মেয়েদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যাকে স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত করতে কিশোরী ফুটবল টুর্ণামেন্ট
বিকুল চক্রবর্তী॥ ‘২০৩০ সালের মধ্যে মেয়েদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যা’ কে জীবনের একটি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত করতে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা বাগানে শুরু হয়েছে কিশোরী ফুটবল টুর্ণামেন্ট।
আয়োজকরা জানান, এ টুর্ণামেন্ট এক দিকে যেমন মেয়েদের শারিরীক সুস্থ্যতা এনে দিবে অন্যদিকে বৃদ্ধি করবে মাসিক সচেতনতা।
রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সেলিম হক জানান, চা বাগান এলাকায় ক্রীড়া বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ফুটবল। কিন্তু প্রয়োজনীয় মাঠ ও ক্রীড়া সামগ্রীর অভাবে নিয়মিত পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন চা বাগানের কিশোর-কিশোর।
বিশেষ করে চা বাগানে মেয়েদের ফুটবল খেলায় প্রতিভা থাকলেও তাদের নিয়ে টুর্ণামেন্টের আয়োজন চোখে পড়ার মতো নয়। তবে বর্তমানে বিশ্ব মাসিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ টুর্ণামেন্ট চা বাগানে ব্যাপক সারা জাগিয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী মাসে পুরো ইউনিয়নের সকল বাগানে প্রমীলা ফুটবল টুর্ণামেন্টের আয়োজন করবেন। সম্প্রতি বেসরকারী সংগঠন ওয়াটার এইড ও আইডিয়া যৌথভাবে বিশ্ব মাসিক দিবসকে সামনে রেখে চা বাগানে চা বাগানে আয়োজন করেছে কিশোরী ফুটবল টুর্ণামেন্ট।
আইডিয়ার প্রজেক্ট ম্যানেজার পঙ্কজ ঘোষ দস্তিদার বলেন, তারা রাজঘাট, কালীঘাট, সাঁতগাও ও সিন্দুরখান ইউনিয়নের বিভিন্ন চা বাগানে পৃথক পৃথক টুর্ণামেন্টের আযোজন করেন। যেখানে শতাধিক কিশোরী খেলায় অংশ নিয়েছে।
তারা বেশ ভালো খেলেছে। তিনি বলেন, এদের নিয়মিত পেকটিস করাতে পারলে তারা জাতীয় টিমেও খেলার স্বক্ষমতা রাখেতে পারবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত বলেন, শুধু তিনি নয় তাদের খেলার নৈপূণ্যতা উপভোগ করেছেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। এটি এলাকায় নারী জাগরণের এক মাইল ফলক হতে পারে।
টুর্ণামেন্টের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ৩০ মে শ্রীমঙ্গল রাজঘাট চা বাগানে অনুষ্ঠিত হয় স্বপ্নদর্শী হামহাম একাদশ ও অপ্রতিরুদ্ধ জাফলং একাদশ। খেলা শেষে এক শুন্য গোলে বিজয়ী হয় অপ্রতিরুদ্ধ জাফলং একাদশ।
খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ী টিমের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের ম্যানেজার ইমামুর রহমান, ওয়াটারএইড -এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর কে.এ. আমিন, আইডিয়ার প্রজেক্ট ম্যানেজার পঙ্কজ ঘোষ দস্তিদার, আইডিয়ার প্রজেক্ট কর্মকর্তা এডভোকেসি বিশ্বজিৎ দেবরায়, রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জী, একুশে টেলিভিশনের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি বিকুল চক্রবর্তী ও ইউপি সদস্য সেলিম হক।
এ সময় ওয়াটারএইড -এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর কে.এ. আমিন বলেন, ‘মাসিক’কে জীবনের একটি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত করতে হবে। আমরা দেখেছি, শ্রীমঙ্গলের অনেক রিমোট এলাকায় এখনো মাসিকের বিষয়ে কুসংস্কার হিসেবে দেখে।
একটা মেয়ের মাসিক হলে দেখা যায় যে, সে আত্মীয়স্বজনের সামনে যায় না, বিদ্যালয়ে যায় না। এখানে মাসিককে একটা রোগ হিসেবে দেখা হয়। যেমন কুষ্ঠ রোগ হলে কাছে যেতে দেয় না, দূরে দূরে রাখে। এমনও সময় দেখা যায় মাসিক হলে মেয়েদের আলাদা থাকতে দেওয়া হয়।
আলাদা থালাবাসনে খেতে দেওয়া হয়। ঘুমানোর জন্য আলাদা চাদর দেওয়া হয়। আমি মাসিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে যে, মাসিক একটি স্বাভাবিক বিষয়। এটা নিয়ে আমাদের একটি স্লোগান আছে, ‘মাসিক স্বাভাবিক, লজ্জা নয়, চাই সচেতনতা’। এই জড়তা দূর করতেই আয়োজন করা হয় কিশোরী ফুটবল টুর্ণামেন্টের।
আইডিয়ার প্রজেক্ট কর্মকর্তা এডভোকেসি বিশ্বজিৎ দেবরায় বলেন, শুধু নারীদের ফুটবল খেলার আয়োজন নয়। নারীদের মাসিক সচেতনতায় আমরা চা বাগানে চা বাগানে এ বিষয়ে সচেতনতামুলক ভিডিও ডকুমেন্টও দেখাচ্ছি। যা সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে সহায়তা করছে।
এই নারী ফুটবলে চা বাগান এলাকায় উৎসাহও বেড়েছে। সহসাই চা বাগানে নতুন করে প্রমীলা ফুটবল টুর্ণামেন্টের আয়োজনের ঘোষনা দিয়েছেন বাগান পঞ্চাত ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। আর তা বাস্তবায়িত হলে হয়তো চা বাগানের আজকেরি এই কিশোরীরা একদিন খেলবে জাতীয় টিমে।
মন্তব্য করুন