মৌলভীবাজার জেলায় মুজিব বর্ষে ১১২৬টি ভূমিহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ দ্রুতগতিতে চলছে

January 4, 2021,

স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে ভূমিহীনদের মাথা গোঁজার ঠাঁই দেয়ার কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে মুজিব শতবর্ষে ১ হাজার ১‘শ ২৬টি ভূমিহীন পরিবার সকল সুবিদে সহ পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার নতুন করে জমি সহ গৃহ। তবে সেই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ভূমিহীনের তালিকায় নাম উঠা সকলেই।
মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভূমিসহ ঘর পাবেন এমন স্বপ্ন দেখছেন মৌলভীবাজারের অনেকেই। ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা তৈরীর কাজ শেষ করেছে জেলা প্রশাসন। জানুয়ারি মাসের মধ্যভাগে তাদের সেই কাঙ্খিত স্বপ্ন বাস্তবে প্রতিফলিত হবে।
জেলা প্রশাসন জানায়, কারা গৃহ পাচ্ছেন সে তালিকা এখনও চুরান্ত হয়নি। তবে ভূমিহীন যে সব পরিবার পাবেন তারা ২ শতাংশ জমি সহ ৪৩৮ বর্গফুটের প্রতিটি ঘর পাবেন। প্রতিটি ঘরে থাকবে দু’টি কক্ষ, একটি বারান্দা, বাথরুম ও রান্নাঘর। দুর্যোগ সহনীয় এসব ঘর হবে টেকসই এবং প্রতিটি ঘরেই থাকবে সোলার সিস্টেম আর বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা।
মৌলভীবাজার-৩ (মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর) আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, তার নির্বাচনী এলাকা মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইলকুড়া ইউনিয়নের বেকামুড়া (গোলাপগঞ্জ) এলাকায় ২২ ডিসেম্বর নির্মিত গৃহনির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, সদর উপজেলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফুল ইসলাম, আখাইলকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম আহমদ সহ অন্যন্যরা।
পরে সংসদ সসদ্য কনকপুর ইউনিয়নের দূর্লভপুর, চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের মাতার কাপন গৃহনির্মাণ কর্মকান্ড পরিদর্শন শেষে জানান, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল এ দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা। দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবেনা। সে লক্ষে জননেত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভূমিসহ ঘর পাবেন পূরো দেশে ৫০ হাজার গৃহহীন পরিবার। তারই দ্বারাবাহিকতায় মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলায় ৫৭৪ গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মান দ্রুতগতিতে তৈরী হচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা হাতকে শক্তিশালী করতে সকলকে আহবান করেন।
অপর দিকে মৌলভীবাজার জেলা সদরের আখাইলকুড়া ইউনিয়নের বেকামুড়া (গোলাপগঞ্জ), কনকপুর ইউনিয়নের দূর্লভপুর, চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের মাতার কাপন ও কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের মুকুন্দপুরে নির্মিত গৃহ নির্মান স্থান সহ আরও বেশ কয়েকটি স্থান পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর সেই অঙ্গিকারের ভিত্তিতে মৌলভীবাজারে যাদের ঘর নেই জমিও নেই এরকম ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষদের জন্য ১১২৬টি ঘর নির্মিত হচ্ছে। জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর উপকারভোগীদের কাছে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে। কাজের মান ও কাজের অগ্রগতি দেখতে সরেজমিন এসেছি। উপকারভোগীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুণগত মান নিশ্চিত করা, সর্বোচ্চ পেশাদ্বারিত্ব ও আন্তরিকতা দিয়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজটি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। এ সময় সংশ্লিষ্ট উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফুল ইসলাম (মৌলভীবাজার সদর) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী (কুলাউড়া) সহ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগন উপস্থিত ছিলেন।
ভুল চিকিৎসায় দুই পা ও এক হাত কেটে ফেলা ও সহায় সম্বলহীন আবুল বাশার হুইল চেয়ার এক হাতে চালিয়ে প্রত্রিকা বিক্রি করে পরিবার চালান। নিজের বাড়ি না থাকায় সদর উপজেলার মোস্তফাপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। চিকিৎসার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে দুই পা ও এক হাত হারানোর পাশপাশি শেষ সম্বল নিজের একখন্ড জমি ছিল তাও হারাতে হয়। বাশারের নাম ভূমিহীনের তালিকায় উঠেছে। তিনিও প্রত্যাশা করেন মুজিক বর্ষে একটি গৃহ পাবেন।
সদর উপজেলার আখাইলকুড়া ইউনিয়নের বেকামুড়া (গোলাপগঞ্জ) এলাকায় মনুনদীর পাশে সন্তানদের নিয়ে বসবাসকারী নুরি বেগম জানান, ভূমিহীনের তালিকায় তার নাম গেছে। তিনি প্রত্যাশা করেন তাকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একটি সাজানো গোছানো একটি গৃহ পাবেন।
সহায় সম্বলহীন জহির আলী কুলাউড়া পৌর শহরের উত্তর বাজারে ডিম বিক্রি করে পরিবার চালান। ঘরবাড়ি না থাকায় তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে বসবাস করছেন। ভূমিহীন তালিকা ভুক্তদের কাঙ্খিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে এই প্রত্যাশায় রয়েছেন তারা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গেছে, পূরো জেলায় ভূমিহীনের তালিকায় নাম উঠেছে সাড়ে ৩ হাজার পরিবারের। তাদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে নির্মান করা গৃহ দেয়া হবে ১ হাজার ১‘শ ২৬ ভূমিহীন পরিবারকে। এর মধ্যে মৌলভীবাজর সদর উপজেলায় ৪৭৬, বড়লেখা ৫০, কমলগঞ্জ ৮৫, জুড়ী ৭, কুলাউড়া ১১০ ও শ্রীমঙ্গলে ৩০০ ভূমিহীন পরিবারকে দেয়া হবে।
জেলার ৬৭টি ইউনিয়নে ভূমিহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ কাজ একযোগে চলছে। আর এ গৃহ নির্মান কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে যাচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
মুজিব বর্ষের অঙ্গিকার একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না সে লক্ষে গৃহ নির্মান কাজ দ্রুত চলছে।  ৪৩৮ বর্গফুটের প্রতিটি ঘর উপরে রঙিন টিন এবং নিচে পাকা অর্থাৎ সেমি-পাকা প্রত্যেকটি ঘরের জন্য সরকার বরাদ্দ রেখেছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা।
ভূমিহীনের তালিকায় নাম উঠা জেলার ভূমিহীন প্রত্যেকটি পরিবারের কাঙ্খিত স্বপ্ন ও প্রত্যাশা রয়েছে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সুন্দর সাজানো গোছানো একটি গৃহ পেলে মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com