট্রটগন শুধু মাত্র বিচার কার্য্যই সম্পাদন করেন। সাংবিধানিক বিধি বিধান এবং মাজদার হোসেন মামলার রায় এর প্রেক্ষিতে বিচার বিভাগ প্রশাসন থেকে সম্পূর্ন স্বাধীন হয়ে একজন পদস্থ সিনিওর বিচারক চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট, একজন অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এবং একাধিক বিজ্ঞ সিনিওয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ও বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সমন্ধয়ে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সিস্টেম চালূ হয়। বিজ্ঞ সিজেএম, সুন্নতি, সৎ ও নির্ভীক ন্যায় বিচারক মাহবুব মুর্শেদ সাহেবকে দিয়ে সি.জে.এম প্রথা চালু হয়ে বর্তমানে সততা আন্তরিকতা ও জন প্রিয়তার সাথে মোহাম্মদ আলী আহসান এ জেলার সি.জে.এম এর গুরু দায়িত্ব কৃত্বের সাথে পালন করছেন। বিত্তবান প্রভাবশালী প্রবাসী ও অধ্যুসিত এই জেলায় এক জন সৎ ও ন্যায় বিচারক হিসাবে তিনি সকল মহলে সর্বত্র প্রশংসিত। তার কর্তব্য নিষ্টা, সততা, ন্যায়, পরায়নতা তর্কাতিত/প্রশ্নাতীতা। মামলার জট নিরসন, স্বম্প সময়ে ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে তাঁর বিভিন্ন ইতি বাচক পদক্ষেপ বার এবং বিচার প্রার্থী জনগন কর্তৃক প্রশংসিত। ব্যক্তি হিসাবে ও মানুষ আলী আহসান সুঠাম শরীরের অধিকারি, ভদ্র, বিনয়ী, সদাহাসি খুশী সমেত একজন সহজ, সরল সাদা মনের মানুষ। কোন অহংকার, অহংবোধ, কি হনুরে ভাব নেই। বরং একচিলতে মুচকি বিনয়ী হাসি লেগে আছে মুখে। এহেন বিজ্ঞ বিচারক মোঃ আলী আহসান গত দোছরা আগষ্ট জি আর ১৮৮/২০১২ (শ্রী) বাঃ দঃ বঃি ৪৪৭/৩২৫/৩০৭/৩৭৯/৫০৬ ধারার একটি মামলায় একটি ব্যতিক্রমী ও নজির বিহীন রায় দিয়ে জেলার আইন জীবী সমাজ বিচার প্রার্থী জনগনের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, প্রশংসিত হয়েছেন। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরনে প্রকাশ শ্রীমঙ্গল উপজেলাধীন জনৈক মাহমুদ মিয়া, একই উপজেলাধীন নুরমিয়া, এমরান মিয়া, মিজান মিয়া গং এর বিরুদ্ধে বাঃ দঃ বিঃ ৪৪৭/৩২৫/৩০৭/৩৭৯/৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করলে থানা পুলিশ তদন্ত শেষে অভিযোগ পত্র দাখিল করলে মামলাটি বিচারের নিমিত্বে বিজ্ঞ সি,জে, এম আদালতে প্রেরিত হয়। বিজ্ঞ বিচারিক হাকিম, বিজ্ঞ সি, জে,এম মোহাম্মদ আলী আহসানের আদালতে উপযুক্ত স্বাক্ষী প্রমানে বিবাদী নুর মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য প্রমানিত হয়। বাঃ দঃ বিঃ ৩২৫ ধারার শাস্তি প্রসঙ্গেঁ আইন বলছে Volunterli Casing grivious hert, সর্বোচ্ছ শাস্তি সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড, বাঃ দঃ বিঃ ৩০৭ ধারা প্রসঙ্গেঁ বলা হয়েছে Attemet to marder দশ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড দেয়া যেতে পারে। একজন ন্যায় বিচারক একজন রক্তে মাংসে গড়া মানুষ, তাঁর হৃদয়ে মানব প্রেম ও বিবেক বোধ বিদ্যমান। বাংলাদেশের কারাগার সমূহ সংশোধনাগার নয়, বরং বিত্তবান ও প্রভাব শালীদের দাপটে, হম্বি, তম্বিতে কারা প্রশাসন বিপর্য্যস্থ। বিব্রত। একজন ডি.আই.জি প্রিজন সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তা হলেও কারাগারে কারা বিধি সমূহ যথাযথভাবে মানা হয় না। খুনী খন্দকার মুশতাক সরকারামলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার জাতীয় নেতার নৃশংশ হত্যাকান্ড বাংলাদেশের কারা ইতিহাসে কলংকময় অধ্যায়। বাংলাদেশের- “সেইফ হোম” সমূহ মামলার বিবাদী নয় ভিকটিম দের জন্য নিরাপদ নয় জাতীয় পত্র পত্রিকায় এমন সংবাদ হরহামেশাই প্রকাশিত হয়। এমতাবস্থায় বিবেক বান বিজ্ঞ বিচারক মোঃ আলী আহসান তাঁর মানবিক, ব্যতিক্রমি ও নজির বিহীন রায় এ বলেন আসামী নূর মিয়ার বর্তমান বয়স ৫১ বছর তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী ও দুটি নাবালক সন্তান রয়েছে। নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় এই আসামী অভ্যাসগত অপরাধি AcivwaHabituel offenderbb। দন্ডের উদ্দেশ্যে প্রতিশোধ Retribution নয়, বরং সংশোধন Reformation হওয়ার পথ করে দিয়ে সমাজে ও রাষ্ট্রে একজন সুনাগরিক হিসাবে আত্বপ্রকাশ করার সুযোগ দেয়া। যেহেতু নূর মিয়া পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সেহেতু তিনি সংশোধনের সুযোগ পেলে নিজেকে সংশোধনের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজে ও অবদান রাখতে পারেন। অভিযুক্ত আসামী নূর মিয়া কর্র্তৃক সংঘটিত বর্ণিত অপরাধটি Probation of offenceUnder Ordinance ১৯৬০ এর ৫ ধারার প্রবেশন যোগ্য অপরাধ। এমতাবস্থায় তাকে প্রচলিত নিয়মে কারাগারে পাঠিয়ে সাজা প্রদান না করে পরিবারের বাসমাজেই বসবাসের সুযোগ দিয়ে তার অপরাধ প্রবনতা উদ্দ¦তও বেআইনী আচরন সংশোধন করে পূনঃ অপরাধ রোধ এবং তাকে একজন সৎ, পরিশ্রমী, শিষ্ট্যাচারি ও আইন মান্যকারি নাগরিক হিসাবে পূনর্বাসনের জন্য এবং সংশাধনের সুবিধার্থে The The Probation of offence Under Ordinance ১৯৬০ এর ৫ ধারার আলোকে আসামীর সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থান, অপরাধের প্রকৃতি এবং দৈহিক ও মানবিক অবস্থাবিবেচনায় তাকে সাজা প্রদান না করে এক বছরের জন্য, শর্ত সাপেক্ষে একজন প্রবেশন কর্মকর্তার তত্বাবধানে প্রবেশন প্রদানকরা যুক্তিযুক্ত ও সমীচীন মর্মে অত্র আদালতের অভিমত। মামলার বর্ননা ও আসামী পক্ষের বক্ত্যব্য মতে অত্র আদালতের এখতিয়ারাধীন এলাকায় আসামীর স্থায়ী বাসস্থান ও পেশা রয়েছে। তাছাড়া নথি পর্যালোচনায় আসামীর পূর্বাপর ইতিহাস, আর্ত সামাজিক অবস্থাসহ অন্যান্য পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারনা লাভ হওয়ায় আসামীকে প্রবেশনে পাঠানোর পূর্বে প্রবেশন কর্মকর্তার নিকট হতে প্রাক দন্ডাদেশ প্রতিবেদন Pre-Sentence Report  তলবের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে পরিলক্ষিত হয়। অতএব আদেশ হয় যে, অভিযুক্ত নূর মিয়া এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগচবহধষ পড়ফব ১৮৬০ এর ৩২৫ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমান করতে সক্ষম হওয়ায় তাকে উক্ত ধারায় দৌষী সাবস্থ করা হল। তাকে ২০,০০০/- টাকার বন্ডে দুই জন স্থানীয় জামিনদার এর জিম্মায় The Probation of offenc Under Ordinance ১৯৬০ এর ৫ ধারার বিধান অনুসারে নিম্ন লিখিত শর্ত স্বাপেক্ষে আগামী এক বছরের জন্য প্রবেশন দেয়া হল। একই সাথে আসামীকে The Probation of offenceUnderOrdinance  ১৯৬০ এর ৬ ধারার বিধান অনুসারে আঘাতের দরুন সংঘটিত অপরাধের ক্ষতি পূরন এবং মামলার খরছ বাবত ১০,০০০/- টাকা জখমি কবির মিয়া বরাবরে আগামী ০৪/০৯/২০২২খৃীঃ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ প্রদান করা হল।প ফর্মে নিম্ন লিখিত শর্তাবলী সংযোজন করে বন্ড দাখিল করা হউক, ব্যর্থতায় হাজতবাস। রাষ্ট্র/বাদী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন বিজ্ঞ এ.পি.পি সৈয়দ সাইফুর রহমান এবং বিবাদীপক্ষে ছিলেন বিজ্ঞ এডভোকেট মিনহাজ উদ্দিন।
প্রবেশনের শর্তাবলী
১। প্রবেশনার আগামী এক বছরের জন্য প্রবেশন কর্মকর্তা, মৌলভীবাজার এর তত্ত্বাবধানে থাকবেন এবং তার নির্দেশনা সমূহ মেনে চলবেন।
আসামী উপযুক্ত একবছরের মধ্যে কোন অপরাধ করবেন না, শান্তি শৃংখলা বজায় রাখবেন, সদাচরন করবেন।
আসামী বা তার জামিনদার এক বছরের মধ্যে অত্র আদালতের এক্তিয়ারাধীন এলাকা স্থায়ী ভাবে ত্যাগ করতে পারবেন না। নামাজ পড়বেন, বৃক্ষ রোপন করবেন, মাদক সেবন চলবে না, জুয়া, তাশ, ক্যেসিনো থেকে দুরে থাকতে হবে।
সৎ ও শান্তি পূর্ন জীবন যাপন এবং সৎ পথে জীবিকা নির্বাহ করবেন। ভিকটিমের কাছে ক্ষমা চাইবেন এবং সর্ম্পক পূনঃ প্রতিষ্ঠা করবেন” এই ছাব্বিশটি হিতোপদেশ মূলক নির্দেশনামা সম্বলিত বিজ্ঞ বিচারিক হাকিমের এই মানবিক রায় মাতৃভাষা বাংলায় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, সহজবোধ্য ও সুললিত ভাবে বিজ্ঞ বিচারিক হাকিম বয়ান করছেন। যা স্থানীয় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেসির ইতিহাসে ঐতিহাসিক অধ্যায় হিসাবে লিপি বদ্ধ থাকবে। একাত্তোরের একজন মাঠের মুক্তি সেনা হিসাবে স্বাধীন বাংলা দেশে যৌবনকালে ঘুষ দুর্নীত সামাজিক অনাচার অবিচার এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ঘুষখোর, সুদ খোর, দূর্নীতবাজদের সাথে হাত মিলাইনি আতাত করিনি। সে সব সরকারি কর্মকর্তা জনস্বার্থে গনমুখী কর্মকান্ড করেছেন তাদের সহ যোগিতা করেছি সহায়তা দিয়েছি। বিভিন্ন সময় বিভন্ন দায়িত্ব থাকাকালে কারো দালালি করিনি। তাঁদের নামে অর্থ আদায় করে আত্মসাত করিনি বরং ঘুষ খোর কর্তাদের মধ্যে এ ডি,এম রজব আলী, জেলা জজ সিকন্দর আলী, ট্রাইব্যুনাল জজ নূর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সরকারের উমেদার তাবেদার হইনি, হইনি সিকন্দর কা মোকদ্দরও। জেলা আইন জীবী সমিতি ও ভালো জজ সাহেবদেরকে সম্মান করেন, সম্ভর্ধনাদেন, আপদ, বিপদ ও বিপথগামী উচন্ট খন্নাস ও খবিসগন কে দ্রুত বিদায়ের পথকরে দিয়েছি। এই লোখার কোন বানিজ্যিক বৈষয়িক অসৎ উদ্দেশ্যে নেই। একজন কলম সৈনিক হিসাবে সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলা আমার ইমানী দায়িত্ব। সত্য ও ন্যায়ের নির্ভীক সৈনিক সৎ ন্যায় পরায়ন ও ন্যায় বিচারক সি,জে,এস, মোঃ আলী আহসানের এই মানবিক ও ব্যতিক্রমি রায়কে আমাদের বারের বিজ্ঞ সভাপতি এ,এস,এম আজাদুর রহমান এডভোকেট এবং বিজ্ঞ সম্পাদক এডভোকেট বদরুল হুশেন ইকবাল অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। নিয়মিত প্রেকটি সে না থাকলেও আমি আমার বারের একজন প্রবীন সদস্য। আশির দশকে মহামান্য হাই কোর্টে তালিকাভুক্ত। ছয় মেয়াদে মহান আল্লাহর অপার মেহেরবানীতে আমার সমিতির সম্মানিত সদস্যগন আমাকে সভাপতি/সম্পদক নির্বাচিত করে ছিলেন। এ জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর ছিলাম। দূর্নীতি দমন কমিশন দুদকের মামলাও চালিয়েছি। একজন প্রবীন আইনজীবী ও কলমসৈনিক হিসাবে সি,জে,এম মোঃ আলী আহসান এর এই মানবিক জাজ মেন্টকে স্বগত জানাই, বিজ্ঞ বিচারকের সুস্ব্যাস্থ দীর্ঘায়ু ও কল্যান কামনা করি।
[ মুক্তিযোদ্ধা, সিনিওর এডভোকেট হাইকোর্ট। সাবেক সভাপতি জেলা বার ও প্রেসক্লাব।]

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com