মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, একজন নির্ভীক মুজিব সৈনিক মতিউর রহমান চৌধুরী: রাখে আল্লাহ মারে কে? মার্চের স্মৃতি কথা
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ উনিশ-শ একাত্তোরের মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনের এক গৌরবময় অধ্যায়। একাত্তোরের মুক্তিযুদ্ধ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না- ছিল ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের ফল ও ফসল। মুক্তিযুদ্ধের ক্যেনভাসও ছিল বিশাল ও বিস্তৃত।
সাতচল্লিশের ভারত বিভক্তি বৃটিশ বিদায় ও পাকিস্তানী স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের প্রাষাদ ষঢ়যন্ত্রী, প্রতিক্রিয়াশীল ও কায়েমী শাসক চক্র বাংলা ও বাঙ্গাঁলিদের প্রতিবিমাতা সূলভ আচরন করতে থাকলে বাঙ্গাঁলী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতে থাকে। বাঙ্গাঁলী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আপোষহীন নেতা বঙ্গঁশাদুল (তখন ও বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রাপ্ত হননি) শেখ মুজিব বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যান। ছয়ষট্টি সালে ঘোষনা করেন পূর্ণ প্রদেশিক স্বায়ত্ব শাসনের দাবী সম্বলিত এতিহাসিক ছয়দফা কর্ম্মসূচী। ইতিপূর্বে বাষট্টি সালে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্টার লক্ষে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা-তাত্বিক সিরাজুল আলম খান গোপন সংগঠন -নিউক্লিয়াস- গঠন করেন। পাকিস্তান আমলে এভডো, প্রজো, ডি.পি.আর, জাতীয় নিবর্তন মূলক কালাকানুনের কারনে পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক দল সমূহ যথাযথভাবে বিকষিত হতে পারেনি। আন্দোলনে সংগ্রামে ছাত্র সমাজকেই সেসময় মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হয়। ষাটের দশকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ একটি শক্তিশালী সুসংগঠিত ছাত্র সংগঠন। শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান খান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমদ প্রমুখ খ্যাতিমান ছাত্র নেতৃবৃন্দ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলেন -বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন ছিলেন। উনসত্তোরের ছাত্র গনআন্দোলনের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের ফৌজি প্রেসিডেন্ট স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল আয়ূবখানের পতনের পর পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হন আরেক জেনারেল- আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খাঁন। আন্দোলন ও গনদাবীর প্রেক্ষিতে দেশব্যাপী সাধারন নির্ব্বাচন দিতে বাধ্য হন পাক সামরীক স্বৈর শাসক লেঃ জেঃ এ.এম. ইয়াহিয়া খাঁন। আওয়ামীলীগ প্রধান বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সত্তোর সালের সাধারন নির্ব্বাচনকে ছয় দফার রেফারেন্ডাম বলে ঘোষনা করেন।
সত্তর সালের সাধারন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রধান বঙ্গঁবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করলেও ক্ষমতা হস্তান্তরে কাল ক্ষেপন এবং টালবাহানা শুরু করেন পাক ফৌজি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও তার দোসর চক্র। সেনাবাহিনী কতৃক বেপরোওয়া গুলি বর্ষন এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এর দাবীতে দেশব্যাপী আন্দোলন দানা বেধেঁ উঠে। বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিব অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।
আমার মানব জীবনের আনন্দ ও গৌরবজনক অধ্যায় ছাত্র জীবনের শুরুতে সক্রিয় ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে দেশ ও সমাজ কর্মে সম্পৃক্ত হবার সুযোগ ও একাত্তোরের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করা। আমাদের ষাটের দশকের প্রজন্ম এখন সত্তোর এর কোঠায়-জীবন সায়াহ্নে। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় যৌবনের সেই সংগ্রামী দিন ক্ষন গুলি সমুজ্জল। মনের মনিকোঠায় অমলিন। অম্লান।
ষাটের দশকের শুরুতে কলেজের ছাত্রাবস্থায় সাংবাদিকতা লেখা লেখি এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলাম। ছাত্রলীগ এর কেন্দ্রীয় নেতা শক্তিমান সংগঠক সিরাজুল আলম খান এর দেশপ্রেম, অপূর্ব সাংগঠনিক ক্ষমতা, নির্লোভ নির্মোহ জীবনদর্শন-জীবনাচরন আমাকে বিমুগ্ধ করত। তার অনুপ্রেরনায় ছাত্রলীগ কর্মি হিসাবে আন্দোলননে সংগ্রামে নেতৃত্ব দেই-দায়িত্ব পাই। ঐ দশকে প্রথমে মৌলভীবাজার কলেজ শাখা অতঃপর মহকুমা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। পারিবারিক স্বচ্ছলতা ও পিছুটান না থাকার কারনে সার্বক্ষনিক ছাত্র-রাজনৈতিক কর্ম্মকান্ডের অনেক সহকর্ম্মি সহযোগীদের মধ্যে একটি প্রিয় নাম মতিউর রহমান চৌধুরী।
বয়স ও লেখাপড়ায় কিঞ্চিত কনিষ্ট মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গেঁ আমার পরিচয় ও সম্পর্ক ছাত্র রাজনীতি ও সাংবাদিকতার মাধ্যমে। নিকট প্রতিবেশী ঐতিহ্যবাহী হবিগঞ্জ জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সু-সন্তান মতি ষাটের দশকে মৌলভীবাজার কলেজ এর ছাত্র এবং কলেজ হোস্টেল আবাসিক ছাত্র ছিলেন। রাজনৈতিক কারনে কলেজ-হোস্টেল ছেড়ে আমার পাড়ায় বাসা ভাড়া নেন। আমার পৈত্রিক বাসগৃহ মুসলিম কোয়ার্টারস্থ রসুলপুর হাউস তখন ছাত্র রাজনীতি ও নাটকের আড্ডা স্থল। সুদর্শন-দীর্ঘদেহি পাজামা পাঞ্জাবী পরিস্থিতি মতিউর রহমান চৌধুরী থাকতেন মিছিলের অগ্রভাগে। শ্লোগান দিতেন। সুবক্তাও ছিলেন। ফলতঃ আমার সঙ্গেঁ সুসম্পর্ক মজবুত হতে থাকে। অর্ধশত বৎসর পর এখনও আছে। একাত্তোরের মার্চ মাস। দেশীয় রাজনীতির টাল-মাটাল অবস্থা। পহেলা মার্চ এক ঘোষনায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তেছরা মার্চের সংসদ অধিবেশন বাতিল ঘোষনা করলে দেশীয় রাজনীতি উত্তপ্ত হতে থাকে। সাতই মার্চ এর ঐতিহাসিক ভাষনে বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিব জাতিকে কতেক জরুরী দিক নির্দেশনা দেন। ক্ষমতা হস্তান্তর, দেশীয় রাজনীতির বিরাজমান সংকট নিরসনে মুজিব-ভূট্টো, ইয়াহিয়া, শেখ মুজিব সংলাপ চলতে থাকে। গোপনে গোপনে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য গোলাবারুদ সংগ্রহ করতে থাকে পাক শাসক চক্র। এলো পঁচিশে মার্চের কালো রাত্রি।
পঁচিশে মার্চ একাত্তোর-অপারেন সার্চ লাইট- নামে বাঙ্গাঁলীদের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষনা করে খুন, ধর্ষন, লুন্ঠন, অগ্নি সংযোগে মেতে উঠে পাক হানাদার বাহিনী।
একাত্তোরের তেইশে মার্চ পাক-প্রজাতন্ত্র দিবসে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রটেষ্ট ডে- প্রতিরোধ দিবস ঘোষনা করলে সমগ্র বাংলাদেশ ব্যাপী লাল সবুজের স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। চানতারা খচিত পাকিস্তানী পতাকার অস্তিত্ব শুধুমাত্র কেন্টনমেন্ট এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তেইশে মার্চ বিকালে চৌমুহনা চত্তরে আমি প্রতিরোধ সভার প্রধান অতিথি হিসাবে পাকিস্তানী পতাকা ও পাকিস্তানী জাতির জনক মিঃ জিন্নাহর ছবি পুড়িয়ে লাল সবুজের স্বাধীন বাংলার পতাকা এবং বাঙ্গাঁলী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এর নেতা বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবের ছবি উত্তোলন করি। সেই বিশাল ছাত্র-যুব-জনসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন মহকুমা ছাত্রলীগের নব-নির্বাচিত সভাপতি দেওয়ান আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী। সভাটি সঞ্চালনা করেছিলেন ছাত্রলীগের নব নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক অকাল প্রয়াত নুরুল ইসলাম মুকিত। ছাত্রনেতা মতিউর রহমান চৌধুরী প্রমুখ সেই সভা আয়োজন ও সংঘঠনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছিলেন। চব্বিশ তারিখ আমাদের কাছে খবর আসে কমলগঞ্জ উপজেলায় পাকিস্তান পন্থীগন স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন এবং প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচী পালন করতে দেয় নি। আমরা পরদিন পচিশে মার্চ কমলগঞ্জে পতাকা উত্তোলন ও প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচী পালনের তারিখ দেই। থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান অগ্রজ প্রতিম আব্দুল মালিক এর নেতৃত্বে একদল চৌকশ স্বেচ্ছাসেবক সহ আমরা কমলগঞ্জ যাই। রেজিষ্টারী মাঠে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে আমি স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি। ঐদিন রাতে স্ব-দল বলে ফিরে এসে চৌমুহনা চত্বরে তাৎক্ষনিক মিছিল, সাধনার বারান্দায় নৈশ কালীন আড্ডা শেষে ঐ রাতে আমি আমার পৈত্রিক বাসগৃহ মুসলিম কোয়ার্টারস্থ রসুলপুর হাউসে না গিয়ে রাত্রি যাপন ও অধিকতর আলোচনার জন্য আমার প্রিয় বন্ধু গাজি গোলাম ছরোওয়ার হাদি গাজি (নবীগঞ্জের প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান) সহ ছাত্রলীগ নেতা বন্ধুবর আজিজুল হক ইকবালের গির্জাপাড়াস্থ বাসভবন হক ভিলায় যাই। বিশিষ্ট সাহিত্যিক ছাত্রলীগের প্রতিষ্টাকালীন নেতা বন্ধুবর আজিজুল হক ইকবাল স্বাধীনতা উত্তর কালে কে.এ. হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং প্রেক্লাবের সভাপতি ছিলেন। প্রিয় ইকবাল ও এখন পরলোকে। মহান মালিক তার বেহেশত নসিব করুন। ছাব্বিশে মার্চ ভোর রাতে মৌলভীবাজারে ধর পাকড় শুরু হয়। পাকসেনারা এম.পি আজিজুর রহমান ভাইকে তাঁর গৌজারাই বাসগৃহ থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আমার মুসলিম কোয়ার্টারস্থ বাসগৃহে খান সেনারা অভিযান চালায়। পাকিস্তানী পতাকা এবং জিন্নাহ সাহেবের ছবি পুড়ানোর কারনে পাক সেনারা-গুন্ডা মুজিব ক্যাঁহা হ্যায় বলে শহর ময় হন্যে হয়ে আমাকে খুজেছে। অনেককে ঝুলুম নির্যাতন করেছে। ঐ রাতে আমি বাসায় না আসা এবং রাত্রি যাপন না করার কারনে মহান আল্লাহর রহমতে বেঁচে যাই। ভোরেই আমরা আত্বগোপন করতঃ একে অন্যের সঙ্গেঁ যোগাযোগ রক্ষা করতে থাকি। কোথাও কোথাও পাক সেনাদের সহজ চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি ও বাধা প্রদানের জন্য ব্যেরিকেড-সৃষ্টি করা হয়। নির্ভীক মুজিব সৈনিক, দূঃসাহসী ছাত্রলীগ নেতা মতিউর রহমান চৌধুরী আত্বগোপন ও প্রাণ ভয়ে পলায়ন নয়, সরাসরি খান সেনাদেরকে বেরিকেড প্রদানে আত্ব নিয়োগ করেন। গ্রেপ্তার হন। পর্য্যটন রেস্ট হাউস ছিল খান সেনাদের বিগ্রেড হেড কোয়ার্টার। একত্রিশ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সি.অ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার রানা, ছিলেন দায়িত্বে। গ্রেপ্তারকৃতদের পর্য্যটনরেস্ট হাউসের কয়েদখানায় গ্রেপ্তার করতঃ নির্য্যাতন করা হত। আমার ফুফুত ভ্রাতা আজিবুর রহমানকে আমার বাসগৃহ থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে ছিল খান সেনারা। সেও সেখানে ছিল।
পর্র্য্যটন রেস্ট হাউসে পাক সেনা কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত বীর বাঙ্গাঁলি সন্তানগনকে দুইভাগে ভাগ করতেন খান সেনা কর্তৃপক্ষ। প্রথমভাগে আওয়ামীলীগ, হিন্দু ধর্মাবলম্বি গন যারা পাকিস্তানের দুশ্মন ও বিচ্ছিন্নতাবাদি দুই আম জনতা। প্রথমোক্ত গনকে নির্যাতন করতঃ হত্যা এবং দ্বিতীয় আম জনতাগনকে ধোলাই শেষে ছেড়ে দেওয়া। একজন হৃদয়বান বাঙ্গাঁলি পাক সেনা মতিউর রহমান চৌধুরী ও আজিবুর রহমানের ফর্সা মাসুম চেহারা দেখে দয়া হয়। এই পাকসেনা এই দুই বন্দীকে ইশারায় ছেড়ে দেওয়া আমজনতার কাতারে এনে রাখেন এবং তারা দু’জন কৌশলে পর্যটন রেস্ট হাউস থেকে মুক্তি পান। রাখে আল্লাহ মারে কে? ছাত্র নেতা মতিউর রহমান চৌধুরীকে রাস্তায় ব্যেরিকেড সৃষ্টির অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি প্রথম কাতারের একজন ছাত্র নেতা, সাংবাদিক এবং বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ এর প্রবক্তা। নিখাদ ও নির্ভীক মুজিব সৈনিক তাকেত খান সেনারা ছহিছালামতে নিরাপদে ছেড়ে দেবার কথা নয়। মহান আল্লাহর অপার মেহেরবানী এবং রহমত বরকতে ছাড়া পান। বেঁচে যান। ষাটের কোঠা পেরিয়ে এখন ও উচ্ছল তারুন্যের দিপ্তী নিয়ে বলছেন। লিখছেন। মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক-স্বাধীনতার সংগঠক-বাংলার বানীর প্রতিষ্টাতা সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মনির খুবই প্রিয়ভাজন ছিলেন মতিউর রহমান চৌধুরী। তারই আহ্বানে দৈনিক বাংলার বানীতে স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে যোগদান করেন সম্ভাবনাময় সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী। মফস্বল সাংবাদিক থেকে সেই থেকে তার ঢাকাই সাংবাদিকতা জীবনের শুরু। স্বাধীনতা পূর্বকালে সাপ্তাহিক বাংলার বানীতে আমি ও কাজ করেছি। তখন বাংলার বানীর অফিস ছিল পুরানা পল্টন আওয়ামীলীগ অফিস সংলগ্ন গ্রাউন্ড ফ্লোরের ছোট একটি কক্ষে। এই অফিস এবং অতঃপর অস্টাসি মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকায় বাংলার বানীর অফিসে লেখক সাংবাদিক হিসাবে আমি স্বাক্ষাত করেছি তাঁর সঙ্গেঁ। উজ্জল ফর্সা চেহারার ব্যেকব্রাশ করা চুল বুদ্ধিদীপ্ত দুই চোখ-সুবেশী সুদর্শন শেখ ফজলুল হক মনি আকর্ষনীয় ব্যাক্তি ও ব্যাক্তিত্ব ছিলেন। একজন মতিউর রহমান চৌধুরীর বিলেতে পারিবারিক গাড়ি-বাড়ি-বিশাল ব্যাবসা বানিজ্য ছিল, পদস্থ লোভনীয় সরকারি চাকরির প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ছিল আত্বীয় স্বজন এলাকাবাসি সরকারি বেসরকারী উচ্চ পদে আসীন ছিলেন কিন্তু একজন মতিউর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবেই গ্রহন করেন। স্টাফ রিপোর্টার -কুটনৈতিক রিপোর্টার হিসাবে কাজ করে সম্পাদক হিসাবে দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা এবং দৈনিক মানবজমিন সম্পাদনায় মুন্সিয়ানার প্রমান রাখছেন। বিশে^র সাড়া জাগানো গন মাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসাবে মতিউর রমান চৌধুরী যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন তা এখনও দর্শক-শ্রোতাকে আবেগ আপ্লুত করে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ভবনেও স্মার্ট মিডিয়া ম্যান মতিউর রহমান চৌধুরীর সরব পদচারনা। বাংলাভিশনের সান্ধ্যকালীন টক শো -ফ্রন্ট লাইন- দারুন সাড়া জাগিয়েছিল। দৈনিক সংবাদপত্র ভিত্তিক পর্য্যালোচনা মূলক অনুষ্টান চ্যেনেল আইর – গ্রামীনফোন আজকের সংবাদ পত্রের প্রবর্তক তিনি-ই। বর্ত্তমানে সংবাদপত্রের পর্য্যালোচনা মূলক এই জাতীয় অনুষ্টান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাচ্ছে। স্বাধীনতা উত্তরকালে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতঃ কোন বাড়তি সুযোগ সুবিধা লাভের ধান্দা করেন নি-মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মতিউর রহমান চৌধুরী। যদিও পত্র পত্রিকার সংবাদানুযায়ী ভূয়া সার্টিফিকেট ধারি বহু মুক্তিযোদ্ধা সরকারি সুযোগ সুবিধা গ্রহন করছেন, যা নিতান্তই দূঃখ দূর্ভাগ্য জনক ব্যাপার।
স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জিবিত একজন সিনিয়র সাংবাদিক, স্মার্ট মিডিয়াম্যান মতিউর রহমান চৌধুরী স্বদেশ প্রেম ও স্বাদেশিকতায় উদ্ভোদ্ধ হয়ে দেশও জাতির কথা লিখছেন। বলছেন। তার প্রিয় জীবন সঙ্গিনী সাংবাদিক-ছড়াকার-গ্রন্থকার মাহবুবা চৌধুরী ও স্বামীর চলার পথে জীবন সংগ্রামে সুখ দূঃখ আনন্দ বেদনা, হাসি কান্নার সাথী হয়ে আছেন- জীবন সংগ্রামে অফুরন প্রেরণা যুগাচ্ছেন।
স্বাধীনতার এই বার্ষিকীতে স্বাধীনতার সংগঠক মতিউর রহমান চৌধুরীর সুস্বাস্থ্য দীর্ঘায়ু ও কল্যান কামনা করছি। স্বাধীনতার বীর ও অমর শহীদানের উজ্জল স্মৃতির প্রতি সু-গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
[ষাটের দশকের সাংবাদিক। সাবেক সিলেট বিভাগীয় কমান্ডার, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। সিনিয়র এডভোকেট হাই কোর্ট। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাব।]
মন্তব্য করুন