মৌলভীবাজার এনডিএফ’র সভায় বক্তারা সাম্রাজ্যবাদ ও দালালদের স্বার্থে প্রণিত বাজেটে জনস্বার্থ উপেক্ষিত
স্টাফ রিপোর্টার॥ জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির এক সভায় ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বক্তারা বলেন সাম্রাজ্যবাদী সংস্থার প্রেসক্রিপশন অনুয়ায়ী সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের স্বার্থে প্রণিত বাজেটে বরাবরের মতো জনস্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। ৭ জুন সন্ধ্যায় শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা অন্যতম নেতা মো: সোহেল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব রব্বানী, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ তারেশ চন্দ্র দাস, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা ইউনিয়নের নেতা আব্দুল লতিফ, আবু সুফিয়ান, আশরাফ উদ্দিন, হোসেন মিয়া ও সুবেল মিয়া। সভায় বক্তারা বলেন বৈশ্বিক মন্দাজানিত পরিস্থিতিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প ও শ্রমজীবী জনগণের জীবন ও জীবিকা রক্ষার প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত বাজেটে কোন দিক নির্দেশনা নাই। ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট টাকার অঙ্কে বিগত অর্থ বছর থেকে প্রায় ৪.৬ শতাংশ বৃদ্ধি দেখানো হলো হলেও প্রকৃত পক্ষে তা গত অর্থবছর থেকে কমেছে। কারণ গত অর্থবছরে ৭ বিলিয়ন ডলারের বাজেট হলেও প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬.৭৭ বিলিয়ন ডলার। প্রস্তাবিত বাজেটের ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকাই ঋণ করে অর্থাৎ প্রায় ৩৫ শতাংশই ঘাটতি বাজেট। আর এই ঋণ পরিশোধে দেশকে করা হবে ঋণগ্রস্থ। বাজেটে ঋণের সুদ বাবদ ১ হাজার ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে; যা একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ। ইতোমধ্যে মাথাপিছু ঋণ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। নেতৃবৃন্দ বলেন সরকার সাম্রাজ্যবাদীদের ঋণে ও তাদের স্বার্থে অবকাঠামোগত কার্যক্রমের তথাকথিত উন্নয়নের চাপে দেশ আজ দেউলিয়াত্বে মুখোমুখি। ইতোমধ্যে দেশের ব্যাংক, বীমাসহ সকল আর্থিক খাতের সংকট ঘনীভূত হওয়ার চাপ পড়ছে অর্থনীতিতে। ডলারের বিপরীতে টাকার অব্যাহত দরপতন, ডলারের তীব্র সংকটের পাশাপাশি ব্যাংকের নদগ অর্থের সংকটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে সংকট তীব্র হচ্ছে। অথচ অর্থনীতির এমন সংকটজনক পরিস্থিতিতেও খেলালি ঋণ আদায় তো হচ্ছেই উপরন্তু গত তিন তা আরও বেড়েছে ৩৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমান রেকর্ড উচ্চতায় পৌছে ১ লাখ ৮২ কোটি টাকায় দাড়িয়েছে। সরকার বাজেটে বৈধ আয়ে সর্বোচ্চ কর ৩০ শতাংশ ধার্য করলেও কালোটাকার মালিকদের ১৫ শতাংশ কর দিয়ে টাকা বৈধ করার সুযোগ দিয়েছে। সরকার ধনিক গোষ্টির সুযোগ দিতে প্রত্যক্ষ আয়কর বাড়ানোর পরিবর্তে পরক্ষো আয়কর বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটার ব্যবস্থা করেছে। সরকার আইএমএপের ঋণচুক্তির শর্ত পুরণে গ্যাস-বিদ্যুত-জ্বালানি, কৃষিসহ বিভিন্ন খাত থেকে ভতুর্কি প্রত্যাহারের নীতি গ্রহণ করে বছরে কমপক্ষে ৪ বার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, প্রতিমাসে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়নের নামে জনগণের ঘাড়ে মূল্য বৃদ্ধির চাপ বাড়াচ্ছে। সরকারে রাজস্ব আয়ের সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা আসবে মূল্য সংযোজন কর(ভ্যাট) থেকে । ফলে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির এই সময়ে জিনিসপত্রের মূল্য আরেক দফা বৃদ্ধি পাবে। প্রস্তাবিত বাজেট গণবিরোধী এবং গতানুগতিক ধারাবাহিকতারই প্রতিফলন। তাই বাজেটকে যে ভাবেই উপস্থাপন করা হোক না কেন এই বাজেট মূলতঃসাম্রাজ্যবাদের বিভিন্ন সংস্থা তথা আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের নীতি-নির্দেশের আলোকে প্রণীত হয়। বাজেট যে সরকারের আমলেই পেশ হোক তাতে রাষ্ট্রের সুবিধাভোগী গোষ্ঠির স্বার্থে কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় না। যে কারণে বাজেটের আকার বাড়লে লুটেরা গোষ্ঠির সম্পদের আকার বাড়ে আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সহায়-সম্বলহীন হয়। প্রচলিত ব্যবস্থায় বাজেট নিয়ে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আশাবাদী হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আজ তাই জাতীয় ও জনস্বার্থমুখী বাজেটের পূর্ব শর্ত হচ্ছে জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজ। নেতৃবৃন্দ সেই লক্ষ্য প্রতিষ্ঠায় সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান। সেই সাথে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের স্বার্থরক্ষাকারী জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী গতানুগতিক প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট প্রত্যাখান করে সাম্রাজীবাদ-সামন্তবাদ মুক্ত শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠান লক্ষ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন