মেজর খালেদ ও প্রসঙ্গিক কিছু কথা
ডাঃ আব্দুল আহাদ॥ মৌলভীবাজারের কৃতি সন্তান প্রয়াত ইঞ্জিনিয়ার মেজর খালেদুর রহমান গত ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৭ টা ২০ মিনিটে চিকিৎসাধিন অবস্থায় সিলেট উইমেন্স মেডিকেল হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ তাৎখনিক ভাবে ছড়িয়ে পড়লে মৌলভীবাজারে নেমে আশে শোকের ছায়া।
মরহুমের নামাজে জানাজা ঐদিন বাদ আছর তাঁর গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের বাহারমর্দান জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার নামাজের পরে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গাড অব অনারের মাধ্যমে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। পরে নিজ গ্রামে পারিবারিক কবর স্থানে সমাহিত করা হয়।
মেজর খালেদের জীবন যেমন বর্ণাঢ্য তেমনি অত্যন্ত দুঃখের। মেজর খালেদ প্রথমে পারিবারিক ভাবে শাবন্দর এলাকার তাঁর খালাতো বোনকে বিয়ে করেন।
মা, বাবা, ভাই, বোন এবং স্ত্রী, তাঁর তিন সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিল। কিন্তু সেই সংসারে সুখ বেশীদিন টিকলনা।
একে একে মা, বাবা, স্ত্রী, তিন বছরের শিশু কণ্যা শারমিন, বাইশ বছর বয়সী এমিল ও পঁচিশ বছর বয়সী জামিল এ জগতের মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন।
আপনজনদের মৃত্যুতে তিঁনি শোকে মুর্চে যান। পরে পবিবারের অন্যান্য সদস্যরে অনুরোধে দ্বিতীয় বিয়েতে রাজি হন। সেই সংসারে শামীমা আক্তার মীম নামের তাঁর এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
তিঁনি ১৯৪৩ সালে মোস্তফাপুর ইউনিয়নের বাহারমর্দন গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে মা ছমিরুন্নেছা ভানু কোল উজ্জল করে জন্ম গ্রহন করেন।
তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ আব্দুর রহিম। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিঁনি ছিলেন তৃতীয়। তাঁর বড়ভাই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ও হয়রত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রফেসর মৌলভীবাজারের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ডক্টর খলিলুর রহমান।
তিঁনি ১৯৫৯ সনে ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাস করেন। ১৯৬১ সনে ইন্টারমিডিয়েট (এইচ এসসি) পাস করে ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন (বর্তমান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়)। সেখান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন।
পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তান মিলিটারীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে যোগদান করেন। মেজর খালেদ একজন দক্ষ ও সাহসী ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। পৃথিবীর সবচাইতে বিপদজনক ও ভয়ঙ্কর সড়কটি নাম কারাকোরাম হাইওয়ে।
এই সড়কটি পাকিস্তান থেকে চীনের উইঘর জিনজিয়াং প্রদেশে গিয়েছে। এই সড়কটি ভূপৃষ্ট হতে ১৫ হাজার ফুট উঁচু পর্বতের উপর নির্মিত।
এই রাস্তাটির এখন পযর্ন্ত পৃথিবীর সর্বচ্চো ও ঝুকি পূর্ণ সড়ক। অনেকে এই সড়কটিকে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য বলেন।
সেই সড়কটি নির্মাণে দায়ীত্বরত ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে মেজর খালেদ একজন ছিলেন তিনি। তাঁর এই অবদানের জন্য সেই সড়কটি একটি ব্রীজের নামকরণ হয়েছে ক্যাপ্টেন খালেদ ব্রীজ। তখন তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন পদে চাকুরিতে ছিলেন।
মৌলভীবাজার শহরের উত্তর দিকে প্রবাহিত হচ্ছে মনুনদী। এ নদীটি পাহাড়ি হওয়াতে অত্যন্ত খরস্র্রেতা।
মনুনদী প্রকল্প, মনু ব্যরেজ নির্মাণ, মৌলভীবাজার শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মণ এবং নদীটি সংস্কারের কাজেও তিনি মূখ্য ভূমিকা রাখেন। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
মন্তব্য করুন