মৌলভীবাজারে ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত
সালেহ আহমদ (স’লিপক)॥ মৌলভীবাজার পৌর শহরের সৈয়ারপুর শশ্মানঘাট সংলগ্ন মাঠে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সনাতন ধর্মের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও হরগৌরী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার ১৫ জুন মৌলভীবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডস্থ সৈয়ারপুর শশ্মানঘাট সংলগ্ন মাঠে স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা আয়োজনে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
চড়ক পূজায় তান্ত্রিক মন্ত্র উচ্চরণের মাধ্যমে চারজন সন্ন্যাসীর পিঠে লোহার বরশি ফোড়ানো ও রশি দিয়ে চড়ক গাছে ঝুলিয়ে ঘোরানো হয়। পূজার মূল আকর্ষণ সন্ন্যাসীর পিঠে লোহার বরশি গেঁথে চড়ক গাছে ঝুলিয়ে ঘোরানো দেখতে ভিড় করেন ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে আশপাশ এলাকার হাজার হাজার মানুষ।
জানা যায়, চড়ক পূজাকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন আগে থেকেই এলাকার ভক্তবৃন্দ সন্ন্যাসীর সাজে শহরের পাড়া-মহল্লায় গিয়ে পূজার জন্য সাধন করেন। চড়ক পূজার আগের দিন চড়ক গাছের তলায় তান্ত্রিক মন্ত্রদ্বারা কালী নাচ হয়। এছাড়াও গৌরী নাচ সহ বিভিন্ন পূজা-পার্বণাদি করেন সন্ন্যাসীরা।
এ বছর প্রধান সন্ন্যাসী ছিলেন দুলাল দাস। পূজার সাথে সাথে সন্ন্যাসীরা ঢাক-ঢোল বাজিয়ে পূজা প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তোলেন। অনেক ভক্তরা চড়ক পূজায় এসে তাদের বিভিন্ন সাধনের জন্য মানত করেন। চড়ক পূজাকে ঘিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা দেখতে বিভিন্ন উপজেলার হাজারো ভক্তদের পদচারণায় মাঠটি কানায় কানায় ভরে উঠে।
এ ব্যাপারে চড়ক পূজার প্রধান সন্যাসী দুলাল দাস জানান, চড়ক পূজায় ১৫ দিন আগে থেকে সন্ন্যাসীরা এক কাপড়ে পরিবার পরিজন থেকে আলাদা থাকা শুরু করেন। নির্দিষ্ট একটি নিয়মের ভেতরে চলাফেরাসহ আহার নিদ্রা করে থাকেন।
চড়ক পূজা আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ পাল শুভ ও যুগ্ম সম্পাদক নয়ন দেব জানান, সন্নাসীরা হর-পার্বতীসহ বিভিন্ন দেবতার সাজে প্রায় ১৫ দিন আগ থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটসহ শহরময় ধর্মীয় নৃত্য ও গান পরিবেশন করে চড়ক পূজার প্রচার করে থাকে।
চড়ক পূজা আয়োজক কমিটির সভাপতি স্বপন চক্রবর্ত্তী বলেন, যুগ যুগ ধরে এই পুজা চলে আসছে। এ পূজার মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করা হয়। এছাড়াও ভক্তবৃন্দের মনোবাসনা পূর্ণসহ অনেকের আশা আকাংখা পূর্ণ করতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন এই চড়ক পূজায়।
উল্লেখ্য, চড়ক পূজা মূলত শিব ঠাকুরের পূজা। একে শিবের গাজনও বলা হয়ে থাকে। এ পূজায় অংশগ্রহণকারীরা বাড়ির বাইরে শিব মন্দিরে অবস্থান করেন। এ সময় তারা লাল কাপড় পরে সন্ন্যাসীর মতো বিশেষ ভাবে জীবনযাপন করেন। তাদেরকে ভক্ত বলা হয়ে থাকে। তারা শিব এবং গৌরী সাজিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গাজনের গান গায়। মানুষ চাল-সবজি অথবা আর্থিকভাবে যতোটুকু সহায়তা দিয়ে থাকেন তা দিয়ে ভক্তরা নিজেদের খাবার খেয়ে থাকেন এবং বাকিটা সঞ্চয় করে রাখেন। এই সহায়তা দিয়ে চড়ক পূজার আয়োজন করা হয়।
চড়ক পূজার বিশেষত্ব হলো খালি পায়ে ভক্তরা আগুনের মধ্য দিয়ে হাঁটা-চলা করেন। পিঠে বিশাল আকারের বরশি গেথে চড়ক গাছে ঝুলে থাকেন। এসব দেখতে প্রচুর সংখ্যক লোক ভিড় জমান। তবে চিরাচরিত এই পূজা দিন দিন কমে আসছে। আগে যেখানে প্রচুর সংখ্যায় চড়ক পূজার আয়োজন করা হতো, এখন তা একেবারে কমে এসেছে।
মন্তব্য করুন