যারা গুজব ছড়ায় তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু
এহসান বিন মুজাহির॥ বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষ ও এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, অর্থনীতি, গ্রামীণ ও নগর কৃষিসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে মানুষ সুফল পাচ্ছে ঠিকই; তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রযুক্তির অপব্যবহার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সহজলভ্য হওয়ায় প্রতিনিয়ত এসবের মাধ্যমে গুজব রটানো হচ্ছে। বিটিআরসি সুত্রে জানা যায়Ñবাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৯কোটি ৫ লাখ মানুষ। ৯ কোটির বড় একটি অংশ তরুণ। ১৬ কোটি মানুষের দেশে ৯ কোটি মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত থাকা অবশ্যই ইতিবাচক একটি দিক। বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকায় গুজব ছড়ানোটা আরো বেশি সহজ হয়ে উঠেছে। উন্নত দেশগুলোতেও অত্যাধুনিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু গুজব মহামারি সেই দেশগুলোতে এতটা শক্তিশালী নয়। কারণ যারা ফেসকুবে, টুইটারে, পোস্ট বা শেয়ার করছেন, তারা সঠিক তথ্য দিয়ে এবং যাচাই-বাছাই করেইশেয়ার করছেন। ঠিক বিপরীত মেরুতে আমাদের বাংলাদেশের। জাতি হিসেবে আমরা অনেকটা হুজুগে। হুজুগী হওয়ার কারণেই বারবার গুজব ও ভুয়া খবরে আক্রান্ত হচ্ছেন দেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। একটি মিথ্যা তথ্য ও গুজব রটানো শুধু ব্যক্তি বা সামাজিক বন্ধনের জন্য হুমকি নয়, বরং একটি জাতি বা রাষ্ট্রের সম্প্রীতি ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।
করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে আক্রমণ করার পর থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নিয়ে শুরু হয়েছে নানা ধরণের গুজব। আর এই গুজব ভাইরাসের চেয়ে বেশি দ্রুত ছড়াচ্ছে। করোনা ভাইরাসকে নিয়ে দেশে একের পর এক গুজবনির্ভর ঘটনা ঘটছে। কিছু দিন আগেও বাংলাদেশে গুজবনির্ভর কিছু ঘটনায় দেশে প্রাণহানীসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন মিডিয়া এবং সামাজিক মাধ্যমে সবাই দেখেছেন।
আমরা কত বড় বিপদ-শঙ্কায় রয়েছি। অথচ গুজব, গজব আর আজবের যেন শেষ নেই। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে সবাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ভূমিকা রাখছেন। যার যা মনচাচ্ছে তাই ফেসবুকে লিখে ছাড়ছেন। করোনা ভাইরাস ছড়ানোর পর কখনো শোনা গেছে নিউমোনিয়ার ওষুধ করোনার প্রতিষেধক, আবার কখনো শোনা গেছে রসুন তিল খেলে সারবে করোনা ভাইরাস, কেউ বলছেন অ্যালকোহল ব্যবহারে থাকবেনা করোনা, কেউ বলছেন মাউথ ওয়াশ করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। এগুলো আসলে গুজব। করোনা প্রতিরোধে এসবের কোনো ভূমিকা নেই বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এছাড়াও গোমূত্র পান ও থানকুনি পাতা খেলে করোনা থেকে মুক্তি, নারিকেল গাছের গোড়ায় পানি ঢালা, চিনি ছাড়া আদা দিয়ে রং চা খাওয়া, রাত ১০ টা থেকে ১টার মধ্যে মসজিদে আজান দেওয়াসহ স্বপ্নে করোনার প্রতিষেধক পাওয়ার খবরে ফেসবুক ছেয়ে যাচ্ছে। এ রকম গুজব তৈরি হচ্ছে মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য এবং অসংগত তথ্যের মিশ্রণে। আমরা কী ভুলে গিয়েছি কিছু দিন আগে ছেলেধরা গুজবে বাংলাদেশে কি কাণ্ড ঘটেছিল! মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে প্রাণ গিয়েছিল রেণু বেগমের, লবন পাওয়া যাচ্ছে না বাজারে এ রকম গুজবে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরী হয়।
ভিত্তিহীন কোনো সংবাদ প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা শুধু ইসলাী আইনে গুরুতর অপরাধ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় আইনে গুরুতর অপরাধ। ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে কোনো সংবাদ পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করে প্রচার করা। সামাজিক মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মুসলিম সমাজের উচিত তাতে আক্রান্ত না হওয়া। তা প্রচারে সহযোগিতা না করা, বরং যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে তা সমাধানের চেষ্টা করা।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও অধ্যক্ষ, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার
মন্তব্য করুন