যশোরের এপিপি মৌলভীবাজার কারাগারে
মাহবুবুর রহমান রাহেল॥ জালিয়াতির মাধ্যমে ‘বদলি মানুষ’কে জেল খাটানোর দায়ে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) আসাদুজ্জামান বাবুলকে তিন বছরের কারাদন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০ এপ্রিল মৌলভীবাজারের বিচারিক আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই থেকে তিনি মৌলভীবাজারের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। দন্ডাদেশপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুল যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের এপিপি। তিনি আওয়ামী আইনজীবী সমিতির যুগ্ম-আহ্বায়ক।
এদিকে, সোমবার ২ মে রোববার ঘটনাটি জানাজানি হলে যশোর আদালত পাড়ায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে আইনজীবীদের একটি পক্ষ বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বড়লেখা থানার একটি হত্যা মামলায় ৩০ বছর সাজার আদেশপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি জয়নাল যশোরে এসে আত্মগোপন করেন। এ সময় তিনি মামলা সংক্রান্ত পরামর্শ নিতে যশোর আদালতের আইনজীবী আসাদুজ্জামান বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দুই হাজার টাকা পরামর্শ ফি নিয়ে বাবুল তাকে বলেন, বদলি মানুষকে দিয়ে জেল খাটানো যায়। আপনাকে জেল খাটতে হবে না। আপনার পরিবর্তে অন্য লোককে জেলে ঢুকিয়ে আপনার মামলা নিষ্পত্তি করে দেব। আসামি জয়নাল এ কাজের জন্য অ্যাডভোকেট বাবুলকে আড়াই লাখ টাকা দেন। পরে যশোর শহরের দাউদ আলী নামে এক মাদকাসক্ত রিকশা চালককে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকার বিনিময়ে ছয় মাস জেল খাটার চুক্তিতে মৌলভীবাজারে নিয়ে যান অ্যাডভোকেট বাবুল। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রিকশা চালক দাউদ আলীকে জয়নাল সাজিয়ে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের সামনে হাজির করা হয়। প্রায় তিনমাস জেল খাটার পর দাউদ আলী জানতে পারেন, একটি হত্যা মামলায় ৩০ বছর সাজার আদেশপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে তিনি বন্দি রয়েছেন। এতে তিনি ভয় পেয়ে বিষয়টি জেল সুপারকে জানিয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদন করেন। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে যশোর চলে আসেন।
এ ঘটনায় মৌলভীবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ আশরাফুজ্জামান বাদী হয়ে প্রকৃত আসামি জয়নাল ও বদলি আসামি দাউদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ তাদের আটক করে আদালতে পাঠালে তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অ্যাডভোকেট বাবুলকেও এ মামলার আসামি করা হয়। চলতি বছরের মার্চ মাসে এ মামলায় অভিযুক্ত তিনজনকেই তিন বছর করে সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেন সংশ্লিষ্ট আদালত। পরে ২০ এপ্রিল অ্যাডভোকেট বাবুল মৌলভীবাজার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
মন্তব্য করুন