ময়লার গাড়ী আটকিয়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে প্রতিবাদ

July 31, 2017,

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ শ্রীমঙ্গলের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্টান এর সম্মুখে অবস্থিত পৌরসভার ময়লা আর্বজনা ফেলার ভাগাড়টি স্থানান্তরের দাবীতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন আন্দোলন করে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। দেশের প্রথম সারির পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় একাধিক বার প্রকাশ ও প্রচারিত হচ্ছে এই আর্বজনার স্তুপ এর ক্ষতিকর বর্ণনা। তবুও যেন টনক নড়ছেনা কর্তৃপক্ষের।
শ্রীমঙ্গলের সুনামধন্য শিক্ষা কেন্দ্র, শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজে, দি বার্ডস রেসিডেন্সিয়্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসার সামনে অবস্থিত এই ময়লার ভাগারটি সরানোর দাবীতে আবারো প্রতিবাদে নেমেছে সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীরা ।


শ্রীমঙ্গল কলেজ রোডস্থ ময়লার ভাগাড়ে ময়লার গাড়ী আটকিয়ে দিয়ে সেখানে বাঁশ বেড়া দিয়ে প্রতিবাদ জানায়েছিলেন এলাকাবাসীসহ আন্দোলনরত সহ¯্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী, সচেতন নাগরিক এবং অভিভাবকরা।
সোমবার ৩১ জুলাই সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজে, দি বার্ডস রেসিডেন্সিয়্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসার হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী প্লেকার্ড, ফেস্টুন হাতে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
প্রতিবাদরত শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্টদের কাছে আমাদের দাবি জানিয়ে আসছি। মানববন্ধন, মতবিনিময়সহ বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছি। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি বাস্তবায়নেরও আশ্বাস আমাদেরকে দিয়েছিলেন।
২৬ জুলাই সকাল সাড়ে এগারোটায় শ্রীমঙ্গল ইউএনও এর কার্যালয়ে শ্রীমঙ্গল কলেজ রোডের বাসিন্দাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দের সাথে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোবাশশের”ল ইসলাম জানিয়েছিলেন-গাউছিয়া মাদরাসার সামনে থেকে সরিয়ে অধিগ্রহণকৃত নতুনস্থানে স্থানান্তর করা হবে।
এসময় তিনি আরো বলেছিলেন-ইতোমধ্যে পৌরসভার জন্য সরকারীভাবে ময়লা ফেলার জমি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা হয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষকে বলা হবে নতুন স্থানেই কাজ শুর” করতে। প্রয়োজনে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ডিপ্লয়েড করে কাজ করা হবে। কেউ বাঁধা দিতে আসলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিশ্বজিত কুমার পাল, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব সাধারণ স¤পাদক এম ইদ্রিস আলী, শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের সম্মুখ হতে ময়লার ডিপো অপসারণ আন্দোলন কমিটির সভাপতি মো. নুর”ল ইসলাম চৌধুরী, পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক স¤পাদক মো: তহির”ল ইসলাম মিলন, প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তারা বলেন, পৌর সভায় ময়লার ডিপোর পাশে বেশ কয়েকটি সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা, মসজিদসহ আবাসিক এলাকা রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার শিক্ষক প্রতিনিয়ত উৎকট দুর্গন্ধের মধ্যে পাঠদানরত। মাঝে মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীদের ময়লার দুর্গন্ধে অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। এহেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে বাসাবাড়ীতে স্থানীয় এলাকাবাসী দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করছেন। সেকারণে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী দীর্ঘদিন নয় বছর ধরে এই ময়লার ডিপো এখান থেকে সরানো জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়ে আসছে। এর প্রতিকার জানিয়ে জেলা, উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের একাধিকবার ম্মারকলিপি প্রদান করলেও এর কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তাই তারা বাধ্য হচ্ছেন আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে। তাই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের সামনে থেকে ময়লার ডিপো সদর ইউনিয়নের নির্ধারিত স্থানে স্থানান্তরের জন্য ইউএনওর কাছে দাবী জানান। অন্যথায় পৌরসভার ময়লা ফেলার গাড়ী বন্ধ করে দেওয়াসহ সরকারি কলেজ ও দি বাডস রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ময়লার ভাগাড় স্থানান্তরের দাবীতে কলেজের পাঠদান একযোগ বর্জন করবে বলে ইউএনওকে অবহিত করেন।


এদিকে গত শুক্রবার বিকালে কলেজ রোডস্থ জোড়া পুল প্রাঙ্গনে এলাকাবাসীদের  মতবিনিময় সভায় এক সপ্তাহের মধ্যে ময়লা ভাগাড় অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে আহবান জানান নতুবা তারা নিজেরাই ময়লার ভাগাড়ের গাড়ী আটকে দেওয়ার হুঁশিয়ারী দেন।
উল্লেখ্য শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের জেটি রোড এলাকার অধিগ্রহণ কৃত জমিতে নতুনভাবে ময়লার ভাগাড় নির্মাণের বির”দ্ধে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করলে মহামান্য হাইকোর্ট ওই জমির উপর প্রথমে স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। পরে চলতি বছরের ৮ ফেব্র”য়ারি হাইকোর্ট রিট পিটিশনটি খারিজ করে দিলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গত ১৩ ও ১৫ জুন পৌরসভা ওই জমিতে কাজ করতে গেলে বাঁধার সম্মূখীন হয়।
গত ২৬ জুলাই শ্রীমঙ্গল ইউএনও ৩০ জুলাই রবিবার পর্যন্ত সময় নিয়েছিলেন। অথচ ৩০ জুলাই পেড়িয়ে গেলেও সেখানে পৌরসভার ময়লা ফেলা চলছে আগের মতোই। তাই ৩১ জুলাই (রবিবার) সকালে কলেজ, স্কুল, মাদসার ছাত্রছাত্রীরা ময়লা ফেলার জায়গায় বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com