মৌলভীবাজার শহরের ফুটপাত ও রাস্তা ঘিরে অবৈধ দখল বাণিজ্য

মো: আব্দুল কাইয়ুম : প্রবাসী আর পর্যটন অধ্যুসিত জেলা শহর মৌলভীবাজার নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর হিসেবে দেশজুড়ে পরিচিত। ১০.৩৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ-গ্রেড এর এই শহরটিতে ফুটপাত রয়েছে ৬.৫০ কিলোমিটার। আর জনসংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক মানুষের কাছাকাছি। প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে জেলার ৭ উপজেলা সহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগমন ঘটে বিভিন্ন পেশার মানুষের। ফলে শহরের বেশিরভাগ সড়কের পাশের ফুটপাতগুলো দখলে থাকায় এসব ফুটপাত ব্যবহার করতে পারছেননা পথচারীরা।
শহরের প্রধান সড়কগুলোর দু‘পাশের ফুটপাতের সিংহভাগই দখল করে চলছে অবৈধ বাণিজ্য। ভবন কিংবা মার্কেট মালিকরাও নিজেদের মালিকানায় থাকার কারণে অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে সেখানে ছোট-খাটো অস্থায়ী দোকান ভাড়া দিয়ে পকেট ভারি করছেন বলে জানা গেছে। এমন দৃশ্য শহরের পশ্চিমবাজার, পুরাতন হাসপাতাল সড়ক, সাইফুর রহমান সড়ক, আদালত সড়ক, শমসেরনগর সড়ক, টিসি মার্কেট এলাকা, কুসুমভাগ, বেড়ীরপার, সদর হাসপাতাল এলাকা ও শ্রীমঙ্গল সড়ক সহ শহরের প্রাণকেন্দ্রগুলোতে অহরহ চোখে পড়ছে।
পথচারী চলাচলের বৈধ ফুটপাতটি অবৈধ দখলের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় পথচারীদের। মাসের পর মাস জুড়ে শহরের বেশিরভাগ ফুটপাত দখলের কারণে সড়কগুলোতে যানজট লেগেই আছে। বিষয়টি নিয়ে যাদের মাথা ব্যথা থাকার কথা সেই পৌর কর্তৃপক্ষও নীর্বিকার। বরং অবৈধ ফুটপাত দখলকারীদেও উচ্ছেদ না করে প্রতিদিন পৌরসভার নামেই আদায় হচ্ছে অর্থ। নামে মাত্র রসিদ দিয়ে রাস্তার উপড় দাঁড়িয়ে থাকা ভ্যান থেকে আদায় করা হচ্ছে টাকা।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, শহরের কুসুমভাগ পয়েন্ট থেকে পেট্রোলপাম্প এলাকার ঢাকা-সিলেট সড়কের পাশের ফুটপাত দখল করে শতশত ব্যাটারি চালিত ভ্যান গাড়ির উপর বসেছে ফল,শাক-সবজি,বিস্কুট,কাপড় সহ অস্থায়ী নানা পণ্যের দোকান। এসব দোকানে দিনের বেলা বেচাকেনা কমবেশি হলেও সন্ধ্যার পর থেকে বিক্রি বাড়তে থাকে। পাশাপাশি ভিড় জমে ক্রেতাদেরও। ফলে এসব ফুটপাত দিনরাত সমানতালে অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের দখলে থাকার কারনে পথচারীদের চলাচল কষ্টস্বাধ্য হয়ে উঠে। নানা প্রয়োজনে শহরে আসা লোকজন বাধ্য হয়ে ফুটপাত ছেড়ে মুল সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। অবৈধ এমন কাণ্ড দীর্ঘদিন চলার কারণে তা একরকম নিয়মে পরিচালিত হয়ে আসছে। শুধু অস্থায়ী দোকানপাটই নয়, ওই সড়কের বড় একটি অংশ স্থানীয় সিএনজি স্ট্যান্ডেরও দখলে। সেখানে সারি সারি করে রাখা অসংখ্য সিএনজি অটো রিকশা। এর কারণে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই সড়কে যানজট আর দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষদের।
সূত্রে জানা যায়, শহরের কুসুমভাগ এলাকার ঢাকা-সিলেট সড়কের দু‘পাশের রাস্তার ফুটপাত এবং মূল সড়কের একাংশ দখল গড়ে সেখানে ভ্যান গাড়ির উপর নিয়মিত বসছে কাপড়,বিস্কুট,শাক-সবজি, ফলমূল সহ নানা দ্রব্যের ভ্রাম্যমান দোকান। এমন কী সেখানে রাতের বেলা বসে অস্থায়ী মাছের হাটও। সব মিলিয়ে শুধুমাত্র কুসুমভাগ এলাকায়ই বসে অন্তত দুইশতাধিক ভ্রাম্যমান দোকান। এসব ভ্রাম্যমান দোকান থেকে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার সাপ্তাহে দুদিন পৌর কর্তৃপক্ষ নাজমুল ইসলাম নামে তাদের এক প্রতিনিধির মাধ্যমে দোকান প্রতি ১৫০ থেকে ২শত টাকা পর্যন্ত অর্থ আদায় করে থাকেন।
সূত্রে আরও জানা যায়, সাবেক মেয়র ফজলুর রহমান এর সময়কাল থেকেই এভাবে টাকা উত্তোলন হয়ে আসছে। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী ফেসিবাদের পতন হলে কিছু দিন অর্থ আদায় বন্ধ ছিলো। তবে ফের গত বছরের সেপ্টম্বর থেকে আবার শুরু হয় ফুটপাতের অবৈধ দোকান থেকে টাকা আদায়। যা বর্তমানেও চলমান রয়েছে। টাকা আদায়ের দ্বায়িত্বে থাকা পৌরসভার প্রতিনিধি নাজমুল ইসলাম নিজেই জানিয়েছেন শুধুমাত্র নভেম্বর মাসে কুসুমভাগ এলাকার ফুটপাত থেকে আদায় করা হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। তবে পৌরসভার দ্বায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা অর্থ উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, উত্তোলিত অর্থ পৌরসভার রাজস্ব খাতে জমা হয়।
শহরের কুসুমভাগ এলাকার পেট্রোল পাম্পের সামনের সড়কের উপর দীর্ঘদিন যাবত ভ্যানের উপর ফল বিক্রি করে আসছেন জালাল মিয়া নামে এক ফল বিক্রেতা। জানতে চাইলে তিনি জানান, সাপ্তাহে দুইদিন ২শত টাকা করে রসিদের মাধ্যমে পৌরসভার প্রতিনিধি টাকা নিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, এই সড়কের ফুটপাতে যারাই ব্যবসায় করছেন তাদের সবাইকেই টাকা দিতে হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বুলবুল আহমেদ জানান, ফুটপাত থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। তিনি আরও,জানান, জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে শহরের ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন