মৌলভীবাজারের পাথারিয়া পাহাড়ে দৃষ্ঠিনন্দন ৬টি জলপ্রপাত আবিস্কৃত

August 31, 2016,

স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা পাথারিয়া পাহাড়ের পাদদেশে দৃষ্টিনন্দন নতুন আরও ৬টি জলপ্রপাত আবিস্কৃত হয়েছে।
দেশের সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক জলপ্রপাত মাধকুন্ডের অবস্থান দেশ-বিদেশের প্রকৃতিপ্রেমীদের জানা থাকলেও ২একই পাহাড়েই যে, অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক ঝর্ণা রয়েছে তা এখনও লোকচক্ষুর অন্তরালে। ঘন সবুজ অরণ্যের বুক চিরে বেরিয়েছে এসব ঝর্ণাগুলো মধ্যে সম্প্রতি আরও দুটি জলকন্যা আবিস্কৃত হয়েছে। স্থানীয় লোকজন এদের আহলাদি নামও দিয়েছেন। ফুল ঢালনি ঝেরঝেরি, ইটাউরি ফুলবাগিচা, জামিনীকু-, জমজ ঝর্ণা, রজনীকু-, পুছুম ঝর্ণা ইত্যাদি অন্যতম। শুধু নামকরণেই যে এদের নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে তা নয়, ঝর্ণাগুলো পাথারিয়া পাহাড়কে সাজিয়েছে যেন অন্যরকম সৌন্দর্যে।
২৫ মাইলের সবুজ অরণ্যে ঘেরা পাথরিয়া পাহাড়ে সদ্য সন্ধান পাওয়া ঝেরঝেরী ও ফুলবাগিচা ঝর্ণা এবার পর্যটকদের বিনোদনের খোরাক যোগাবে। যাতায়াত ব্যবস্থার অপ্রতুলতা ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় এবং প্রচার-প্রচারণার অভাবে প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের প্রতীক এই জলপ্রপ্রাত গুলো এখনও লোকচক্ষুর অন্তরালে।

5
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, পাথারিয়া পাহাড়টির উচু-নিচু টিলা সবুজ বৃক্ষরাজিতে পরিপূর্ণ। পাহাড়ের বুক চিরে বেরিয়ে আসা প্রবাহমান পানি ছড়া দিয়ে সমতলে নেমে আসছে। ছড়ার পানি ছোট বড় পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলছে। দুর্গম এই ছড়া দিয়ে পাঁয়ে হেঁটে ঝর্নার কাছে যেতে যত বিপত্তি আর ক্লান্তি আসুক না কেন। ছড়ার স্বচ্ছ শীতল পানি, চারদিকের সবুজ প্রকৃতি, বনফুল, শাসনি লেবুর সুবাস, পাখি ও ঝিঁঝিঁ পোকার কলতান সমস্ত ক্লান্তিকে দূর করে দিবে। বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ৩ডিমাই বাজার থেকে পাথারিয়া পাহাড়ের নির্জন পল্লী ডিমাই পুঞ্জির পাশ দিয়ে দুর্গম পাহাড়ি ছড়ার পথে হেঁটে গেলে চোখে পড়বে কয়েকটি ছোট ঝর্ণা। প্রায় ৬ কিলোমিটার পিচ্ছিল পাথুরে ছড়া দিয়ে হাঁটার পর উপরে উঠলে দুটি টিলার মাঝখানে দেখা যাবে ঝেরঝেরি জলকন্যা। দুর্গম পথ পারি দেওয়ার ঝেরঝেরির শীতল জলধারায় অনেকটাই কমে যাবে ক্লান্তি । একটু অদূরে ঝেরঝেরির ঠিক ডান পাশে রয়েছে ইটাউরি ফুলবাগিচা জলপ্রপাত। ছড়ার পথ ধরে ফুলবাগিচায় যাওয়া যায় না। টিলার ভেতর দিয়ে রাস্তাটি খুবই সর”। ফুলবাগিচায় যেতে হলে প্রায় ৬০-৭০ ফুট উঁচু খাড়া দুটি পাহাড়ের পিচ্ছিল পথ বেয়ে এগিয়ে গেলে তখনই চোখে পড়বে ফুলবাগিচা জলপ্রপাত। স্থানীয়রাই ঢালনি ঝেরঝেরি এবং ইটাউরি ফুলবাগিচা নাম দিয়েছেন। এই পাথারিয়া পাহাড়েরই অন্য প্রান্তে দেশের অন্যতম বৃহৎ জনপ্রিয় জলপ্রপাত মাধবকুন্ড। মাধবকুন্ডের মত বড় না হলেও ঝেরঝেরি ও ফুলবাগিচা অনেক দৃষ্টিনন্দন। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে ঝেরঝেরি ও ইটাহরি ফুলবাগিচার মত পাথারিয়া পাহাড়ের এই অংশ হতে চোখে পড়বে ত্রিপল , ১জামিনীকুন্ড, জমজ, রজনীকুন্ড, পুছুম, বন্দরডুবা, পাইথুং ও রামাকু- নামে আরও অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন জলকন্যা।

এগুলোর বেশিরভাগই মৌসুমী। বর্ষাকালে এই ঝর্ণাগুলো যৌবনদীপ্ত থাকে। শুষ্ক মৌসুমে এগুলোর কয়েকটি শুকিয়ে যায়। এছাড়াও পাথারিয়া পাহাড়ের ফুলছড়ি নামক স্থানে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট নান্দনিক একটি মাটির ব্রিজ যা স্থানীয়দের ভাষায় ‘মাটির পুল’ বলেন। এই ব্রিজটি দুটি টিলার সংযোগস্থল। প্রায় ৩০ ফুট লম্বা ব্রিজটির নিচ দিয়ে ছড়া প্রবাহিত হয়েছে। বড়লেখা উপজেলা সদর থেকে গাড়ি বা মোটর সাইকেলযোগে ডিমাই বাজারে যেতে হবে। সেখান থেকে পূর্ব দিকে কাঁচা পথ ধরে একটু অদূরে হেঁটে গেলে চোখে পড়বে দুর্গম পাহাড়ি পথ ও ছড়া। পাহাড়ি পথ ও ছড়া দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দুপাশের সবুজ ছায়াশীতল নজর কাড়া প্রকৃতি । ছড়ার পানি যেমন স্বচ্ছ তেমনি ছড়ার পাথরগুলো পিচ্ছিল । এছাড়াও অনেক পাথর খুবই ধারালো ও অনেক ছোট বড় গর্ত রয়েছে। তাই খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। একটু অসাবধান হলেই ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। পাহাড়ি পথগুলোও বিপদজ্জনক। স্থানীয় গাইড তারেক মিয়া ও সামাজিক বনায়নের বাগান মালিক সুরমান আলী জানান, বর্ষাকালে এই ঝর্ণা ও ছড়ায় পানি বেশি থাকে। এখানে জোঁক, বিষধর সাপ ও পোকা আক্রমণ করতে পারে। শুস্ক মৌসুমে এখানে পানির স্রোত কম থাকে। পুরো পাথারিয়ার বুক চিরে প্রায় অর্ধশতাধিক ঝর্ণা রয়েছে। ইউপি সদস্য সিরাজ উদ্দিন বলেন, পাথারিয়া পাহাড়ে আগে বাঁশ মহাল ছিল। বর্তমানে সেটি সামাজিক বনায়নের আওতায় রয়েছে। এখানে বিভিন্ন বৃক্ষের পাশাপাশি ফলদ বৃক্ষ রোপণের ফলে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশেও বৈচিত্র্য এসেছে। প্রাকৃতিক ঝর্ণা আর ছড়া ও চারপাশে সবুজের সমারোহ দর্শণার্থীদের নজর কাড়ে। যদি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা যায় তাহলে দেশ বিদেশের পর্যটকরা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসবেন। পর্যটকরা বড়লেখায় এসে শুধু মাত্র মাধবকুন্ড ভ্রমণ করে যায়। এগুলোর প্রতি পর্যটন কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি সুদৃষ্টি দেন, তাহলে পর্যটকরা মাধবকুন্ডসহ আশপাশের দর্শণীয় স্থান দেখার পাশাপাশি এই জলপ্রপাতগুলোও দেখে মুগ্ধ হবেন। এতে দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। স্থানীয় বেকার যুবকরা গাইড হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবে ও এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ফলে এখানকার স্থানীয় লোকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এ বিষয়য়ে জানতে চাইলে সোমবার বিকেলে মৌলভীবাজারের বিদায়ী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রকাশ কান্তি চৌধুরী (রাজস্ব) বলেন, সরকার দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে খুবই আন্তরিক। বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড়ের জলপ্রপাত ও সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com