মৌসুমী ফল, শাকসবজি:পুষ্টিমানে সমৃদ্ধ

July 14, 2018,

আফতাব চৌধুরী॥ শরীর ও মন যে কোনও একটির পক্ষে উপকারী ও অন্যের পক্ষে নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত খাদ্যকে রাজসিক আহার বলে। যে সব খাদ্য সাত্তি¦ক ও তামসিক নয় এরূপ খাদ্যই রাজসিক পর্যায়ভুক্ত। শরীর ও মনের মধ্যে যে কোনও একটির পক্ষে ক্ষতিকারক ও অন্যটির পক্ষে ক্ষতিকারক হতেও পারে, নাও হতে পারে – এরূপ আহার্য তামসিক। বাসি, পচাদ্রব্য, গো- মহিষাদি বৃহৎ জন্তুর মাংস, সকল প্রকার মাদকদ্রব্য তামসিক আহার। অবশ্য অল্প পরিমাণে চা রাজসিক আহার। সকাল বেলায় রান্না করা মুসুরের ডাল অন্য বেলায় তামসিক হয়ে যায়। তাই শরীর ও মনের উন্নতি বিধানে কী খাদ্য খাওয়া উচিত আর কি- না সে বিষয়ে ধারণা থাকা উচিত।

স্মৃতিশক্তি ও মস্তিস্কের পরিপক্কতা, পরিচ্ছন্নতার জন্য সাত্তি¦ক ফল – তেঁতুল বিশেষত পুরনো তেঁতুলের গুণ অনেক বেশী। মস্তিস্কের রচনায় এর যথেষ্ট ভূমিকা আছে। অতিরিক্ত তেঁতুল ভক্ষণে রক্তদুষ্টি হতে পারে। পুরাতন তেঁতুলের চাটনি, বিশেষকরে পাকা কলার সঙ্গে পুরাতন তেঁতুলের চাটনি ব্যবহার করলে আমাশয় রোগে বেশ সুফল পাওয়া যায়। পুরাতন তেঁতুল সামান্য বিটলবণ সঙ্গে ঈক্ষুগুড় হলেই ভাল- এর অভাবে সামান্য চিনি সহকারে চাটনি খাবার শেষে দুপুরে সপ্তাহে দুদিন খেলে মস্তিস্ক রচনায় যথেষ্ট সহায়ক হয়। হাঁপানি রোগে, আমাশয়ে পুরনো তেঁতুল ওষুধের কাজ করে। তবে সপ্তাহে একদিনের বেশী গ্রহণ করা উচিত নয়।

চালকুমড়ো: স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ও লিভারের পক্ষে বেশি সাহায্য করে।

লাউ: স্মৃতিশক্তির সঙ্গে স্নায়ুকোষ, স্নায়ুতন্ত্র ও লিভার, কিডনির পক্ষে শুভফলপ্রদ, ঘটি লাউ বেশি ফলদায়ক।

কলমী শাক: এ শাক স্মৃতিশক্তি ও স্নায়ুশক্তি বৃদ্ধিতে খুবই সহায়ক। যারা মস্তিস্কের কাজ বেশী করে তাদের পক্ষে জলের কলমী শাক ভাল ডাঙ্গার কলমী অভক্ষ্য ব্রাহ্মী ও তারই প্রজাতি বিশেষ থানকুনি প্রভৃতি শাকেরা পুষ্টি বিধায়ক, স্মরণশক্তিবর্ধক ও শুক্ররোগের ওষুধ। ব্রহ্মীঘৃত পরীক্ষার্থীদের বিশেষ সহায়ক।

গিমাশাক: লিভারে অসুখ, রক্তপরিস্কার, স্নায়ুর পক্ষে ও স্মৃতিশক্তির পক্ষে ভাল। পরিমিত পরিমাণে খেলে পেটের উপকার হয়। লোহাসমৃদ্ধ এ শাকটি রন্ধনকালে কম তেল ব্যবহার করা ভাল। এর স্থান শীর্ষদেশে ব্রাহ্মীর কাছাকাছি। গীমাশাকের ফুল ভাতের সঙ্গে প্রথম পাতে খেলে মস্তিস্কের পক্ষে ভাল। ভূমিকু¤মান্ড- স্নায়ু দৌর্বল্য, হাত পা থরথর করে কাঁপা, বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা, স্মৃতিশক্তির হ্রাস ও শুক্রঘটিত ব্যাধিতে ভূমিকু¤মান্ড মহৌষধ। উচ্ছে – স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সপ্তাহে দুদিন প্রথম পাতে খেতে হয়। শাক শক্তি যোগায়। আবার শাক মানে কেবল যে শাক, তা-ই নয়, সব রকমের শাকসবজিই। ইংরেজিতে ভেজেটেবল বলতে সবরকমের শাকসব্জিকে বোঝায়।

ফল: কাঁচা-পাকা যে কোনও রকমের ফল শরীরের পক্ষে ভাল। কারণ ফল নিজের রসে নিজে জীর্ণ হয়। হজমের জন্যে যকৃতের সাহায্য বেশী নিতে হয় না। অথচ ফল শক্তির যোগান দেয় যথেষ্ট।

নারকেল: পুষ্টিকর ও অম-নাশক যা পেটকে ঠান্ডা রাখে ও পটাসিয়াম ডাবে রয়েছে যা অনেক খাদ্যে নেই।

কলা: একটি পুষ্টিকর খাদ্য। তাছাড়া পালাঞ্জুর লিভার, অগ্নাশয়, কিডনি এ তিনের ভাল কাজ করে। আমাশয়, মৃতবৎসা, কিংবা সন্তান জšে§র পর মাতার মৃত্যু হলে মজাকলা যে কলার খোলাটা কালচে হয়ে গেছে মাতৃদুগ্ধের সমান। প্রাতঃ রাশের প্রথমেই কলা অথবা পাকা পেঁপে খেলে অম-দোষ দূরীভূত হয়। কাঁটালি কলা সর্বোৎকৃষ্ট। মজা চাঁপা কলার অম-দোষ দূরীভূত করার জন্যে সামান্য লবণ সহকারে মজা কলা খেতে হয়। মনের উপর এ কলার প্রভাব রয়েছে। হƒদরোগীদের সন্ধ্যার পর কলা না খাওয়াই ভাল।

শশা: শশা সব সময় অল্প পরিমাণ মুড়ির সঙ্গে খেতে হয়। শশার গুণ ‘সকালে হীরা, দুপুরে ক্ষীরা, রাতে পীড়া’।

মৌসম্বী (সরবতী লেবু) : পেট ঠান্ডা রাখে। মৌসম্বী বেদানা ও ডালিমের রস রক্তবর্ধক সোজাসুজিভাবে রক্তে রূপান্তরিত হয়।

কমলা (লেবুবর্গীয়): ১টা মিষ্টি কমলা, ১০/১২ টা চন্দন তুলসি পাতার রস ও পরিমাণ মত (২/৩চামচ) মধু সহ খেলে (সকাল-সন্ধ্যায় ও শোবার পূর্বে) দূরারোগ্য এনিমিয়া রোগে অব্যর্থ ওষুধ।

আম : ফলের মধ্যে আমের স্থান শীর্ষে। আম-ফলটি অনেক গুণের আধার। পাকা আমের চেয়ে কাচা আমের গুণ অনেক বেশী। আমশী যকৃত (লিভার) ও প্লীহার দুয়ের পক্ষেই ভাল। আম টকই হোক আর মিষ্টিই হোক গলার নিচে নামলেই দুয়ের গুণ সমান। টক আম মধুমেহ রোগে ওষুধের কাজ করে। পাকা আম রক্তবর্ধক। বেদানা ব্যতিরেকে আর কোনও ফলই এত রক্তে যোগান দেয় না। দুপুর ১২ টার পূর্বে এক বল্কা দুধের সঙ্গে পাকা আমের রস পান করলে রোগমুক্ত মানুষ অল্প সময়েই শক্তি ফিরে পায়। অতিবৃদ্ধ ছাড়া সকল বয়সের মানুষ – বিশেষ করে অল্প বয়সী যুবক এ আম্রদুগ্ধ পান করে প্রভৃত শক্তির অধিকারী হতে পারে। এটি কিন্তু উষক্সবীর্য। তাই পেট যার খুব ভাল নয় তার পক্ষে আম্রদুগ্ধ পান না করাই উচিত। ক্যালসিয়াম যথেষ্ট পরিমাণে থাকায় পেট ভাল থাকলে যক্ষারোগী আম্রদুগ্ধ পান করলে বিশেষভাবে উপকৃত হবে। অতিমাত্রায় পান করলে মধুমেহ রোগের সৃষ্টি করে ও রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্যথায় শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোটিক সৃষ্টি হতে পারে।

জাম : সর্ব গুণাধার। কিছুটা কষ থাকায় তা মধুমেহ রোগের প্রতিষেধক। জামের অস্থির অন্তর্গত সারসত্তাতেও রয়েছে মধুমেহ প্রতিষেধক। জামের ভিতরের অংশ মধুমেহের ওষুধ। সাংবাদিককলামিস্ট।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com