মৌলভীবাজারে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ৪টি ভাঙনে অর্ধশতাধিক গ্রাম বন্যা কবলিত
এম. মছব্বির আলী॥ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ৫টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় কমপক্ষে অর্ধশতাধিক গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে।
৪ জুন রোববার ভোর ৫টায় রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নে ভোলানগর এলাকায় প্রায় ১০০ ফুট ও দুপুর এক টায় কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে ৫০ ফুট এবং এলাকা জুড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।
নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ, আব্দুল হান্নান, লেদু মিয়া, এলাইচ, রবিউল হাসান ছায়েদ,লয়লু, মিজানুর রহমান ও আবুল কালাম জানান, দুপুর দেড়টায় নিশ্চিন্তপুর এলাকায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ এলাকা দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ শুরু করে। প্রায় ৫০ ফুট এলাকা জুড়ে সৃষ্ট ভাঙনের ফলে উপজেলার হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, মাদানগর, ভূঁইগাঁও, আলীপুর, দত্তগ্রাম, সোনাপুর, ইসমাইলপুর, রনচাপসহ কমপক্ষে ২০টি গ্রামে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হত।
শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জুনাব আলী জানান, শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের এই ভাঙণের পানি মৌলভীবাজার শহরে গিয়ে পৌছবে। ক্ষতির পরিমান এখন নিরূপন সম্ভব হয়নি। তবে চাতলাঘাট এলাকায় দু থেকে আড়াইশ ফুট প্রতিরক্ষা বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন গয়ে গেছে। সৃষ্ট ভাঙনের ফলে লোকালয়ে পানি প্রবেশ না করলেও মনু নদীর উপর নির্মিত ব্রীজটি মনে হয় আর রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মালিক জানান, ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া ও খন্দকারের গ্রাম এলাকায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। শত শত মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ কওে ভাঙন রোধে চেষ্টা চালাচ্ছে। এছাড়া হাজিপুর ইউনিয়নের মন্দিরা ও কোনগাঁও গ্রামে
কামারচাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিম জানান, সেহরির পর কোন এক সময়ে ভোলানগর এলাকায় মুন নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ এলাকায় প্রায় ১০০ ফুট এলাকা জুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। এতে ভোলানগর, মিটিপুর, শ্যামর কোনা ও করাইয়ার হাওর এলাকায় কমপক্ষে ১৫ গ্রাম বন্যা কবলিত হয়। ভোলানগর গ্রামের যে স্থান দিয়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে, সেই ভাঙনের মুখে ফারুক মিয়ার বাড়িটি নদীর স্রোতে ভেসে গেছে। এছাড়া আর বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার তাৎক্ষণিক খবর পাওয়া যায়নি। চেয়ারম্যান আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার বলার পরও তারা কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এখন এই ভয়াবহ বিপদ হলো। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠা হবে দুষ্কর।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফ হোসাইন জানান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মাতারকাপন ও বাঁশতলা এলাকায় পৃথক দু’টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে কমপক্ষে ২০টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোডের্র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুখলেছুর রহমান তালুকদার জানান, মনু নদীর ৪৪টি ঝুকিপূর্ণ স্থানের মধ্যে ২৪টি স্থানে ফাটল দিয়ে পানি বের হচ্ছে যেকোন সময় ভাঙন সৃষ্টি হতে পারে।
এব্যারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, মনু নদীর ৩-৪ টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের ক্ষোভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্ষোভ থাকতেই পারে। আসলে মিথ্যা আশ^াস দিয়ে কোন লাভ নেই। বরাদ্ধ অনুসারে কাজ করছে।
মন্তব্য করুন