(ভিডিওসহ) মৌলভীবাজার করোনা সংক্রমণে শীর্ষে থাকায় জেলার পর্যটন স্পট বন্ধ সহ সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ
স্টাফ রিপোর্টার॥ প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলা দেশের মধ্যে করোনা সংক্রমণের পরিসংখ্যানে শীর্ষে রয়েছে। বৃহস্পতিবার ১ এপ্রিল বিকেলে এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিং জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় থাকা জেলাবাসীকে সচেতন করতে ও করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রনে রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় পৌরসভা। প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, সিভিল সার্জন চৌধুরী ডাঃ মোঃ জালাল উদ্দিন মুর্শেদ, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান।
প্রেসব্রিফিংয়ে জানানো হয় নতুন করে করোনা সংক্রমনের হার বেড়েছে। প্রতিদিনই নতুন করে করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যান বাড়ছে। গত ১১ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৪১৪ জনের নমুনা টেস্টের মধ্যে পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে ৯২ জনের। এর মধ্যে মারা গেছেন ২ জন। যা সংক্রমণের হার ২২.২% রয়েছে।
সংক্রমণ রোধে আজ থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টার পর জেলার সব দোকানপাট বন্ধ রাখা এবং জেলার সকল পর্যটন স্পট বন্ধ রাখা হয়েছে। জাতীয় ভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের করোনার ১৮টি নির্দেশনার পাশাপাশি স্থানীয় ভাবে আরও ১১টি নির্দ্দেশনা মানার জন্য সিদ্ধান্ত নির্দেশ জারি করা হয়।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে নানা উদ্যোগ নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছে প্রশাসন। সংক্রমণ রোধে জন সচেতনতা বাড়তে ইতিমধ্যে জনসমাগমের স্থানগুলোতে কয়েক দিন থেকেই চালিয়েছেন প্রচার প্রচারণা। বিতরণ করছেন মাস্ক। জানানো হয়েছে আইন অমান্য করে অপ্রয়োজনে ঘুরাফেরা, জটলা ও আড্ডা দিলেই জেল জরিমানাসহ নানা কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭ টার পর জেলার সকল দোকানপাট (ফার্মেসী ব্যতিত) বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো দিনের বেলায়ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে খোলার কথা বলা হয়। গণপরিবহন ও ছোট যানবাহনকে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এছাড়া পরবর্তী ১৫ দিনের জন্য জেলার সকল পর্যটন স্পট ও কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ, সকল সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে গণজমায়েত নিষিদ্ধ। সন্ধ্যা ৭ ঘটিকার পর শপিংমল, হাটবাজারসহ সকল ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কঠোর নির্দেশনার কথাও জানানো হয়।
ওই প্রেস ব্রিফিংয়ের পূর্বে একইস্থানে জেলার ব্যবসায়ী, রাজনীতিবীদ, সামাজিক সংগঠন, জনপ্রতিনিধি, গাড়ি মালিক ও চালক সংগঠন ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে করোনা সংক্রমণ কমাতে করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেসব্রিফিংয়ে সিভিল সার্জন চৌধুরী ডাঃ মোঃ জালাল উদ্দিন মুর্শেদ জানান, সারা দেশের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির হার বিবেচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মৌলভীবাজার জেলা এখন শীর্ষে। মৌলভীবাজারের পর দ্বিতীয় অবস্থানে মুন্সীগঞ্জ, তৃতীয় চট্রগ্রাম, চতুর্থ ঢাকা ও পঞ্চম অবস্থায় রয়েছে সিলেট। সারাদেশে করোনা সংক্রমণের টেস্টের বিপরীতে এ পরিসংখ্যান তৈরী হয়।
সিভিল সার্জন আরও জানান সারাদেশে করোনা সংক্রমণের হার টেস্টের বিপরীতে ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ। সেখানে মৌলভীবাজারে সংক্রমণের হার ২২ দশমিক ২০ ভাগ রয়েছে।
জেলায় এখন পর্যন্ত মোট পজেটিভ রোগী ২০৩৯ জন তার মধ্যে মারা গেছেন ২৪ জন। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য জেলা শহরে ৫০, রাজনগরে ৪০ ও অন্যান্য উপজেলায় ১০টি করে বিশেষ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে করোনা মোকাবেলায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন, ৭টি উপজেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, ৭টি থানা পুলিশ, সিভিল সার্জন অফিস ও স্বাস্থ্য বিভাগ, মৌলভীবাজার পৌরসভাসহ বিভিন্ন দফতর বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে জেল জরিমানা বাস্তবায়ন করার কথা জানানো হয়।
প্রেসব্রিফিংয়ে করোনা সংক্রমণ কমিয়ে আনতে সকলের সার্বিক সহযোগিতা ও সচেতনতা চাওয়া হয়। প্রেসব্রিফিংয়ে জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন