মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে সংশয়
স্টাফ রিপোর্টার॥ “মনু নদীর ভাঙ্গন থেকে মৌলভীবাজার জেলা সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা রক্ষা প্রকল্প” নামক জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটির কাজ চলমান রয়েছে। একনেক সভায় গত ২০২১ সালের ২১ জুন অনুমোদিত প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে নয় শত ছিয়ানব্বই কোটি আটাশ লাখ ত্রিশ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো), মৌলভীবাজার জানায়, ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পটির সমাপ্তের সম্ভাব্য সময়সীমা ৩০ জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত। উক্ত প্রকল্পের আওতায় সর্বমোট ৭২ টি প্যাকেজ রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নদীর তীরে স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজ, চর কাটিং, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধেঁর পুনরাকৃতিকরণ ও ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। বাপাউবো, মৌলভীবাজার আরো জানায়, ইজিপির মাধ্যমে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে (ওটিএম) দরপত্র আহবান প্রক্রিয়ায় উক্ত প্যাকেজ গুলোর প্রায় সিংহভাগের ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।
সরেজমিনে জেলার রাজনগর উপজেলার মনু নদীর তীরবর্তী তারাপাশা এলাকায় গেলে দেখা যায়, একটি সিঁড়িসহ ৯৫০ মিটার দৈঘ্যের স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজের জন্য ১৯ কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৭শ ৮৯ টাকা প্রাক্কলিত মূল্যের প্যাকেজ নং এমএল-পিডবি¬উ-৪১ ও ৮১০ মিটার দৈঘ্যের স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজের জন্য ১৬ কোটি ৯১ লাখ ৮৪ হাজার ২শ ৪৪ টাকা প্রাক্কলিত মূল্যের প্যাকেজ নংঃ- এমএল-পিডবি¬উ-৪৩ এর কাজ চলমান রয়েছে। প্যাকেজ দুটির কাজ মেসার্স হাসান এন্ড ব্রাদার্স-এসএস ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রকশন লিঃ (জেবি) নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের ভোলানগর-মিঠিপুর ও একই ইউনিয়নের খাস প্রেমনগর এলাকায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
রাজনগর উপজেলাধীন তারাপাশা এলাকায় উপর্যুক্ত প্যাকেজ দুটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, ৩টি ভিন্ন সাইজের সিসি ব্লক প্রস্তুতকরণের কাজ চলমান রয়েছে। সিসি ব্লকগুলো বিশাল এক মাঠে সারিবদ্ধভাবে (স্টোক করে) সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রত্যেকটা ব্লকে খোঁদাই করে প্যাকেজ নাম্বার, ব্লক কাস্টিং এর ক্রম সংখ্যা, কাস্টিং এর তারিখ লেখা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাপাউবো, মৌলভীবাজারের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ রাখিল রায়হান জানান, প্রতিটি ব্লকে প্যাকেজ নাম্বার, ব্লক কাস্টিং এর ক্রম সংখ্যা ও কাস্টিং এর তারিখ খোঁদাই করে লেখা থাকার দরুন প্রতিটি ব্লকের আলাদা আলাদা পরিচয় তৈরি হয়, ফলে একটি ব্লকে একের অধিক গণনার ও গ্রহণ করার সুযোগ নেই বিধায় শত ভাগ সচ্ছতা নিশ্চিত হয়। তাছাড়া বাপাউবো’র টাস্কফোর্স কর্তৃক ডিজাইন ও স্প্যাসিফিকেশন অনুযায়ী গুণগত মান যাচাইয়ান্তে ব্লক গণনার মাধ্যমে ব্লকের সংখ্যা চুড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। আরো জানা যায় সিসি ব্লকের উপাদান সমূহ হচ্ছে ১.৫ এফএম এর সিলেট সেন্ট, সিমেন্ট ও ৪০ এমএম থেকে ৫ এমএম সাইজের স্টোন চিপ্স। ৩ ধরণের ব্লকের মধ্যে ৩০৩০৩০ ঘন সেঃ মিঃ, ৪০৪০৪০ ঘন সেঃ মিঃ আকারের ব্লকগুলো ডিজাইন ও স্প্যাসিফিকেশন অনুযায়ী নদীতে ডাম্পিং করা হয়। আর ৪০৪০২০ ঘন সেঃ মিঃ সাইজের ব্লকগুলো নদীর পাড় বাধাঁই করার জন্য অর্থাৎ ব্লক প্লেসিং এর কাজে ব্যবহৃত হবে যা পানির উপর দৃশ্যমান থাকবে।
বাপাউবো, মৌলভীবাজার জানান, বাপাউবো’র টাস্কফোর্স কর্তৃক ডিজাইন ও স্প্যাসিফিকেশন অনুযায়ী গুণগত মান নিরীক্ষান্তে প্রকল্পে ব্যাবহৃত ব্লক ও জিও-ব্যাগ গণনা করা হয় ও চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। এই সময় ত্রুটি-বিচ্যুতিপূর্ণ জিও-ব্যাগ বা ব্লক সমূহ টাস্কফোর্স কর্তৃক বাতিল করা হয়ে থাকে। তাছাড়া, টাস্কফোর্স কর্তৃক গণনার জন্য কাউন্টিং শিট পাঠানোর পূর্বেই মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের কর্তৃক তদারকি করার সময় ত্রুটি-বিচ্যুতিপূর্ণ ব্লক ও জিও-ব্যাগ বাতিল করা হয়ে থাকে। ত্রুটিপূর্ণ জিও-ব্যাগ সমূহ (ছেড়া-ফাটা-আগুনে পুড়া) রং লাগিয়ে বাতিল করা হয়, যাতে পুনরায় প্রকল্পের কাজে ব্যাবহার করার সুযোগ না থাকে। গণনাকৃত জিও-ব্যাগ বা ব্লক হতে টাস্কফোর্স কর্তৃক দৈবক্রমে জিও-ব্যাগের সেম্পল ও নমুনা ব্লক বাছাই করে বুয়েট-সহ স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের ল্যাবে টেস্ট করা হয়। ল্যাব টেস্টে স্প্যাসিফিকেশন অনুযায়ী মান না পাওয়া গেলে টাস্কফোর্সের গাইডলাইন অনুযায়ী ব্লক বা জিও-ব্যাগের সংখ্যা বাতিল করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধাপে প্রকল্পে ব্যাবহৃত জিও-ব্যাগ ও ব্লকের ডিজাইন ও স্প্যাসিফিকেশন অনুযায়ী গুণগত ও পরিমানগত মান যাচাই করা হয়ে থাকে বিধায় কাজের মান ও স্বচ্ছতা শত ভাগ নিশ্চিত হয়ে থাকে।
এদিকে এতো পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ঠিককাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে কাজে ঠকানোর সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান শুক্রবার বিকেলে জানান, ব্লক গণনার পর টাস্কফোর্র্স দু-একটি ব্লক ঢাকার ল্যাবে নিয়ে যায়। এতে মান ভালো নয় এমনটা ধরা পড়লে ঠিকাদারের হিসেব থেকে টাকা কেটে নেয়া হয়। তাছাড়া লাল কালি যুক্ত ব্লক সরিয়ে ফেলা হয়।
মন্তব্য করুন