“মুক্তিযুদ্ধে আনসার কেরানী মহিব উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর অবদান” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত স্মৃতিচারণ মূলক গল্পের প্রতিবাদ
গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ সনে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পাতাকুঁড়ির দেশে এবং সোহেল আহমদ চৌধুরী লিখিত “মুক্তিযুদ্ধে আনসার কেরানী মহিব উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর অবদান” শিরোনামীয় একটি স্মৃতিচারণ মূলক গল্পের প্রতি অনেক পাঠকের মতো আমাদেরও দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। ৫০ বছর পর একটি ঘটনার উদ্বৃতি কতটুকু যথাযথ এবং তথ্যনির্ভর তা নিয়েও প্রশ্ন আসতে পারে। জনশ্রুতি এবং ঐতিহাসিক সূত্রমতে ১৯৭১ সনের ২৭ মার্চ মৌলভীবাজার শহর ছিলো হানাদার কবলিত। এদিন শহরে আরোপিত কার্ফু ভঙ্গের জন্য দু’বার শহর ঘেরাও হয়েছিলো। বিষয়টি ছিলো আলোড়ন সৃষ্টিকারী। ঐদিন শহর ঘেরাও হলেও হানাদার বাহিনী ছিলো তৎপর। এই তৎপর অবস্থায় আর্মির জীপে চড়ে পাঁচজন ছাত্রনেতা কিভাবে মহিব উদ্দীন সাহেবের বাসায় হাজির হয়েছিলেন, সেটি এক বিদগ্ধ প্রশ্ন। কারণ ছাত্র নেতৃবৃন্দের সকলেই শহর ছেড়ে নিকটবর্তী প্রাম সমূেহ অবস্থান নিয়েছিলেন প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে। আনসার অফিসের কেরানী মহিব উদ্দিন সাহেব, ছাত্র নেতৃবৃন্দেকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন কি না সেটি প্রশ্নবিদ্ব। তবে তৎকালীন আনসার এডজুটেন্ট এম,জে আহমদ ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের নিকট কিছু রাইফেল সরবরাহ করেছিলেন ২৫ মার্চের আগেই। সেটি ধ্রুব সত্য। আরও কিছু রাইফেল সরবরাহের কথা ছিলো। কিন্তু হানাদার বাহিনী ২৯ মার্চ তারিখে পলায়ন কালে আনসার অফিসে রক্ষিত রাইফেল গুলোর ম্যাগজিন খুলে নেওয়ায় রাইফেল গুলো অকেজো হয়ে পড়েছিলো। এই রাইফেল গুলো অকেজো করার মূল নায়ক ছিলেন তৎকালীন এস,ডি পিও আব্দুল আজিজ খান। ছাত্র নেতৃবৃন্দের নিকট রাইফেল সরবরাহের খেসারত হিসেবে তৎকালীন আনসার এ্যাডজুটেন্ট এম. জে আহমদকে ধরে নিয়ে হানাদার বাহিনী তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো। মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পর মুক্তিবাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহের জন্য আনসার অফিসের কেরানী মহিব উদ্দিন চৌধুরী সাহেবকে ক্রেডিট দেওয়া হতে পারে। তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু প্রতিবেদনে একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং অবিতর্কিত আওয়ামীলীগ নেতাকে রাজাকারের কাতারে টেনে নেওয়াটা কোন অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না। প্রতিবেদনের একাংশে ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসে মুহিব উদ্দিন সাহেবের শশুরবাড়ি রাজনগরের আশ্রাকাপনে পাকিস্তানি আর্মি এবং দেশীয় রাজাকারকে নিয়ে একটুনা ইউনিয়ন পরিষদের যুদ্ধকালীন ভাইস চেয়ারম্যান আছকির মিয়া স্বশরীরে হাজির হয়ে মুহিব উদ্দিনকে ধরে এনেছিলেন, এমন উদ্ভট কেচ্ছা কাহিনীকে মেনে নেয়াটা মুশকিল। এখানে প্রাসঙ্গিক যে, একাটুনা নিবাসী মরহুম আছকির মিয়া ১৯৭৩ সনের ইউনিয়ন নির্বাচনে নিজ ইউনিয়নে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে মৌলভীবাজার সদর থানা আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতাও ছিলেন। ১৯৭০ সনের সাধারণ নির্বাচনে একাটুনা ইউনিয়নে দলকে সংগঠটিত করার পেছনেও তার ভূমিকা ছিলো। এছাড়া ২৭ মার্চ ১৯৭১ সনের মৌলভীবাজার শহর ঘেরাওয়ের ব্যাপারেও তিনি সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। (তথ্য সুত্র: লেখক, গবেষক, সাংবাদিক সরওয়ার আহমদ প্রণীত জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে মৌলভীবাজার শিরোনামীয় গ্রন্থের ৩৯৬ এবং ৪১৬ পৃষ্ঠা)
উ‘েল্লখিত বাস্তবতার আলোকে একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামীলীগ নেতাকে বিতর্কিত করা হীনমানসিকতার সমতুল্য। আমরা এই বানোয়াট প্রতিবেদনের নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ত্রই বানোয়াট প্রতিবেদন আমেরিকা থেকে পাঠ করে আমরা মর্মাহত হয়েছি।
মরহুম আছকির মিয়ার পক্ষে তদীয় পুত্রগন-
মোঃ আম্বিয়া মিয়া, মোঃ লোবান, মোঃ শামীম, মোঃ শাহীন মিয়া ও মোঃ লিটন মিয়া।
মন্তব্য করুন