মাহে রমজান ও আমাদের করণীয়
ডাঃ ছাদিক আহমদ॥ পবিত্র রমজান মাস রহমত, বরকত, নাজাতের মাস। ধৈর্য্য-ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির মাস। এ মাস সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ মাস- কেননা এ মাসেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়। এ মাসেই শবে কদরের রাত অর্থাৎ হাজার রাত অপেক্ষা শ্রেষ্ট রাতের মর্যাদা লাভ করে। এ মাসে জাহান্নামের দরজা বন্ধ থাকে আর জান্নাতের দরজা খোলা থাকে। রোজার এক মাস পর আমরা মহান আল¬াহ’তাআলার আনুগত্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইদগাহ মাঠে সমবেত হই। ঈদের এই মিলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, পুরনো দিনের হিংসা-বিদ্ধেষ, ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্য, সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় করা। পরস্পরে আবদ্ধ হবো ভালোবাসার বন্ধনে। সৃষ্টি করবো মানবতাবোধ। মানবতা মানে সত্য ও সুন্দরের চর্চা করা। যেখানে মানবতা নেই সেখানে শান্তিও নেই। মানবতার বিকাশ ও উন্নয়নের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, মায়া-মমতা, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, সোহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ। এবং দূর হয় হিংসা-প্রতিহিংসা, উগ্রতা, হটকারিতা, গোড়ামি, সাম্প্রদায়িকতা ও কুসংস্কার।
অন্যদিকে পৃথিবীতে শান্তি আনতে হলে মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করা, অনাহারীকে খাদ্য দেয়া, কন্যা দায়গ্রস্থ পিতার মেয়েকে বিয়ে দেয়া, গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাক্ষেত্রে আর্থিক সাহায্য করা, অসহায়দের সহায়তা করা, গরীব রোগীর চিকিৎসায় এগিয়ে আসা, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান করা, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা, সৎ পরামর্শ দেয়া এবং বিপদগামীকে সুপথে আনাও মানবতার ধর্ম।
পক্ষান্তরে, সমাজে অশান্তি, ফেৎনা, নৈরাজ্য-নৈরাশ্য, বিশৃঙ্খলা, ঝগড়া-বিবাদ, জ্বালা-যন্ত্রণা, কারো নিরাপত্তার বিঘœ ঘটানো এবং অন্যায় ও ক্ষতিকর কাজ থেকে বিরত থাকা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
অন্যদিকে ঈদ এহেন নিছক আনন্দ উল¬াস নয় বরং কোথাও কোথাও করুণ আর্তনাদও শোনা যায়।
সমাজের অসহায় দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের এ করুণ আহজারী ঈদের খুশীকে ¤¬ান করে দেয় এবং প্রশ্ন বিদ্ধ করে। সরকার ও ধনী শ্রেণীর লোকজন এদায় এড়াতে পারেন না। কারণ মহান আল¬াহ’তাআলা ধনীদের সম্পদে দরিদ্র-বঞ্চিতদের অধিকার নির্ধারণ করে দিয়েছেন কিন্তু আমরা ঈদের মাঠ পেরিয়েই ভ্রাতৃত্ব-সোহার্দ্য, সংহতি ও ঐক্য ভুলে যাই- যা হওয়া উচিত নয়।
আমরা ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হব। হৃদয়ে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে ঈদের প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করবো। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই সুন্দর-সুফলা, বাংলাদেশকে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সবাই মিলে সচেষ্ট থাকবো। দেশকে ভালোবেসে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো। আমরা মহান রমজান মাসের শিক্ষা ও ফজিলতে মুগ্ধ হয়ে যাবতীয় অন্যায় অবিচার ও মানবতা বিরোধী কাছ থেকে নিজেকে বিরত রাখবো এবং সমাজকে এই পঙ্খিলতা থেকে মুক্ত রাখতে সচেষ্ট থাকবো। ধর্ম-বর্ণ, গোত্র ও শ্রেণি নির্বিশেষে সকলের মাঝে মহান সিয়ামের আত্মত্যাগ ছড়িয়ে পড়–ক এবং ঈদের আনন্দ সবার হৃদয় মথিত হোক এই হোক আমাদের পবিত্র অঙ্গীকার। লেখক-ডাঃ ছাদিক আহমদ, জেলা প্রতিনিধি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)।
মন্তব্য করুন