যথাযথ মর্যাদায় প্যারিসস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় শোক দিবস পালিত
আবুল কালাম মামুন (ফ্রান্স থেকে) ॥ ১৫ আগস্ট, যথাযথ মর্যাদায় এবং শোক ও শ্রদ্ধার মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে প্যারিসস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। মান্যবর রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে দিনের কর্মসূচী শুরু করেন। এরপর জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। মান্যবর রাষ্ট্রদূত দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন। অনুষ্ঠানের এ পর্বে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ শেষে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যসহ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫- এর অভিশপ্ত দিনে শাহাদাৎবরণকারী সকলের রূহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত এবং তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পক্ষ্য থেকে কন্সাল জেনারেল মাহবুবল আলম, পররাস্ট্র মন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন কমার্শিয়াল কাউন্সিলার মিস দিলরা বেগম, মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন প্রথম সচিব দয়াময় চক্রবর্তী,এবং জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো-এর মহাপরিচালক কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন নির্জর অধিকারী।
কোভিড-১৯ অতিমারীর প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দূতাবাসের সকল সদস্য শোক দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি একই সাথে ভার্চুয়াল মাধ্যমেও অনুষ্ঠিত হয়, অনলাইনে বক্তব্য রাখেন অল ইউরোপিয়ান আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদ মুজিবুর রহমান মুজিব, ফ্রান্স আওয়ামীলীগ এর ফ্রান্স আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম ,এ কাশেম, ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক দেলোওয়ার হোসেন কয়েছ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সভাপতি মো: জামিল মিয়া, সহ সভাপতি মো: আবুল কাশেম , সহ সভাপতি এম,এ, শহিদ তাহের, সহ সভাপতি মন্জুরুল হাসান সেলিম, ও এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সহ সভাপতি অভনি দাস গোপাল, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও এমদাদুল হক স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক আলি হোসেন, প্রচার সম্পাদক আমিন খান হাজারী , বরিশাল কমিউনিটি এসো: সভাপতি ওবায়দুল ইসলাম রিয়াদ,প্যারিস মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি,সহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ প্রবাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও গুণীজন অনলাইনে অংশগ্রহণ করেন।
দিবসটি উপলক্ষ্যে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী অতিথিবৃন্দের বঙ্গবন্ধুর জীবন ও দর্শনের উপর আলোচনা। আলোচনা পর্বে বক্তাগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রাম এবং বাঙালি জাতি গঠনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও অবদানের কথা তুলে ধরেন। আলোচকবৃন্দ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকান্ডে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের আঠারো জন শাহাদাতবরণকারী সদস্যের রূহের মাগফেরাত কামনা এবং গভীর শোক প্রকাশ করেন। বক্তাগণ এ হত্যাকান্ডের পিছনে যারা জড়িত ছিলেন তাঁদের স্বরূপ উদঘাটনের জন্য একটি কমিশন গঠনের আহবান জানান। বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ও জনমানুষের জন্য ত্যাগ ও সংগ্রামের চেতনা বুকে ধারণ করে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রবাসী বক্তাগণ।
ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব কাজী ইমতিয়াজ হোসেন তাঁর বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী, দৃঢ় ও আপোষহীন নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জন করেছে। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ এবং বাঙালি জাতি গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরেন। একটি গর্বিত জাতি স্বতন্ত্র পরিচয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর যে দুর্লভ সম্মান বাঙালি পেয়েছে, তার জন্য সমগ্র জাতি বঙ্গবন্ধুর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ- চিরঋণী, বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অভূতপূর্ব সাফল্যের নানা দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংকল্প সমগ্র দেশবাসিকে উজ্জীবিত ও দেশের উন্নয়নে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার অনুপ্রাণিত করেছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব আজ করোনা অতিমারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। কোভিড-১৯ এর মহাসংকটে সারা বিশ্বে ব্যবসা বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, অর্থনীতি আজ ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। সরকার এ ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন খাতে সরকার প্রায় ১ লক্ষ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, ২০২০ এবং ২০২১ গুরুত্বপূর্ণ দুটি বছর। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী আর ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বাঙালির জাতীয় জীবনে বিরল ঘটনা। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে করোনার ভয়াবহতা কাটিয়ে এ আয়োজনসমূহ সারা দেশের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হবে। সবশেষে, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠাই ছিল জাতির পিতার আজীবনের লালিত স্বপ্ন উল্লেখ করে তিনি জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর উপর নির্মিত দুইটি বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
মন্তব্য করুন