মৌলভীবাজার-১ আসনে ভোটার নিয়ে সংশয়

December 31, 2023,

জুড়ী প্রতিনিধি॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ বলয় ছাড়া কারো মধ্যে নির্বাচনী কোনো আমেজ নেই, উত্তাপও নেই। সাধারণ ভোটারের মধ্যে নেই কোনো আগ্রহ। নিরুত্তাপ এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো: শাহাব উদ্দিন নির্ভর হলেও নিজ বলয়ে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। নৌকার বিজয় যখন প্রায় নিশ্চিত, ঠিক তখন আতঙ্কের কারণ হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের ভোট ব্যাংক। তবে বিএনপি, জামায়াত কিংবা সাধারণ ভোটারতো দুরের কথা আওয়ামী লীগের সকল ভোটার কেন্দ্রে যাবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
জানা যায়, মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) নির্বাচনী এলাকায় ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম (নৌকা), ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইমান উদ্দিন (নৌকা), ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী এবাদুর রহমান চৌধুরী (লাঙ্গল), ১৯৯১, ১৯৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারি) ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এবাদুর রহমান চৌধুরী (ধানের শীষ), ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো: শাহাব উদ্দিন (নৌকা) এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে এবাদুর রহমান চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেও মাঝপথে তাঁকে মন্ত্রীত্ব থেকে বাদ দেয়া হয়। ২০১৪ সালে মো: শাহাব উদ্দিন এমপি হয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ-এর দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৮ সাল থেকে এখনও পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো: শাহাব উদ্দিন (নৌকা), জাতীয় পার্টি প্রার্থী আহমদ রিয়াজ উদ্দিন (লাঙল), তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (সোনালী আঁশ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ময়নুল ইসলাম (ট্রাক)।
বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ জুড়ী উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নিকাহ রেজিস্ট্রার মুফতী মোহাম্মদ ময়নুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। অনেকেই বলছেন তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে নির্বাচন করছেন। তবে এক ভিডিও বার্তায় সে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেছেন মানবসেবা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলেম-উলামারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রার্থী হয়েছেন।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জুড়ী উপজেলা ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা থেকে সর্বশেষ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তার প্রতি দলের অবিচার ও অবমূল্যায়নের ফলে গত ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করে তৃণমূল বিএনপিতে যোদ দেন এবং এ আসনে উক্ত দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। যদিও যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল তাকে বহিস্কার করে। তার অনুগত কিছু কর্মী ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
কাতার প্রবাসী আহমদ রিয়াজ উদ্দিন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা জাতীয় পার্টির উল্লেখ যোগ্য কোনো নেতাকর্মীকে এখনও তার পক্ষে মাঠে দেখা না গেলেও তার নির্বাচনী সভায় মানুষের ঢল নামে। আঞ্চলিক ভাষায় তার হাস্যরসাত্বক বক্তব্য দর্শক শ্রোতাকে আমোদিত করে। বিভিন্ন কৌশলী বক্তব্যে বিএনপি-জামায়াতের ভোটারদের ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবার আহ্বান জানান। তার ধারণা বিএনপি-জামায়াতের ভোটার ভোট দিতে গেলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।
মো: শাহাব উদ্দিন বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের সভাপতি ও মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি। এ নিয়ে ৬ বার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি বিজয়ী হওয়াটা প্রায় নিশ্চিত বলে তাঁর অনুসারীরা মনে করেন। এখানে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী না থাকায়, দলীয় বিদ্রোহী কোনো প্রার্থী না থাকায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তৃণমূল বিএনপি প্রার্থীর মাঠে তেমন কোনো পরিচিতি বা প্রভাব না থাকায় মো: শাহাব উদ্দিন নির্ভার।
মাঠের বিরোধী দল বিহীন এ নির্বাচনে শতভাগ স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভোট হলে নৌকা জিতবে- এমন পরিস্থিতিতে তার বলয়ে অজানা একটি ভয় কাজ করছে বলে অনেকে জানান। তবে চা বাগান অধ্যুষিত এ এলাকায় চুড়ান্ত ভাবে বিজয়ী হতে পারবেন কি না সে জন্য ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com