মৌলভীবাজার হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রম উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি
স্টাফ রিপোর্টার : অবিলম্বে নিম্নতম মজুরি ঘোষণা এবং নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র, ৮ ঘণ্টা কাজ ও সাপ্তাহিক ছুটি কার্যকরসহ শ্রমআইনের বিধি-বিধান বাস্তবায়নের দাবিতে মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শ্রম উপদেষ্টা ববাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
২০ নভেম্বর দুপুর ১২ টায় জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক মো: শাহিন মিয়া স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে প্রদান করা হয়। জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো: শাহিন মিয়ার নেতৃত্বে হোটেল শ্রমিক নেতৃবৃন্দের নিকট হতে জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন স্মারকলিপিটি গ্রহণ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস প্রদান করেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন হোটেল শ্রমিকনেতা বিজয় দেবনাথ, আল আমিন ও জ্যোতিষ সরকার। স্মারকলিপির অনুলিপি শ্রম সচিব, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রমদপ্তরের উপপরিচালক ও উপমহাপরিদর্শক বরাবর পেশ করা হয়েছে। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় বর্তমান দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্দ্ধগতিতে দেশের নিম্ন আয়ের জনগণের মতো হোটেল-রেস্টুরেন্টে কর্মরত শ্রমিকরাও নিদারুন কষ্টের সাথে দিনাতিপাত করছেন। হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিকরা যেমন দেশের প্রচলিত শ্রমআইনের তোয়াক্কা করেন না, তেমনি অতীতের সরকারগুলোর মতো বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারও শ্রমআইন বাস্তবায়নে কাযকর ব্যবস্থা না নিয়ে মালিকদের স্বার্থ করে চলেছে। শ্রমআইনে প্রতি ৫ বছর অন্তর নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠনের বাধ্যবাধকতার বিধান থাকলেও হোটেল সেক্টরে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১ মার্চ নিম্নতম মজুরি ঘোষণার প্রায় ৮ বছর পর ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে বিগত স্বৈরাচারী সরকার দলীয় বিবেচনায় শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি মনোনীত করে মজুরি বোর্ড গঠন করে। ৫ আগষ্ট ২০২৪ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তবর্তী সরকার বিগত সরকারের আমলের বিচারপতি, সচিব, আইজিপি, ডিআইজি, ডিসি, এসপি, ইউওনসহ বিগত সরকারের নিয়োগপ্রাপ্তদের ব্যাপকভাবে বদলী, ওএসডি, বরখাস্ত করা হয়। কিন্ত হোটেল সেক্টরে নিম্নতম মজুরি বোর্ডে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিকে প্রত্যাহার করে মজুরি বোর্ড পুণঃগঠন করার জন্য শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও তা বিবেচনা করা হয়নি। আবার শ্রমআইনে বোর্ড গঠনের ৬ মাসের মধ্যে নিম্নতম মজুরি হারের সুপারিশ প্রণয়নের বিধান থাকলেও বর্তমান মজুরি বোর্ডের মেয়াদকাল ১০ মাসের বেশি অতিবাহিত হলেও মজুরি হারের সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়নি। এভাবে সময়ক্ষেপন করে আরও একটি মজুরি বোর্ডের মেয়াদকাল অতিক্রান্ত করে শ্রমিকদের ঠকানোর অপকৌশল চলছে। অথচ অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যথাযথ মাধ্যমে লিখিতভাবে যেকোন অভাব অভিযোগ জানালে তা সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেছেন। তাই অনতিবিলম্বে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ৬ সদস্যের পরিবারের ভরনপোষণের খরচ হিসেব করে নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করার জোর দাবি জানানো হয়।
এছাড়াও বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬ এর ৫ ধারা অনুযায়ী সকল হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র ও নিয়োগপত্র প্রদান, ১০৩ ধারা অনুযায়ী সকল হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিককে সাপ্তাহিক দেড় দিন ছুটি প্রদান, ১০০ ধারা অনুযায়ী সকল হোটেল-রেস্টুরেন্টে দৈনিক ৮ ঘন্টা কর্মদিবস এবং ১০৮ ধারা অনুযায়ী অতিরিক্ত কাজে দ্বিগুণ মজুরি প্রদান, (২ক) ধারা অনুযায়ী সকল হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিককে প্রতিবছর দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবে উৎসব ভাতা প্রদান এবং ১১৮ ধারা অনুযায়ী বছরে ১১ দিন উৎসব ছুটি প্রদান, ১১৫ ধারা অনুযায়ী সকল হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিককে বছরে ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি, ১১৬ ধারা অনুয়াযী ১৪ দিন অসুস্থ্যতা ছুটি এবং ১১৭ ধারা অনুযায়ী প্রতি ১৮ দিন কাজে ১ দিন বার্ষিক ছুটি প্রদানের প্রেক্ষিতে শ্রম উপদেষ্টার কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
মন্তব্য করুন