মৌলভীবাজারের হাওর এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানি ও কছুরিপানায় বন্দী
বিশেষ প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের কাউয়াদিঘী হাওরের পশ্চিম পাড়ের অন্তেহরী, কাদিপুর ও জগৎপুরসহ কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ রয়েছেন পানিবন্দী। দীর্ঘদিন ধরে পানিতে ডুবে থাকায় গ্রামের সবকটি রাস্তা পুরোপুরি বিনষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে হাওরের সব কচুরীপানা গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করায় নৌকা কিংবা কলাগাছের ভেলা নিয়েও চলাচল করতে পারছেন না গ্রামের সাধারণ মানুষ। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোর হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। চলমান বন্যায় গ্রামগুলোতে ভাসমান আছে মাত্র ২০ ভাগ। ভাসমান নেই দাহ কিংবা সমাধি কার্যের স্থানও।
সরজমিনে পরিদর্শন কালে অন্তেহরি গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য অমর দাশ ও কাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা গোপেশ সরকার জানান, প্রথমে সমস্ত বোরো ফসল হারিয়ে গ্রামের সকল মানুষ যখন দিশেহারা তখনই নতুন করে বাড়িঘরে পানি উঠলে দ্বিতীয়বাবের মতো দুর্যোগের মুখে পড়েন এই গ্রামগুলোর মানুষ। জেলা ও উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র পাকা সড়কটিও সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে পড়ায় গ্রামবাসীদের ভোগান্তির শেষ নেই। গোটা এলাকা পানির সাথে কচুরীপানায় আবৃত্ত হয়ে পড়ায় চলাচলে দেখা দিয়েছে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা।
এ ব্যাপারে সদ্য নির্বাচিত ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যার নকুল দাশ জানান, কাউয়াদিঘির পানি বাড়ার কারনে কাউয়াদিঘি হাওরের প্রত্যেক পাড়ের একাধিক গ্রাম বর্তমানে পানিতে নিমজ্জিত। দূর্ভোগে রয়েছেন সাধারণ মানুষ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
এদিকে দক্ষিন অন্তেহরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশ্বজিৎ চক্রবর্ত্তী জানান, অত্যাধিক পানির কারনে তার স্কুলের একটি ভবনসহ একাধিক বিদ্যালয় ডুবে গিয়ে এ সব এলাকার শিক্ষা কার্যক্রমেও দেখা দিয়েছে বড়রকমের প্রতিবন্ধকতা। উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল বারেক জানান,
২৬ আগষ্ট শুক্রবার সরজমিনে গিয়ে তিনি রাস্তাটি দেখে এসেছেন। চলমান বন্যায় কাউয়াদিঘি হাওরের ঢেউয়ে রাস্তার অনেক অংশ ভেঙ্গে গেছে। যার বিশাল অংশ সম্পূর্ণ চলাচলের অযোগ্য। আগামী শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই এর মেরামত প্রয়োজন হবে। তবে এর জন্য স্থায়ী কাজ না করলে বার বার রাস্তাটি একই ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে বলে জানান তিনি। এর জন্য রাস্তাটি উঁচু করে হাওরের পাশে প্রটেকশন ওর্য়াক করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন ।
এদিকে মৌলভীবাজার উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হোসেন জানান, শীঘ্রই এই পানিবন্দী মানুষের পাশে দাড়াবেন। জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপ করে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তারও প্রতিশ্রুতি দেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসীন এমপি জানান, পানিবন্দী মানুষের খবর তিনি নিয়েছেন, কিছু এলাকা তিনি নিজেও পরিদর্শন করে এসেছেন। কাছাকাছি সময়ে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার পাশাপাশি পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশেষ নজর দিবেন বলেও জানান তিনি। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুল হক জানান, এই গ্রামগুলো পানি নিমজ্জিত হওয়ার মূল কারণ হলো কাউয়াদিঘি হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য কাসিমপুর পাম্প হাউজ ঠিকমতো কাজ না করা। তার মতে, এটি স্থাপনের সময় মূল ডিজাইনে ভূল ছিল তাই পাম্প হাউজের মেশিন রুম এবার পানিতে তলিয়ে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী পাম্প হাউজের মেশিন রুম কখনও ডুবে যাওয়ার কথা নয়। এর কারনে বর্তমানে মেশিন দিয়ে পানি সেচ বন্ধ রয়েছে। তবে তিনি এর উন্নয়নে গত একনেক এর বৈঠকে প্রায় ৮৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাশ হয়েছে বলে জানান। যা বাস্তবায়িত হলে কৃষকদের ফসল রক্ষা সহ বড় বন্যার হাত থেকে গ্রামবাসী রক্ষা পাবে। বন্যাদূর্গত এই মানুষ গুলোর পাশে দ্রুত সংশ্লিষ্ট বিভাগ এগিয়ে আসবে এমনটাই চাওয়া এই পানিবন্দী মানুষদের।
মন্তব্য করুন