চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্স অনুষ্ঠিত : বিচার সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের আন্তরিকতা প্রয়োজন
স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজার জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
২৯ অক্টোবর, শনিবার সকালে জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ.কিউ.এম. নাছির উদদ্ীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ারুল হক, মৌলভীবাজার পৌরসভা মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, ডাঃ পার্থ সারথি দত্ত কাননগো, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, জেল সুপার, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর, এডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর, এসিস্টেন্ট পাবলিক প্রসিকিউটরবৃন্দ, ইন্সপেক্টর, পিবিআই এবং জেলার বিভিন্ন থানার ও রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
কনফারেন্সের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ.কিউ.এম. নাছির উদদ্ীন বিগত সভার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরে দ্রুততা ও দক্ষতার সাথে আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্তকাজ সম্পন্ন করতঃ প্রতিবেদন দাখিল, যথাসময়ে মামলার সাক্ষী উপস্থাপন নিশ্চিত করতঃ তাদের নিরাপত্তা বিধান, গ্রেফতারের পর আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে সোপর্দ করা এবং ডাক্তারী পরীক্ষা ও মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বনসহ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য বিচারক ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
গত মাসের মামলা নিষ্পত্তির বিবরণ উপস্থাপন করে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বলেন যে, সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে ৭১৪৩টি মামলা বিচারাধীন ছিল। নতুন দায়ের হয়েছে ৭০৪টি মামলা, নিষ্পত্তি হয়েছে ৬১৮টি, বর্তমানে ৭২২৯টি বিচারাধীন আছে এবং পাঁচ বছরের পুরাতন ৫৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। গত ০১/১০/২০১৬ ইং তারিখ পর্যন্ত মোট ৬৯৭৯টি গ্রেফতারী পরোয়ানা, ১৬২টি ক্রোকি পরোয়ানা ও ৪৯৮ টি সাক্ষী পরোয়ানা মুলতবী আছে মর্মে উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, এই সকল পরোয়ানা যথাসময়ে তামিল না হওয়ায় মামলাসমূহের দ্রুত বিচার সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া ৯৯২টি সাজা পরোয়ানা বিনা জারী অবস্থায় থাকার কারণে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদেরকে বিচারের আওতায় এনে সাজা প্রদান করা যাচ্ছে না এবং দৃশ্যত: ন্যায়বিচার বিঘিœত হচ্ছে। সাজাপ্রাপ্ত বা বিচারাধীন মামলার আসামী আদালতের বাইরে থেকে একদিকে যেমন নতুন নতুন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে, অন্যদিকে এই কারণে বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দিচ্ছে। তাই বিভিন্ন পরওয়ানা জারীর বিষয়ে আরও তৎপর হওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন থানা থেকে আগত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
কনফারেন্সে উপস্থিত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ম্যাজিস্ট্রেটগণ সহ সংশ্লিষ্ট সবাই উল্লেখ করেন যে, যথাসময়ে আদালতে সাক্ষী উপস্থাপনে পুলিশ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সাক্ষীর উপস্থিতি পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মামলা নিষ্পত্তির গতি ত্বরান্বিত হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের উদ্যোগের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। সভায় উপস্থিত মেয়র, মৌলভীবাজার পৌরসভা তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, নিয়মিত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্স আয়োজনের সুফল বিচার প্রার্থী জনগণ ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছেন। এতে মামলা নিষ্পত্তির হার পূর্বের তুলনায় অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কনফারেন্সে উপস্থিত বক্তাগণ পুরাতন মামলাসমূহ অগ্রাধিকার প্রদান করে নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়ে উল্লেখ করেন যে, মামলার জট নিরসন করা না গেলে বিচার প্রশাসনের সাথে জড়িত সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়। জনগণের আস্থা কেবলমাত্র সরকারের একটি বিভাগের সাফল্যের উপর নির্ভর করে না। বিচার ব্যবস্থার সাথে জড়িত প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বের সুষ্ঠু পালনই জনগণকে কাংঙ্খিত ন্যায় বিচার প্রদান করতে পারে। এছাড়াও, বক্তাগণ দ্রুত গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল ও সমন জারীর ব্যবস্থা গ্রহণ, তদন্তে কার্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান, তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার, হয়রানী বন্ধ, নকলখানা হতে স্বল্পতম সময়ে নকল সরবরাহের ব্যবস্থা, মামলার আলামত সংরক্ষণ ও সঠিক নিয়মে নিষ্পত্তি, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও নিষ্পত্তিকৃত নথি দ্রুত রেকর্ডরুমে প্রেরণ, আদালত ও বিচার সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সহ নানাবিধ বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামতসমূহ কনফারেন্সে তুলে ধরেন।
কনফারেন্সে উপস্থিত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যান্য উপস্থিতি কর্র্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যার আইনী সমাধান, প্রশ্নোত্তর প্রদান এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করতঃ সমাপনী বক্তব্যে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব এ.কিউ.এম নাছির উদদ্ীন বলেন যে, ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় বিচার প্রশাসন, নির্বাহী প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন,স্বাস্থ্য বিভাগ সহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ একে অপরের পরিপূরক। এর যেকোন একটি অঙ্গ আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মপরিধি সম্পন্ন করতে অবহেলা করলে তা সম্পূর্ণ বিচার ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব ফেলে যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। তিনি আরো বলেন যে,ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে একযোগে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে বিচার প্রার্থী মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। শিশুর অধিকার, নারীর অধিকার, কারাবন্দিদের অধিকার, সংখ্যালঘুদের অধিকার সর্বোপরি মানবাধিকারকে সামনে রেখে বিচারপ্রার্থী জনগণের কাঙ্খিত ন্যায় বিচার দ্রুততম সময়ে নিশ্চিত করে আইনের শাসন সমুন্নত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। আগামী দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের পারষ্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আসবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করেন বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব এ.কিউ.এম. নাছির উদদ্ীন।
মন্তব্য করুন