মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্ট-মরিচা ধরা রড আর নিম্নমানের বালু দিয়ে চলছে ৩ কোটি টাকার ব্রিজের নির্মাণ কাজ
বড়লেখা প্রতিনিধি॥ বড়লেখা ও বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী ৪ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের সরাসরি সিলেট যাতায়াতের দুর্ভোগ লাগবে লাতু-জলঢুপ সড়কে সোনাই নদীর উপর আতুয়া-নয়াগ্রাম ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৫ সালের ২১ মে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রায় ৩ কোটি টাকার এ ব্রিজের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের হুইপ শাহাব উদ্দিন এমপি। জনগুরুত্বপুর্ণ এ ব্রিজের নির্মাণ কাজের শুরুতেই অনিয়মের আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ উঠে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। মরিচা ধরা রড, মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্ট আর নিম্নমানের বালু ব্যবহার করায় এলাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আতুয়া ও বিয়ানীবাজারের মুড়িয়া ইউনিয়নের নয়াগ্রামে সোনাই নদীর উপর ২ কোটি ৮৫ লাখ ব্যয়ে আতুয়া-নয়াগ্রাম ব্রিজের নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় এমএলআর ট্রেডিং নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রায় দুই বছর আগে জাতীয় সংসদের হুইপ শাহাব উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে ব্রিজের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। শুরুতেই নিম্নমানের বালু, মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্ট ও মরিচা ধরা রড ব্যবহারের অভিযোগ উঠে। সরেজমিনে গিয়ে আতুয়া-নয়াগ্রাম ব্রিজে মারাত্মক মরিচা ধরা রড ব্যবহার করতে দেখা গেছে। বিয়ানীবাজার উপজেলার নয়াগ্রামের মোঃ আব্দুল্লাহ, আব্দুর রূপ, হাজী মইন উদ্দিন, নছিব আলী, খলিলুর রহমান সাহীন আহমদ, আতাউর রহমান, ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল মতিন প্রমূখ অভিযোগ করেন দুই উপজেলার ৪ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী আতুয়া-নয়াগ্রাম ব্রিজ নির্মাণ। বর্তমান সরকার এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। কিন্তু ঠিকাদারের নিয়োজিত মিস্ত্রী মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্ট, মরিচা ধরা রড ও
নিম্নমানের বালু ব্যবহার করায় ব্রিজটি বেশিদিন টিকবে না। তাদের আপত্তির কারণে প্রায় আড়াইশ’ বস্তা ডেম্প সিমেন্ট গোদামে জব্দ করা হয়। কিন্তু পরে নতুন সিমেন্টের সাথে ডেম্প সিমেন্টও ব্যবহৃত হয়েছে। কয়েকদিন পরপর একজন সরকারী ইঞ্জিনিয়ার কাজ দেখতে এসে ঠিকাদারের মিস্ত্রি ও ম্যানেজার নিকট থেকে প্রকাশ্যে টাকা নিয়ে সাইট অর্ডার বুকে স্বাক্ষর করে চলে যান। বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আহমেদ জোবায়ের লিটন জানান, এ ব্রিজটি হওয়ার ফলে ৪ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের সিলেট যাতায়াতে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। নিম্নমানের সিমেন্ট ব্যবহারের অভিযোগ পেয়ে তিনি সরেজমিনে গিয়ে প্রায় ২৫০ বস্তা মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্ট জব্দ করেন। এ সিমেন্ট ব্যবহার হয়ে থাকলে তিনি ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান। ঠিকাদারের সাইট ম্যানেজার পারুল আহমদ জানান, নির্মাণ কাজে মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্ট ব্যবহার হচ্ছে না। শিরিষ ঘসে মরিচা ধরা রড ব্যবহার করছেন। তবে সরেজমনে তার বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ ভূষণ পাল জানান, ডেম্প সিমেন্ট ব্যবহার না করার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। লোকবল কম থাকায় সাইট অফিসারকে সার্বক্ষণিক সাইটে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এলজিইডি’র সাইট অফিসার আনোয়ার হোসেন ঠিকাদারের ম্যানেজার কিংবা মিস্ত্রীর নিকট থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
মন্তব্য করুন