মৌলভীবাজারে স্মরণকালের বৃহত্তম যুবসম্মেলন এবং প্রাসঙ্গিক কিছু পর্যবেক্ষণ 

May 11, 2017,
রুহুল আমীন রুহেল: বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ বাংলাদেশের প্রথম যুব সংগঠন। আওয়ামী যুবলীগ ১৯৭২ সালের ১১ই নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, শোষনমুক্ত সমাজ অর্থাৎ সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা অর্থাৎ সকল ধর্মের মানুষের স্ব স্ব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের অধিকার তথা জাতীয় চার মুলনীতিকে সামনে রেখে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র দূরীকরণ, দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা সম্প্রসারন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়ীক বাংলাদেশ ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং যুবসমাজের ন্যায্য অধিকারসমুহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা। লক্ষ্য বাস্তবায়নে দেশের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের মধ্য থেকে স্বাধীনতা ও প্রগতিকামী যুবক ও যুব মহিলাদের ঐক্যবদ্ধ করে তাদের রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন গড়ে তোলাই যুবলীগের উদ্দেশ্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুবলীগের নেতা কর্মীরা দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করে ।
মৌলভীবাজারও এর ব্যাতিক্রম ছিলনা।
আমার ছাত্র রাজনীতি শুরুর সময় থেকেই মৌলভীবাজার যুবলীগ’র সফল কার্যক্রম দেখেছি। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে আমি জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় থেকেই দেখেছি জেলা যুবলীগ’র সভাপতি হিসেবে মরহুম আকিকুল ইসলাম চৌধুরী এবং সাধারন সম্পাদক মিসবা উর রহমান এর পরিশ্রমী রাজনৈতিক কর্মকান্ড। জেলা ছাত্রলীগ’র সাধারন সম্পাদক হিসেবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃথ্য দানকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ’র পরবর্তীতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে যুবলীগ’র গুরুত্ব।
সফলভাবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৫ আকিকুল ইসলাম চৌধুরী ও মিসবা উর রহমান জেলা যুবলীগ’র সম্মেলনের আয়োজন করেন। সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃথ্যে আসতে জেলার শীর্ষ যুবনেতারা অংশ নেন সরাসরি ভোটে। সেখানেই প্রায় ৯০ ভাগ ভোট পেয়ে জেলা যুবলীগ’র সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন  বর্তমানে মৌলভীবাজার পৌরসভার জননন্দিত মেয়র মো. ফজলুর রহমান এবং সাধারন সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন নাহিদ আহমদ।
১২ বছর পর ৪ মে ২০১৭ সালে অনুষ্টিত হলো মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগ’র সম্মেলন। জেলায় স্বরনকালের সবচেয়ে জমজমাট সম্মেলনে অনুষ্টিত হয়েছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সম্মেলনের জন্য শহরে তৈরী  করা হয়েছিল শত শত তোড়ন, ফেস্টুন, ব্যানার; সম্মেলন সার্থক করতে জেলার যুবনেতাদের নিয়ে করা হয়েছে আনন্দ মিছিল। প্রায় প্রতিদিনের মিছিলে ছিল শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আবহ। সদ্য সাবেক সভাপতি মো. ফজলুর রহমানের আমন্ত্রনে ঢাকা সহ সারাদেশ থেকে এসেছিলেন ৫০০ অতিথি।
সকাল থেকে পৌর মিলনায়তনে আয়োজিত সম্মেলনে জেলা যুবলীগ সভাপতি মো. ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদ আহমদের পরিচালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এড. মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, উপাধক্ষ্য আবদুস সহীদ এমপি ,হুপ মো: সাহাব উদ্দিন আহমদ,অধ্যাপক রফিকুর রহমান,সাংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসিন, মৌলভীবাজার-২ আসনের এমপি আবদুল মতিন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান,জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন  সহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ’র নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন পূর্বের কমিটির সাধারন সম্পাদক যুবনেতাদের অহংকার নাহিদ আহমদ এবং সাধারন সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন (আমি জেলা ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক থাকাকালীন যুগ্ন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা) স্বচ্ছ, ত্যাগি যুবনেতা সৈয়দ রেজাউর রহমান সুমন।
সভাপতি পদে লড়েছিলেন প্রিয় নেতা মরহুম সমাজকল্যান মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী কন্যা সৈয়দা সানজিদা শারমিন ও সুজিত দাশ এবং সাধারন সম্পাদক পদে লড়েছিলেন  সাইফুল ইসলাম এবং গৌছ উদ্দীন নিক্সন।
কাউন্সিলরদের ভোট শেষে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের  নাম ঘোষনা করেন জনাব ওমর ফারুক সম্মেলন স্থলেই; যা আকৃষ্ট করেছে সকলকে।
আমি ধন্যবাদ জানাই সৈয়দা  সানজিদা শারমিনকে জেলা যুবলীগ’র সভাপতি, সাধারন সম্পাদককে অভিনন্দন জানানোর জন্য।
 ১২ বছর অর্থাৎ ২০০৫ পরবর্তী বিভিন্ন আন্দোলন, রাজনৈতিক স্থবিরতা, জাতীয় নির্বাচন, রাজাকারদের শাস্তির প্রতিবাদকে প্রতিরোধ, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নকে সঠিক বাস্তবায়ন এবং পেট্রল বোমা নিক্ষেকক্ষারীদের দমন সহ সর্বপরি দেশের সার্বিক পরিস্থিতির জন্য সম্মলন না হলেও পরিস্থিতির উন্নয়নের ফলে মো. ফজলুর রহমান জেলা যুবলীগকে নিয়ে সফল সম্মেলন আয়োজন করাটা পূর্ববর্তী যুবনেতাদের সফল অনুসরন হিসেবেই আমি মনে করি। একজন ফজলুর রহমানের সময়োপযোগি সিদ্ধান্তই মৌলভীবাজার যুবলীগকে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’র মাঝে আদর্শ, সৎ ও কর্মট যুব সংগঠন হিসেবে আবির্ভাব করেছে বলে আমি বিশ্বাস করি।
মো. ফজলুর রহমান’র রাজনৈতিক পথচলা বর্তমান কমিটি আকড়ে থাকবে বলেও মনে  করি।
আমার মনে করার কারনও অনেক। ৮০ দশকের তুখোর ছাত্রলীগ নেতা থেকে পরবর্তীতে জেলা ছাত্রলীগ’র জেলা সভাপতি , নব্বইয়ের দশকের জেলার গুরুত্বপূর্ন যুবনেতা, ২০০১ পরবর্তী সময়ে বিএনপি জামাত জোটের শোষনের সময়ে জেলা আওয়ামী পরিবারের অন্যতম সাহসী এবং পরিশ্রমী নেতা  মো. ফজলুর রহমান জেলা যুবলীগ’র সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার বদলে গিয়েছিল মৌলভীবাজারে আওয়ামী পরিবারের চেহারা। জেলা যুবলীগ’র পূর্নাঙ্গ সফল পরিষদ গঠনের মাধ্যমে বিএনপি জামাত জোটের দুঃশাষনের বিরোদ্ধে জেলা শহরের আন্দোলনের নতুন মাত্রা যোগ হয়। হাওয়া লাগে প্রতিটি উপজেলায়। সফলভাবে সকল উপজেলা যুবলীগ গঠনের মাধ্যমে আন্দোলন পৌছে যায় জেলার প্রতিটি উপজেলা, পৌরসভা আর ইউনিয়নে। জেলা আওয়ামী লীগে স্থান করে নেন পরিশ্রম, সততা আর দলের প্রতি আনুগত্যের কারনে।
একজন ফজলুর রহমান থেমে থাকেননি। ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালের রাজনৈতিক কঠিন সময়ে সকলকে নিয়ে এক্যবদ্ধ থাকেন। ২০০৮ এর শেষ দিকে জাতীয়  নির্বাচনে ফজলুর রহমান উনার বিশ্বস্থ সহচর এবং যুবলীগ’র জেলা সাধারন সম্পাদক (বর্তমান জেলা সভাপতি) নাহিদ আহমদকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ যুবলীগকে মাঠে নামান এবং জেলায় সফলভাবে নির্বাচনে জয়ী করান নিজ প্রার্থীদের।
এক সংগ্রামী পরিশ্রমী রাজনৈতিক কর্মী থেকে নেতৃথ্যে আসা মো. ফজলুর রহমান থেমে থাকেননি। ২০০৫ সালে জেলা যুবলীগ’র সভাপতি হওয়ার পর থেকেই আন্দোলন, পরবর্তীতে রাজনৈতিক কঠিন সময় এবং জাতীয় নির্বাচন শেষে নেমে পড়েন যুবলীগ’র জন্য যোগ্য নেতা নির্বাচনে। সাথে সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন মানব কল্যান মূলক কাজে জড়িত হোন। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাথে জড়িত হয়ে সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে কিশোর ও যুবসমাজকে রক্ষায় নেমে বিভিন্ন মহলের প্রশ্ংসা কুড়ান। সেই সাথে জেলা যুবলীগ’র শীর্ষ নেতা থেকে কেন্দ্রীয় যুবলীগ’র সদস্য হন।
২০১৫; নেতা থেকে জনগন সবার আপনজন হয়ে উঠায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভাবতে শুরু করেন অনেকেই। ইতোমধ্যে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ’র প্রার্থীর পক্ষে নিরলস কাজ করে যাওয়ায় তৃনমূল থেকে জেলা নেতারা মৌলভীবাজার জেলা শহর তথা মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র প্রার্থী হিসেবে নৌকার প্রার্থীতার পক্ষে কাজ করেন। কেন্দ্র থেকে প্রার্থীতা পর বিপুল ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হন জনগনের প্রাণের যুবনেতা মো. ফজলুর রহমান।
শুধু নিজে নন উনার যোগ্য নেতৃথ্যে সেই সময় থেকেই যুবলীগ থেকে পরবর্তীতে জেলার বিভিন্ন পৌরসভা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন নির্বাচনে যুবলীগের অনেক নেতা নির্বাচিত হন।  জেলা যুবলীগ’র সঠিক নেতৃত্যে আশা এই বিজয়গুলোই ১২ বছরের যুবলীগ তথা মো. ফজলুর রহমান’র সাফল্য  বলে আমি বিশ্বাস করি।
মো. ফজলুর রহমান  কঠোর পরিশ্রম আর যোগ্যতা দিয়ে জেলায় তার অবস্থান করে নিয়েছেন।
তার নেতৃত্বেই আজ যেমন জেলা যুবলীগ গোটা মৌলভীবাজারে এক অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে তেমনি দীর্ঘদিন উনার সান্নিধ্যে থেকে , তৃণমূল কর্মীদের হৃদয়ের অনুচ্চারিত আবেগকে আত্মস্থ করে পথ চলা  অত্যন্ত সফল  সংঘঠক নাহিদ আহমদ,তার এই অভিজ্ঞতা আগামী যুবলীগের পথ চলা সহজ হবে এবং সৈয়দ রেজাউর রহমান সুমন নিজেদের পরিষদকেও নিবেন এমন উচ্চতায় সে আশা করি।
মানবকল্যানে কোনও ব্যক্তির অভিলাষ যদি নির্ভেজাল হয় আর খুব তীব্র ইচ্ছা শক্তি থাকে, তবে একটা মানুষ তার লক্ষ্যে সফল হবেই।  মো. ফজলুর রহমানের আদর্শ জেলার যুবনেতাদের ইতোমধ্যে আকৃষ্ট করেছে এবং তা চলমান থাকবে।
বিপরীতে কু-রাজনীতি ধ্বংস অনিবার্য, সেই সাথে পেশী শক্তি প্রদর্শন বন্ধে সকলকে একতাবদ্ধভাবে এগিয়ে আশার আশা করছি ।
সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com