মিনিষ্টার আনোয়ার হোসেন মঞ্জু কহেন শুনেন পূন্যবান মিনিষ্টারদের ভাষণ সব মিথ্যা বয়ান

June 5, 2017,

মুজিবুর রহমান মুজিব॥ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। মাননীয় মন্ত্রী, বন ও পরিবহন মন্ত্রনালয়। তাঁর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি-জেপির প্রধান। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী মাননীয় মন্ত্রী। সৌভাগ্যের বরপুত্র। জীবনের যত প্রাপ্তি অর্থ-বিত্ত-মানসম্মান তাঁর পদতলে লুটোপুটি খাচ্ছে। ভাগ্যবান আনোয়ার হোসেন যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান। পিতা আধুনিক সাংবাদিকতার পথপ্রদর্শক দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক ও প্রান পূরুষ তফাজ্জুল হোসেন মানিক মিয়া। মাতা ঐতিহ্যবাহী ফরিদপুর খন্দকার বাড়ির কৃতি কন্যা মাজেদা বেগম। জ্যৈষ্ট ভ্রাতা ব্যারিষ্টার মঈনুল হোসেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় আইনজীবী। তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা। পিতা-মাতা-ভ্রাতার আদরের দুলাল আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ছাত্র জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্বে ছিলেন। উচ্চ শিক্ষিত। সুবেশি। সুদর্শন। স্বজ্জন। সহজ সরল বন্ধু বৎসল সাদামনের মানুষ। উজ্জল ফর্সা চেহারার মিষ্টি মায়াবী মুখে এক চিলতে মুচকি মিষ্টি হাসি লেগে আছে মুখে। সুদর্শন আনোয়ার হোসেন একজন সুবক্তাও বটেন। গলাগলি ও কোলাকুলিতে না হলেও সাম্প্রতিক কালে মহাজোট সরকারের কতেক মন্ত্রী বেহুদা বলাবলি ও গলাবাজিতে অতিশয় পারঙ্গঁমতা প্রদর্শন করছেন। দু’জন মাননীয় পূর্ণ মন্ত্রীও লাগামহীন কথা বলে আদালত অবমাননায় অভিযুক্ত অতঃপর দন্ডিত হলেন। ছোট দলের বড় নেতা স্ব-ঘোষিত বাম কমরেড দিলীপ বড়ুয়া একাধিকবার মহান জাতীয় সংসদে নির্বাচন করে বরাবরই জামানত খুইয়ে শ’কয়েক ভোট পেয়েছিলেন। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন চৌদ্দদলীয় জোটের শরীক, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের প্রধান কমরেড দিলীপ বড়ুয়াকে দয়া করে মন্ত্রী সভায় ঠাই দিয়েছিলেন সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনা। চীন পন্থি বলে পরিচিত মার্কসবাদ লোননবাদের প্রবক্তা দিলীপ বড়–য়া একটি বুর্জোয়া সরকারের শিল্পমন্ত্রী হয়ে দেশীয় শিল্পায়ন কর্ম সংস্থান ও উন্নয়নে কোন ভূমিকা না রাখলেও মিঃ বড়ূয়াকে ক্ষমতার অপব্যবহার, দূর্নীতি ও ফ্ল্যাট কেলেংকারির বদনাম নিয়ে বিদায় নিতে হয়েছে। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া মাননীয় মন্ত্রীর গুরু দায়িত্ব পালনের চাইতে আবুলতাবুল বয়ানে ব্যস্ত থাকেন। টিভি, ক্যামেরা সামনে দেখলেই দুই চোখ বুঝে কমরেড দিলীপ বড়ুয়া তার মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের চাইতে বিরোধীদল ধোলাইয়ে ব্যস্থ হতেন। সকল নির্বাচনে হেরে বিগত ভাগাভাগির ভোটার বিহীন নির্বাচনে মাগনা সাংসদ এবং শেখ হাসিনার দয়ায় তথ্যমন্ত্রী হয়ে সমাজতান্ত্রীক কর্ম্মসূচী বিহীন জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল জাসদের এক ভগ্নাংশের প্রধান হাসানুল হক ইনু সাহেব বাকবাকুম পায়রার মত নাঁকি গলায় দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মায়নাশ করতে হুংকার ছাড়েন। অথছ তার মন্ত্রনালয়ে বহুবিধ সমস্যা ও সংকট বিদ্যমান এবং তাঁর দল জাসদ বহুধাবিভক্ত হয়ে নাঘরকানা ঘাটকা হওয়ার কারনে জনগন থেকে মায়নাস হয়ে গেছেন।
মাননীয় মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ছোট দলের বড় নেতা হলেও তিনিও তাঁর দলের অবস্থান উল্লেখিত নেতা ও দলের মত নয়, কিঞ্চিত ব্যাতিক্রম। তাঁর নিজের নির্বাচনী এলাকায় তার নিজস্ব একটি অবস্থান আছে। পূর্ব উল্লেখিত নেতাদের মত তিনি হারুগু-হারা নন। বক্তৃতা বিবৃতি ভাষনেও তিনি সংযত। সংবেদনশীল। নিয়োগ কারি কর্তৃপক্ষকে খুশী করার জন্য সরকারের বেহুদা সাফাই এবং বিরোধী দলকে অপ্রয়োজনীয় ধোলাই করেন না। কিন্তু জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের বিগত পহেলা জুন, সতেরো সংখ্যায় শেষ পাতায় বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কম পরিবেশিত ‘মন্ত্রী মিনিষ্টার হল মিছা কথা বলার জন্য’ শিরোনামের সংবাদ দৃষ্টে দেশবাসি মর্মাহত হয়েছেন। বিশ^ পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বিগত একত্রিশে মে বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন- “ আই এ্যম প্রাউড, আমি যখনই যে মন্ত্রনালয়ে ছিলাম, আই হ্যেভ বিন আ্যবল টু ওয়ার্ক উইথ ভেরি ব্রিলিয়ান্ট পিপল। মন্ত্রী- মিনিষ্টার এক জন থাকে বাবা শুইনা রাইখ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চোখ বুলাতে থাকা একজন সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে মাননীয় মন্ত্রী বলেন- “ ঐ কাগজ পড় ক্যান তুমি’ আমার কথা শুন, ওইটা তো মিথ্যা কথা সব”। – “মন্ত্রী মিনিষ্টার হল তোমাদের কাছে মিথ্যা কথা বলার জন্য”। সংবাদ সম্মেলনে আমলাদের অপ্রাসঙ্গিঁক প্রশংসা করে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন বিশ^ পরিবেশ দিবসের অনুষ্টানে উপস্থিতির জন্য প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য মন্তব্য করে বলেন- “এটা আমি চামচাগিরি করার জন্য বলতেছিনা, দালালি করার জন্যও বলতেছিনা। আমার জীবনে দালালি করার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করিনা। আই হ্যাভ বিন গিবেন গড মোর দ্যান আই ডিজার্ভ-”।
ভাগ্যবান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু রাজনীতিবিদ ও মাননীয় মন্ত্রী হিসাবে খুবই সৌভাগ্যবান। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। বিরাশি সালে সেনা প্রধান লেঃ জেঃ হোসেন মোহাম্মদ এর্শাদ সংবিধান ও আর্মি কোড অব কনডাক্ট ভঙ্গঁ করে বয়োঃবৃদ্ধ রাষ্টপতি বিচারপতি আব্দুছ ছাত্তার ও সরকারকে বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ এর মাধ্যমে দেশব্যাপী সংবিধান পরিপন্থী সামরীক আইনজারী করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন। ভালো মানুষ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সামরীক সৈর শাসক জেনারেল এর্শাদ সরকারকে সমর্থন করে তাঁর সরকারে যোগ দিয়ে সুদীর্ঘ নয় বৎসর পূর্ন মন্ত্রী ছিলেন।
রাজনীতিবিদ এবং মাননীয় মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সত্যিকার অর্থেই সব বিষয়ে সৌভাগ্যবান। একটি দলের প্রধান হিসাবে দেশে বিদ্যমান সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যাবস্থা মোতাবেক জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করে এককভাবে সরকার গঠন করতে হলে সংখ্যা গরিষ্টতা পেলে সরকার গঠন করার কথা, জনাব মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি জে.পি মূল জাতীয় পার্টির এক ক্ষুদ্রাংশ-ভগ্নাংশ। এককভাবে জে.পির পক্ষে সরকার গঠন নয় ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়াই সম্ভব নয়। ছোট দলের বড় নেতা হিসাবে তিনি এবং তাঁর দলের মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম ছাড়া ভোটের লড়াইয়ে আর তেমন কোন প্রার্থী নেই। চৌদ্দ দলের শরীক দল হিসাবে সরকারের অংশীদার এবং মন্ত্রীত্ব প্রাপ্তি তার জন্য কোন কঠিন ব্যাপার নয়, সেই হিসাবে জাপা এবং একাধিক মেয়াদে আওয়ামীলীগ সরকারামলে তাঁর মন্ত্রীত্বের সময় দীর্ঘ মেয়াদী। সেই হিসাবে তিনি একজন সিনিওর অভিজ্ঞ মন্ত্রী। একজন সিনিওর ও অভিজ্ঞ মন্ত্রীর মুখে মন্ত্রীরা মিথ্যা কথা বলেন মানায় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও একজন মাননীয় মন্ত্রী, মন্ত্রীসভায় তাঁর আরো অগ্রজ ও সিনিয়র মন্ত্রী আছেন, মাননীয় মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, তোফায়েল আহমদ, আমীর হোসেন আমু, রাশেদ খান মেনন, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান প্রমুখ মাননীয় মন্ত্রীগন তাঁর বয়োঃজেষ্ট ও গুরুজন, তাদেরকে তিনি ঢালাওভাবে মিথ্যা কথা বলেন বলতে পারেন না, বলাটা শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ ও রুচীবহির্ভূত কাজ যা আমাদের মত আমজনতার চাইতে মাননীয় মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন বেশি সংরক্ষন-ধারন-লালন করেন-বুঝেনও বেশি। যাঁরা মিথ্যা কথা বলেন তাঁরা মিথাবাদী। মাননীয় মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর এমন তত্বানুযায়ী গোটা সরকারের মন্ত্রীসভা মিথ্যাবাদী এমন ঢালাও অভিযোগ করা যায় না, যদিও তার তত্বঅনুযায়ী তিনি তাই বলতে-বুঝাতে চেয়েছেন।
একটি অনুষ্টানে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ প্রেস ও মিডিয়ার সঙ্গেঁ আলোচনা ও মত বিনিময় কালে তিনি অনেক মূল্যবান বিষয়ে কথা বলতে পারতেন। তাঁর মন্ত্রনালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়- যা বর্তমানে বহুবিধ সমস্যা ও প্রশ্নের সম্মুখীন। বাংলদেশের বনের অবস্থা বেহাল। প্রকৃতিতে ভারসাম্য ইকোলজিকাল ব্যলান্স এর প্রয়োজনে একটি রাষ্ট্রের কমপক্ষে ত্রিশভাগ ভূমি বনভূমি থাকার কথা যা বর্তমানে এসে সম্ভবত তিন ভাগে ঠেকেছে। অসাধু বন কর্ম্মকর্তা ও বনদস্যো, বনডাকাত, বন চোর এর অশুভ আঁতাতে বনের অবস্থা নাজুক। বিচার হীনতার সংস্কৃতি প্রলম্বিত-বিলম্বিত বিচার ব্যবস্থায় এই অশুভ শক্তিদ্বয় আস্কারা পেয়ে অবাধে বনকর্তন-লুন্ঠন করছে। বিগত কেয়ারটেকার সরকারামলে দেশ ও জাতি প্রধান বন সংরক্ষক ওসমান গনির কলশ ও বালিশ মানির ছড়াছাড়ি দেখেছেন। সেকেলে বনআইন, বন আইনের ৪১/৪২ ধারা জামিনযোগ্য থাকায় বনডাকাতগন সহজেই জামিন প্রাপ্ত হয়ে পূনরায় পূর্ব অপরাধে সক্রিয় হয়। অবিলম্বে বন আইনের হালকা ধারা দুটি সংশোধন এবং অজামিনযোগ্য ও শাস্তি জেলজরিমানার পরিমান বৃদ্ধি করা উচিত। অভিজ্ঞ ও সিনিয়র মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এক্ষেত্রে কাজ করতে পারেন। উল্লেখযোগ্য ভূমিকাও রাখতে পারেন।
রামপাল বিদ্যোত কেন্দ্র নির্মানকে কেন্দ্র করে মেনগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনের অস্থিত্ব এবং ঢাকাই নদী সমূহ দখল দূষনে সোচ্চার হয়ে দেশের পরিবেশবিদ সুশীল সমাজ যখন দেশীয় পরিবেশ রক্ষায় অটল-অনঢ় হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্ছার তখন দেশ ও জাতির এই সংকট ক্রান্তিকালে মাননীয় মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় এর মন্ত্রী হিসাবে সমস্যা ও সংকট সমাধানে বলিষ্ট ভূমিকা নেয়ার কথা, সুশীল সমাজ-প্রেস-মিডিয়ার সহযোগিতা চাওয়ার কথা সেখানে উল্টা এমন আত্বঘাতি মন্তব্য ও তথ্য প্রদান বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এটি সংবিধান ও পবিত্র শপথ ভঙ্গেঁর শামিল। একজন মাননীয় মন্ত্রী অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সততা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের শপথ নেন। মাননীয় মন্ত্রী একাধিকবার একাধিক মেয়াদে এই শপথ নিয়েছেন। মিথ্যা কথা বলা বা মিথ্যাবাদি মাননীয় মন্ত্রী সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকলে সরকারের সততা ও স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে মাননীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু কি বলেন- আমজনতা জানতে চায়।
[ সিনিওর এডভোকেট হাইকোর্ট। মুক্তিযোদ্ধা। কলামিষ্ট ]

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com