মৌলভীবাজার চক্ষু হাসপাতালের ৬ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখলে নিচ্ছে ভূমিখেকো : প্রশাসনের সহযোগীতা চেয়ে কেনো সাড়া মিলছেনা
স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের ৬ কোটি টাকা মূল্যের একখন্ড ভূমি একটি ভূমিখেকো মহল জোরপূর্বক দখল করে নিচ্ছে। ভূমি রক্ষার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বারবার প্রশাসনের সহযোগীতা চেয়েও কেনো সাড়া পাচ্ছেন না। এদিকে চক্ষু হাসপাতালের ভূমি রক্ষা কমিটি ভূমি উদ্ধারের দাবীতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছে।
মৌলভীবাজার শহরতলীর মাতারকাপন মৌজার এস এ ৮৪১ নম্বর দাগের ভূমিতে ১৯৮২ সালে মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল গড়ে উঠে। তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের কাছ থেকে ১৯৮২ সালের ১০ অক্টোবর রেজিস্টারী দলিলে সরকারী ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ১ একর ভূমি বন্দোবস্ত নিয়ে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই হাসপাতালটি বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে একমাত্র চক্ষু চিকিৎসার প্রতিষ্ঠান হওয়ায় দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। হাসপাতাল সম্প্রসারণের জন্য আরো ভূমির প্রয়োজন হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক একই দাগের পশ্চিম দিকের আরো ২ একর ২৮ শতক ভূমি হাসপাতালের নামে বন্দোবস্ত দেন। হাসপাতালের মোট ভূমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ একর ২৮ শতক।
চক্ষু হাসপাতালের ৩ একর ২৮ শতক ভূমির মধ্য থেকে একটি ভূমিখেকো মহল জোরপূর্বক ৬০ শতক ভূমি জোরপূর্বক দখল করে নিচ্ছে। এই দখলকারীরা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ২৪ মে সকাল থেকে পাক্কা দেয়াল নির্মাণ করে ৬০ শতক ভূমি চক্ষু হাসপাতালের ভূমি থেকে আলাদা করে নিচ্ছে। তারা রাতের বেলা লাইট জ্বালিয়ে দ্রুততার সাথে কাজ করে তাদের দখল স্থায়ী করে নিচ্ছে। বাজার মূল্য অনুযায়ী ভূমিখেকেদের দখলে নেওয়া ভূমির দাম ৬ কোটি টাকা।
মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের পক্ষ থেকে এই দখলবাজির বিষয়টি ২৪ মে বেলা ১১টার মধ্যেই মৌলভীবাজার মডেল থানা কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়। কিন্তু পুলিশ কোনো ভূমিকা নেয়নি। মৌলভীবাজার মডেল থানা ওসি অকিল উদ্দিন আহমদের সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তাকে জানিয়েই দখলকারীরা দখলে গিয়েছেন। এই জমি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। পুলিশ ওখানে গেলে আদালত অবমাননা হবে। তাই প্রতিষ্ঠানের জমি বেদখল হয়ে গেলেও পুলিশের কিছুই করার নাই।
মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের অবৈতনিক সাধারণ সম্পাদক এ এম ইয়াহিয়া মুজাহিদ জানান, সরকার ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ৩ একর ২৮ শতক ভূমি চক্ষু হাসপাতালকে দুইবারে বন্দোবস্ত দিয়েছে। প্রথম প্রাপ্ত ১ একর ভূমির নামজারী খতিয়ান ৭৮৮ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে বন্দোবস্ত প্রাপ্ত ২ একর ২৮ শতক ভূমির নামজারী খতিয়ান ৯৫৬। দুটি খতিয়ানেরই হালসন পর্যন্ত খাজনা আদায় করা হয়েছে। এই ভূমি ইতিপূর্বেও দখলের চেষ্টা করা হয়েছে। তখন পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করেছে। কিন্তু এবার কি এক রহস্যময় কারণে পুলিশের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।
এ বিষয়ে ভূমির নতুন করে দখলদার ও ভূমির দাবীদার সালেহ আহমদ জানান তার পিতা ক্রয়সূত্রে মালিক এই জমির মালিক। তারা হাসপাতালের কোন জমি দখল করেননি।
চক্ষু হাসপাতারের ম্যানেজার এম এ মান্নান জানান, সিলেট বিভাগের মধ্যে চক্ষু চিকিৎসার সবচে বড় প্রতিষ্ঠান মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল। এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চারশত রোগী চিকিৎসা পাচ্ছেন। গড়ে প্রতিদিন চক্ষু অপারেশন হয় ২০টি। হাসপাতালে যেসব চিকিৎসা হয় সেগুলো হচ্ছে; ফ্যাকো সার্জারী, নালী ও ছানী অপারেশন, গ্লোকমার চিকিৎসা, টেরিজিয়াম, লেজার। বাচ্চাদের চোখের অপারেশন। এই অপারেশন সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজেও হয় না। সকল চিকিৎসাই স্বল্প খরচে হয়। এই চক্ষু হাসপাতালে আসা কোনা রোগী একটাকা দিতে না পারলেও তার চোখের অপারেশনসহ যাবতীয় চিকিৎসা করে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের ভূমি দখলকারীদের কাছ থেকে উদ্ধারের জন্য গড়ে উঠা ভূমি রক্ষা কমিটি বৃহস্পতিবার ২৬ মে মৌলভীবাজার জেলা শহরের চৌমূহনায় সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে। ভূমি রক্ষা কমিটি যুগ্ম আহ্বায়ক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা আইন হাতে তুলে নেবো না। তবে একের পর এক অন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে পুরো জেলাকে অচল করে দেবো। আন্দোলনের তীব্রতায় চক্ষু হাসপাতালের জমি ভূমিখেকো মহলের কাছ থেকে উদ্ধার করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বাধ্য হবে।
মন্তব্য করুন