(ভিডিওসহ) মৌলভীবাজার জেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন : আগাম জাতের ধান কর্তন কম্বাইন হারভেস্টারে শুরু
স্টাফ রিপোর্টার॥ নতুন ধানের মৌ-মৌ গন্ধে যেন মূখরিত মৌলভীবাজার জেলার চারিপাশ। কেউ ধান কর্তন করছেন। আবার কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলতি আমন মৌসুমে আনুষ্ঠানিক ভাবে আগাম জাতের ব্রি ধান কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে কর্তন শুরু হয়েছে। আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। ধানের ন্যায্য মূল্য ও শ্রমিক সংকট থাকায় হতাশায় রয়েছেন কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে যান্ত্রিক নির্ভর হলে শ্রমিক সংকট থাকবে না। পাশাপাশি খরচ কমার পাশাপাশি উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। বৃহস্পতিবার ৪ নভেম্বর দুপুরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমেরু ও ভুজবল এলাকায় জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে আগাম জাতের ব্রি ধান-৮৭ কর্তন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান কম্বাইন হারভেস্টার চালিয়ে ধান কর্তন করেন ও আনুষ্ঠানিক ভাবে শস্য কর্তনের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী, সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সুব্রত কুমার দত্ত।
অন্যন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজেষ্ট্রেট অর্নব মালাকার, স্থানীয় কৃষক ও কম্বাইন হারভেস্টার মালিক সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীন, উপ সহকারী কৃষি অফিসার নিরোজ কান্তি রায়।
কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর জেলায় আমন চাষাবাদ হয়েছে ১ লক্ষ ১ হাজার ৪শ ২৫ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন চাল। ২০২১-২২ অর্থবছরের সমন্নিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের উন্নয়ন সহায়তার (ভর্তুকি) মাধ্যমে জেলায় বরাদ্দ আসে ১৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ৩টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, ১৯ টি রিপার, ১৫টি ধান মারাই যন্ত্র ও ১টি ভুট্রা মারাই যন্ত্র। এছাড়াও জেলায় সবমিলিয়ে ৬০টি কম্বাইন হারভেস্টার চলতি আমন মৌসুমে ধান কর্তন করবে। ৩৫০০ কৃষককে বিনামূল্যে উন্নত জাতের বীজ ও সার দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক সৈয়দ উমেদ আলী জানান, এ বছর ১৩০ বিগা (কেয়ার) জমিতে ব্রি ধান ৮৭, ৭৫ ও হাইব্রিড জাতের ধানীগোল্ড ধান চাষ করেছেন। নিয়মিত পরিচর্যা করায় ফলন ভালো হয়েছে। ধান কর্তন শুরু হয়েছে। আশা করছেন ২৫‘শ থেকে ২৬‘শ মন ধান পাবেন। প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুমে দেখা দেয় শ্রমিক সংকট। কখনো শ্রমিকের যোগান পেলেও অতিরিক্ত মুজুরি দিয়ে আনতে হয় তাদের। জমির ধান উঠাতেও বিলম্ব হয়। এতে অনেক জমিতে ধান ঝরে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হন। এ কারণে কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কর্তন করছেন। চারা রোপনের জন্য রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন নিয়েছেন।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, খাদ্যে উদ্বৃত্ত মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর সর্বকালের সবচেয়ে বেশী পরিমাণ জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। নতুন নতুন ধানের জাত দেয়া হচ্ছে কৃষকদের মাঝে। চলতি আমন মৌসুমে আগাম জাতের বিনা ধান-১৭, ব্রি-ধান ৭১,৭২,৭৫ ও ৮৭, ধান কর্তন চলছে। ইতোমধ্যে ১ ভাগ ধান কর্তন হয়েছে। কর্তনকৃত জমিতে শরিষা, ভুট্রা ও সূর্যমূখী আবাদ হবে। এতে করে শস্যের নিভিরতা বৃদ্ধি পাবে ও জাতীয় ভাবে এর উৎপাদন যোগ হবে।
তিনি আরও বলেন, চলতি আমন মৌসুমে ৭০ ভাগ ভর্তুকির ১৫ টি কম্বাইন হারভেস্টার বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। কম সময়ে অল্প খরচে কম্বাইন হারভেস্টার দ্বারা ধান কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই করে মাঠ থেকে উঠানে আনা একবাওে সহজ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে যান্ত্রিক নির্ভরশীল হলে শ্রমিক সংকট এক সময় থাকবেনা। পাশাপাশি শস্যের উৎপাদন বাড়বে ও উৎপাদন খরচ কমে যাবে।
কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে আমন ধান কর্তনের শুভ সূচনা শেষে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, বর্তমান সরকার কৃষি খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও কৃষি বিভাগের আন্তরিকতায় শস্যের উদ্বৃত্ত অঞ্চল হিসেবে পরিনত হয়েছে মৌলভীবাজার জেলা। যান্ত্রিকীকরণের কারণে আগাম শষ্য কর্তন করা হয়েছে। জমি থেকে ধান তোলার পর এ জমিতে অন্য একটি ফসল উৎপাদন করা সম্বব। এসব বিষয়ে কৃষকদের উৎসাহ দিলে জেলায় কৃষি বিপ্লব ঘটবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
ধানের ন্যায্য মূল্যসহ স্থানীয় কৃষকদের দাবী সরকারি উদ্যেগে টেকসই, উন্নতমানের কৃষি যন্ত্র সরবরাহ ও খুচরা যন্ত্রাংশ কম মূল্যে পাওয়া। এত করে উৎসাহ বাড়ার পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
মন্তব্য করুন