যথাযোগ্য মর্যাদায় বৃষ্টল সেন্ট্রাল মসজিদে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আলোচনা সভা

November 12, 2019,

খায়রুল আলম লিংকন॥ ১২ই রবিউল আওয়াল  মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিন উপলক্ষে রবিবার যথাযোগ্য মর্যাদায় বৃষ্টল সেন্ট্রাল মসজিদ এ পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে ।

বৃষ্টল সেন্ট্রাল মসজিদ এর সভাপতি আব্দুর রাজিক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ওয়াজ ফরমান মসজিদেরখতিব হাফেজ মৌলানা মুফতি মোহাম্মদ ইকরাম উদ্দীন।

সভায় ঈদ-এ মিলাদুন্নবীর প্রেক্ষপট তুলে ধরে খতিব তার বক্তব্যে বলেন ঈদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল খুশী হওয়া, ফিরেআসা, আনন্দ উৎযাপন করা ইত্যাদি। আর মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে আমরা নবীজীর আগমনকেবুঝাত।আর ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে নবীজীর আগমনে খুশী উৎযাপন করাকে বুঝায়। সুতরাং

অ-শান্তি আর বর্বরতায় ভরপুর সংঘাতময় আরবের বুকে আধারের বুক চিড়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শান্তি নিয়েএসে মানবজাতিকে সত্যের, সভ্যতা ও ন্যায়ের দিক নির্দেশনা দিয়ে গোটা বিশ্বকে শান্তিতে পরিপূর্ণ করে তুলেন। নবীজীর পবিত্রশুভাগমনে খুশী উৎযাপন করাটাই হচ্ছে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

আরবের মরুপ্রান্তরে ১ হাজার ৪৪৯ বছর আগের এই দিনে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আরব সমাজ যখন পৌত্তলিকতার অন্ধকারে ডুবে ছিল, তখন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কেসারা বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছিলেন সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ। ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন মহানবী।বিশ্ববাসীকে তিনি মুক্তি ও শান্তির পথে আসার আহ্বান জানান। সব ধরনের কুসংস্কার, গোঁড়ামি, অন্যায়, অবিচার ও দাসত্বেরশৃঙ্খল ভেঙে মানবসত্তার চিরমুক্তির বার্তা বহন করে এনেছিলেন তিনি। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দীর্ঘ ২৩ বছর এই বার্তাপ্রচার করেন। ৬৩ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।

হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছিলেন তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদের বাণী নিয়ে। নবী

ও রাসূল হিসাবে তার কাজগুলো ছিলো- সকল প্রকারের তাগুতকে নস্যাৎ করে একমাত্র স্রষ্টা-পালনকর্তা মহান আল্লাহর আনুগত্যে মানব সমাজকে পথ দেখানো এবং মানুষকে নিপীড়ন, নির্যাতন,

অন্যায় অবিচারের হাত থেকে রক্ষা করা।

হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পরশ মণির মতো। মানবতার প্রতিটি সদস্য যাবতীয় কল্যাণের পথ পেয়েছে তাঁর আগমনে ও স্পর্শে। আলোকিত জীবনের উজ্জ্বল উদাহরণ তিনি খাতামুন্নাবী। সর্বশেষ নবী তিনি। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নবী আসবেন না। তিনিই সর্বশেষ নবী হিসাবেবিশ্বমানবতার জন্য প্রতিষ্ঠিত। তিনি হায়াতুন্নবী। তিনি কিয়ামত পর্যন্ত নবী হিসাবে সমাসীন।

ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (রহঃ) তাঁর তাফসীর গ্রন্থ আদ দুররুল মুনছুর এ উল্লেখ করেন-

অর্থাৎ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন এখানে আল্লাহর অনুগ্রহ (ফাদ্বলুল্লাহ) দ্বারা ইলমেদ্বীন বুঝানো হয়েছে আর (রহমত) দ্বারা সরকারে দু’আলম নূরে মোজাচ্ছম আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তায়ালা বলেন, (ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামীন) অর্থাৎ হে হাবীব আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত করেই প্রেরণ করেছি।

(সূত্রঃ সূরা আম্বিয়া আয়াত নং- ১০৭, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে কবির ও ইমাম সূয়ূতী (রহঃ) কৃত তাফসীরই আদদুররুল মুনছুর, ৪র্থ খন্ড- ৩৬ পৃষ্ঠায় ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন)

সামান্য জাগতিক নিয়ামত লাভ করলে তজ্জন্য ঈদ উৎসব করার সরাসরি উদাহরণ আমরা পবিত্র কুরআন মাজীদে দেখতেপাই। যেমন অর্থাৎ- মরিয়ম তনয় ঈসা (আঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহ! হে আমাদের রব, আমাদের উপর আকাশ থেকে একটা খাদ্য খাঞ্চাঅবতরণ করুন যা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী সকলের জন্য ঈদ হবে এবং আপনারই নিদর্শন হবে, সুতরাং আমাদেরকেরিযিক দান করুন। আর আপনিইতো হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিক দাতা। (সূরা মায়েদা, আয়াত নং- ১১৪)।

এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে খাঞ্চাভরা খাদ্য আসলে তা যদি হযরত ঈসা (আঃ)-এর ভাষায়পূর্ব ও পরবর্তী সকলের জন্য আনন্দ, উৎসবের কারণ ও আল্লাহর নিদর্শন হয়, তাহলে সৃষ্টির মধ্যে সর্বোত্তম সত্ত্বা, রহমতেরভান্ডার, প্রিয় নবী আকাও মাওলা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার মত মহান নিয়ামতের শুভা

গমনের দিন কতইনা মর্যাদাবান, গুরুত্বপূর্ণও আনন্দের দিন বা মাস তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের বার্তাবাহকরূপে সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের দিশারী। নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পথ যা কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক শরিয়ত, তার সঠিক ও পূর্ণ অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে ইহকাল ও পরকালীন নাজাতের নিশ্চয়তা।

মাহফিলে অন্যান্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন বৃষ্টল বাংলা  প্রেসক্লাব এর সাধারণ সম্পাদক এটি এন বাংলা ইউ কে ও বাংলাদেশ প্রতিদিন এর প্রতিনিধি খায়রুল আলম লিংকন, মসজিদকমিটির সহ-সভাপতি মাসুক মিয়া, কমিউনিটি নেতা শফিকুর রহমান চৌধুরী, দিলদার মিয়া, শহীদুজ্জামান ,প্রতাপ আলী,শিহাবঊদ্দিন, মদরিছ আলী, প্রতাপ মিয়া, হাজী মকদ্দছ আলী, মেহেদী আহমদ, দিলদার মিয়া প্রমুখ.

মিলাদ মাহফিল শেষে মুসলিম উম্মাহর মঙ্গল কামনা করে বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী মাহফিল এর সমাপ্তি করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com