মৌলভীবাজারে ৩য় দফা বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি : দুর্গত এলাকায় প্রতিদিন মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে : আশ্রয়কেন্দ্র কোথায় জানেননা অনেকে
স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজার জেলার বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। কুশিয়ারা নদীর পানি কমলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, রাজনগর ও সদর উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়নে বন্যার পানি এখন স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রুপ নিয়েছে। বন্যা দূর্গত এলাকায় অনেকেই পানির সাথে যুদ্ধ করে আছেন নিজগৃহে, তাদের জানানেই কোথায় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। বাড়ি-ঘড় ও রাস্তাঘাট থেকে পানি না নামায় প্রতিদিন মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। পাশাপাশি বন্যার্তদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানিয় জলের অভাব সহ বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগব্যাধিও বাড়ছে। এসব এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্থরের ১৮৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ত্রাণসামগ্রী দেয়া হলেও প্রয়োজনের তোলনা তা অপ্রতুল।
এদিকে ৬ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে সদর উপজেলার আখাইলকুড়া ইউনিয়নে সরকারি ভাবে ত্রাণ বিতরণ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দা সয়রা মহসীন ও জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আশ্রয় কেন্দ্র সহ বন্যা আক্রান্ত এলাকায় প্রতিদিন ত্রাণ বিতরণ অভ্যাহত হয়েছে।
অপরদিকে ত্রাণ হিসেবে বন্যা দূর্গত এলাকায় গম বিতরণ করায় মানুষ পরেছেন বিপাকে। গম শুকানো ও ভাঙানো একটা বাড়তি ঝামেলা। শুকাবো কোথায়? ভাঙবো কোথায়? উল্টো খাজনার চেয়ে যেন বাজনা বেশি হয়ে গেলো এ মন্তব্য করেছেন এলাকার অনেকেই। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম জানান, ত্রাণ হিসেবে বন্যা দূর্গত এলাকায় গম বিতরণে মানুষের সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তিনি কথা বলেছেন। পরবর্তীতে গম এ জেলায় দেয়া হবেনা বলে জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা কমলেও শেরপুর পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বন্যা দুর্গত জুড়ী উপজেলার ইউসুফপুর, শাহাপুর, খালের মুখ, চালবন, শিমুলতলা, কুলাউড়া উপজেলার নিঃশংকপুর দেখিয়ারপুর, সোনাপুর, আমতৈল ও বড়লেখা উপজেলার হাল্লা, পাবিজুড়ী, কুটাউড়া, ইসলামপুর এলাকা পরিদর্শন গেলে ওই সব এলাকার মানুষ পানির সাথে ঢেউয়ের মধ্যে যুদ্ধ করে আছেন নিজগৃহে। প্রায় এক মাস যাবৎ বন্যার স্থায়ীত্ব হলেও বন্যার্থদের জানা নেই কোথায় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এ সব এলাকার অধিকাংশ টিউবলেল পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানিয় জলের রয়েছে অভাব। পানি কিছুটা কমলেও বাড়িঘরে ৩-সাড়ে ৩ ফুট পানি রয়েছে। ঘরের চুলাও পানিতে ডুবে গেছে। তাই রান্না বান্না খাটের উপর। বাড়িঘরে পানি উঠায় আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রীতরাও মানবেতর জীবনজাপন করছেন।
ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, বেসরকারিভাবে কে কিভাবে ত্রাণ দেয় তা আমাদের কেউ জানায়না। তার এলাকার সদিপুর গ্রামে ত্রান দেয়া হচ্ছে, তবে লোক সংখ্যার তোলনায় খুবই অপ্রতুল।
নৌকা দেখলেই ঘরের ভেতরের হাটু ও কমর পানি ডিঙিয়ে আঙিনা বেরিয়ে পড়ছেন অসহায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা। এই বুঝি কেউ ত্রাণ নিয়ে আসছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় সরকারী বেসরকারী ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় মলিন মুখে খালি হাতেই ঘরে ফিরতে হয়।
মন্তব্য করুন