যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে এবার সর্বোচ্চ বাংলাদেশী প্রার্থী, বিজয়ী হলে একাধিক প্রার্থী পেতে পারেন মন্ত্রিত্ব
বিকুল চক্রবর্তী যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে॥ ৪ জুলাই যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনে হাউস অব কমন্সের ৬৫০ আসনের বিপরীতে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে এবার ৪ হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।এর মধ্যে বাংলাদেশী বংশোদ্ভোত প্রার্থী হয়েছেন ৩৪ জন। যার মধ্যে প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টি থেকে ৮ আট জন তাদের মধ্যে চলমান পার্লামেন্টে এমপি ছিলেন ৪ জন। তারা হলেন রুশনারা আলী, রুপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক ও আফসানা বেগম। অপর চার প্রার্থী হলেন, রুমী চৌধুরী, রুফিয়া আশরাফ, নুরুল হক আলী ও নাজমুল হোসাইন। এর মধ্যে রুশনারা আলী বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনিগ্রিন থেকে, রুপা ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনী টিউলিপ হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন এবং আফসানা পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসন থেকে লড়ছেন। আর রুমী চৌধুরী উইথহাম, রুফিয়া আশরাফ সাউথ নর্থাম্পটনশায়ার, নুরুল হক আলী গর্ডন অ্যান্ড বোচান এবং নাজমুল হোসাইন ব্রিগ অ্যান্ড ইমিংহাম আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেন থেকে আরো ৬ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মনোনয়ন পেয়েছেন।তারা হলেন হেকনি সাউথে মোহাম্মদ সাহেদ হোসাইন, ইলফোর্ড সাউথে গোলাম টিপু, আলট্রিচহাম অ্যান্ড সেল ওয়েস্টে ফয়সাল কবির, স্টার্টফোর্ড অ্যান্ড বো আসনে হালিমা খান, বেডফোর্ডে প্রিন্স সাদিক চৌধুরী, ম্যানচেস্টার রসলমোতে মোহাম্মদ বিলাল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গ্রিন পার্টির মনোনয়ন পোয়েছেন ৩জন। এদের মধ্যে ইলফোর্ড সাউথে সাইদ সিদ্দিকী, লেস্টার সাউথ আসনে শারমিন রাহমান ও ওল্ডহাম ওয়েস্ট অ্যান্ড রয়টনে সাইদ শামসুজ্জামান শামস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ক্ষমতাসীন পার্টি কনজারভেটিভ থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনী করছেন ২জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। তাঁদের মধ্যে ইলফোর্ড সাউথ আসনে সৈয়দ সাইদুজ্জামান ও দক্ষিণ লন্ডনের টটেনহাম আসনে আতিক রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়াও ইউকে রিফর্ম পার্টি থেকে ইলফোর্ড সাউথ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাজ ফরহাদ। লিবারেল ডেমোক্র্যাটস থেকে রাবিনা খান বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ডুনফারমলাইন অ্যান্ড ডলার আসনে স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি থেকে লড়ছেন নাজ আনিস মিয়া ও সোশ্যালিস্ট পার্টির হয়ে ফোকস্টোন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মমতাজ খানম নামে আরো এক বাংলাদেশী বংশোদ্ভোত নারী। এই পার্টি গুলো ছাড়াও আরো ১১ জন বাংলাদেশী বংশোদ্ভোত বিট্রিশ নাগরিক স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদের মধ্যে বেথনালগ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি গ্রিনে আজমাল মাশরুর, সুমন আহমেদ ও সাম উদ্দিন। হলবর্ন অ্যান্ড প্যানক্রাসে প্রার্থী হয়েছেন ওয়েইছ ইসলাম, স্টার্টফোর্ড অ্যান্ড বোতে ওমর ফারুক ও নিজাম আলী। পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস থেকে এহতেশামুল হক, ইলফোর্ড সাউথ থেকে নূরজাহান বেগম, বেক্সিল অ্যান্ড ব্যাটেলে আবুল কালাম আজাদ। নিউক্যাসল সেন্ট্রাল অ্যান্ড ওয়েস্টে হাবিব রহমান ও ওল্ডহাম ওয়েস্ট চেটারটন অ্যান্ড রয়স্টোন থেকে মো. রাজা মিয়া।
নির্বাচনে আসিন এসব প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই বিজয়ে আ্শাবাদী। এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের প্রথম বাংলাদেশী বংশোদ্ভোত বিট্রিশ নাগরিক রুসনারা আলী হাউস অব কমন্সের প্রথম বাংলাদেশী এমপি। তার বাড়ি সিলেট বিশ্বনাথ এলাকায়। তিনি চার বারের এমিপি। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আশাবাদী কে এমন প্রশ্নে রোশনারা আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, রাজনীতি এখন তার পেশা ও নেশা। তিনি সবসময় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। তার লেবার পার্টির এবার ক্ষমতায় আসবে বলেও তিনি আশাবাদী। কারন লেবার পার্টির নির্বাচনী ইসতেহার নাগরিকের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে করা হয়েছে।বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের স্থাস্থ্য ব্যবস্থা, শিক্ষা ও অর্থনীতির উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।
একই আসন থেকে সতন্ত্র প্রার্থী আজমাল মাশরুর জানান, বিগত সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের আশা আখাঙ্খার প্রতিফলন হয়নি।নাগরিকের জীবনমান উন্নয়নে তিনি কাজ করবেন। এ লক্ষেই তিনি প্রার্থী হয়েছেন।
উল্লেখ্য গত ১৪ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টি। তবে এবছর আলোচনার বলয়ে রয়েছে লেবার পার্টি । যুক্তরাজ্যের কানন স্ট্রীট এলাকার বাসিন্দা ইউছুফ হামিদ জানান, জনমতে লেবারপার্টি এগিয়ে রয়েছে। এবার তাদের ক্ষমতায় আসার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। লেবার পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন স্যার কির স্টারমার। যার সাথে বাংলাদেশী বংশোদ্ভোত বিট্রিশ নাগরিক প্রার্থীদের রয়েছে অতিব সু র্সম্পক। ফলশ্র্রুতিতে যদি লেবার পার্টি ক্ষমতায় যায় তাহলে একাধিক বাংলাদেশী বংশোদ্ভোত বিট্রিশ নাগরিকের মন্ত্রিত্ব পাওয়াও কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য যুক্তরাজ্যের ৪ জুলাইয়ের নির্বাচনে প্রায় ৯৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। ভোট শুরু হবে যুক্তরাজ্যের সময় সকাল ৭টা থেকে। চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যজুড়ে ৬৫০টি নির্বাচনি এলাকায় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমনসের জন্য প্রার্থী নির্বাচিত হবে। আর হাউস অব কমনসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য মোট আসনের অন্তত ৫০ শতাংশ বা ৩২৬টি আসনে জয়লাভ করতে হবে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী তাদের সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানাবেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস।
মন্তব্য করুন