মৌলভীবাজার হয়ে ত্রিপুরায় ভারতীয় জ্বালানি পরিবহন শুরু হচ্ছে আজ

August 31, 2016,

বিশেষ প্রতিনিধি॥ ভারতের মেঘালয় থেকে বাংলাদেশের ভিতরে সড়ক ব্যবহার করে তামাবিল স্থলবন্দর ও চাতলাপুর স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরার কৈলাশহরে ভারতের জ্বালানি পরিবহন শুরু হচ্ছে ৩১ আগস্ট বুধবার থেকে। এতে দেশী-বিদেশী ভারি যানবাহনের চাপ বেড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে মৌলভীবাজার জেলার দীর্ঘ সড়কপথ। এমন আশংকা করছেন মৌলভীবাজার জেলা সড়ক পরিবহন মালিক ঐক্য পরিষদের নেতারা।
সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর হয়ে প্রতিদিন (দিনের বেলা) বাংলাদেশে প্রবেশ করে তামাবিল-সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ-রাজনগর-মৌলভীবাজার-শমসেরনগর-চাতলাপুর স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের কৈলাশহরে যাবে ভারতের জ্বালানি তেলবাহি ট্যাংক-লরি। তারা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৮০টি লরিতে জ্বালানি পরিবহন করবে ভারত। সমান সংখ্যক খালি লরি একই দিনে নির্ধারিত সড়ক ব্যবহার করে আসামে ফেরত যেতে পারবে। এতে ভারতকে বাংলাদেশের ১৪০ কিলোমিটার সড়ক ব্যবহার করতে হবে। এই সড়ক ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছ থেকে টন প্রতি মাত্র ১৪২ দশমিক ৮০ টাকা মাশুল পাবে বাংলাদেশ। ভারি যানবাহনের চাপ বেড়ে সড়কগুলো দেবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এমন শংকায় আছেন স্থানীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সংশ্লিষ্টরা।
ভারী বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধসে ভারতের আসাম থেকে ত্রিপুরা সড়ক (এনএইচ ৪৪) যোগাযোগ অনুপযোগী হয়ে পড়ায় মানবিক কারণে প্রতিবেশী দেশের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে জ্বালানি পরিবহনে (ট্রানশিপমেন্ট) ভূখন্ড ব্যবহারের সাময়িক ওই সুযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ। দিল্লির অনুরোধে সাড়া দিয়ে ১৮ আগষ্ট বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়েছে। উক্ত সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে সাক্ষর করেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং ভারতের পক্ষে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক। সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক মতে, মেঘালয়ের ডাউকি (তামাবিল-জাফলং) সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে ডিজেল, কেরোসিন, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসসহ জ্বালানি বাহী ভারতীয় লরিগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। সিলেট শহরের পূর্ব প্রান্তের শাহপরান বাইপাস সড়ক দিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ-রাজনগর সড়ক ধরে মৌলভীবাজার শহরের মধ্যদিয়ে লরিগুলো মৌলভীবাজার-শমসেরনগর-চাতলাপুর সড়ক হয়ে কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যর কৈলাশহর পৌঁছাবে। ট্রানশিপমেন্টের জন্য নির্ধারিত প্রায় ১৪০ কিলোমিটার ওই সড়ক ব্যবহারের জন্য প্রতি কিলোমিটারে প্রতিটন ১ টাকা ২ পয়সা হারে বাংলাদেশকে মাশুল দেবে ভারত। স্বাক্ষরিত হওয়া সমঝোতার চুক্তির প্রাথমিক মেয়াদ চলতি বছরের ১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত ধার্য করা হয়। এটি বাড়ানোর প্রয়োজন হলে নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক সপ্তাহ আগে এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ফের আলোচনা হবে। উভয়ে সম্মত হলে মেয়াদ বাড়াতে কোনো বাধা থাকবে না। খুব শিগগিরই জ্বালানি পরিবহন শুরু হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন। ভারতীয় জ্বালানি পরিবহনে ব্যবহৃত লরির ড্রাইভার ও সহযোগীরা পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে এবং এখানে অবস্থানকালে তারা দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন। যাত্রার আগেই তাদের প্রত্যেকের পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ইন্স্যুরেন্সের কাগজ, র”ট পারমিট, গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজ জমা দিতে হবে। যেহেতু লরিতে জ্বালানি সরবরাহ করা হবে, ফলে এখানে বাংলাদেশের এক্সপ্লসিভ আইন প্রযোজ্য হবে। যাত্রা কিংবা ফেরার পথে লরি সংশ্লিষ্টরা সর্বোচ্চ দু’বার যে কোনো জায়গায় বিশ্রাম নিতে পারবেন। এছাড়া, জর”রি প্রয়োজনে ওয়ার্কশপে গাড়ি মেরামত করতেও পারবে।
উল্লেখ্য, এর আগে কলকাতা থেকে ত্রিপুরায় ৩৫ হাজার টন চাল পাঠানোর জন্য মানবিক কারণে বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। নেপালে ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশকেও ভূখন্ড ব্যবহার করে ত্রাণ সাহায্য পাঠানোর সুযোগ দিয়েছিল ভারত।
মৌলভীবাজারের পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা বলছেন- সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ-মৌলভীবাজার-চাতলাপুর সড়ক মজবুত মহাসড়ক হিসেবে গড়ে উঠেনি। তারা বলেন-এত বেশি চাপ বহনে সক্ষম নয় উক্ত সড়কগুলো। প্রতিবেশী দেশের ভারি যানবাহন চলাচল শুর” হলে এই সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হবে। উদাহরণ হিসেবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলেন-সম্প্রতি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শেরপুরে কুশিয়ারা সেতুতে ত্রুটি দেখা দিলে সংস্কার কাজের জন্য শায়েস্থাগঞ্জ-শেরপুর বাইপাস সড়কে যানচলাচল ১১দিন যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পাশাপশি শায়েস্থাগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়। এসময় মৌলভীবাজার শহরের উপর দিয়ে মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট সড়কে যান চলাচল করে। এতে এ সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। অতি অল্প সময়ে এসব সড়কের বিভিন্ন স্থান দেবে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়, যা এখনও পুরোপুরি মেরামত করা হয়নি। এখন ভারতীয় জালানি তেলবাহি লরি চলাচল করলে সড়কগুলো আরও বেশি ক্ষতির আশংকা করছেন তারা।
তামাবিল সীমান্ত চেকপোস্ট থেকে চাতলাপুর সীমান্ত চেকপোস্ট পর্যন্ত সড়কের অবকাঠামোর বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার সড়কও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত বলেন-জ্বালানি পরিবহনের জন্য নির্ধারিত ওই সড়কের বেশির ভাগই হাইওয়ের মধ্যে পড়েছে। সেখানে লরি বা ভারী যানচলাচলে কোনো অসুবিধা নেই। তবে মৌলভীবাজার শহরের চৌমুহনা থেকে কমলগঞ্জের শমসেরনগর হয়ে কুলাউড়ার চাতলাপুর ৩৪ কিলোমিটার সড়ক হাইওয়ে না হলেও অবকাঠামো মজবুত রয়েছে। ওই সড়ক ব্যবহার করে চাতলাপুর চেকপোস্ট দিয়ে প্রাণসহ বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য ভারতে এক্সপোর্ট করে। তাছাড়া, তেলের লরিতে পাথরের মতো ওজন হয় না। এরপরও লরি চলাচল শুর” পর প্রয়োজন হলে সড়ক সংস্কার করা হবে বলে জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com