যৌতুকের টাকা ও ফার্ণিচার না পেয়ে গৃহবধূকে শারীরিক নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামে তিন মাস আগে বিয়ে হওয়া এক গৃহবধূর কাছে যৌতুকের দাবিকৃত টাকা ও ফার্ণিচার না পেয়ে তাকে (গৃহবধূকে) শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিতা গৃহবধূ ঘটনার পর সুবিচার প্রার্থনা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করলে ১২ দিনেও কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় আতঙ্কে বাবার বাড়ি বসবাস করছেন গৃহবধূ।
১ এপ্রিল শনিবার সকাল নয়টায় এ ঘটনাটি ঘটলে নির্যাতিতা গৃহবধূ ৩ এপ্রিল কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দায়ের করা অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, তিন মাস আগে আদমপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের হবিব মিয়ার মেয়ে ফুলমতি বেগমের (২০) বিয়ে হয়েছিল একই গ্রামের ইউসুফ মিয়ার ছেলে জসিম উদ্দীনের সাথে। বিয়ের পর থেকে ভাসুর ইদ্রিস মিয়া ও তাদের স্বজন মখই মিয়ার প্ররোচনায় প্রাথমিকভাবে যৌতুক হিসাবে একটি মোটরসাইকেল দাবি করে। তখন বাধ্য হয়ে গৃহবধূর এক প্রতিবন্ধী ভাইয়ের ভাতার জমানো টাকা দিয়ে ১০০ সিসি একটি ডিসকোভারী মোটরসাইকেল কিনে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে নগদ আরও ৫০ হাজার টাকা ও কাঠের ফার্নিচার দাবি করলে গৃহবধূ বাবার বাড়ি থেকে নগদ টাকা ও ফার্নিচার এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে গত ১ এপ্রিল শনিবার সকাল নয়টায় স্বামী জসিম উদ্দীন তাকে (গৃহবধূকে) শারীরিকভাবে মারপিট করে জোর করে বাবার বাড়ি তাড়িয়ে দেয়।
বাবার বাড়ি গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহন করে দুই দিন পর ৩ এপ্রিল সোমবার যৌতুক দাবি করে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গৃহবধূ ফলুমতি বেগম লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। লিখিত অভিযোগ দায়ের ও ঘটনার ১২ দিন পরও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি দাবি করে বুধবার ১২ এপ্রিল দুপুরে মুঠোফোনে গৃহবধূ ফলমতি বেগম এ প্রতিনিধিকে বলেন, তিনি বাবার বাড়ি অবস্থান করলেও এখন রীতিমত আতঙ্কে আছেন। গৃহবধূ আরও বলেন, অভিযুক্ত ৩নং আসামী মখই মিয়া হুমকি দিয়ে বলেছেন, যৌতুকের টাকা ও ফার্ণিচার দিতে না পারলে প্রয়োজনে বাবার বাড়ি থেকে গৃহবধূকে আবার টেনে নিয়ে যাওয়া হবে।
অভিযুক্ত স্বামী জসিম উদ্দীন বুধবার মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে বলেন, মাত্র তিন মাস হয়েছে সামাজিকভাবে তাদের বিয়ে হয়েছে। তাদের মাঝে কোন বিরোধও ছিল না। তার স্ত্রীকে কেহ গালি গালাজও করেনি। যৌতুক দাবি করে তাকে শারীরিক নির্যাতনের প্রশ্নও উঠে না। অভিযোগটি মিথ্যে ও ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, শ্বশুর বাড়িতে একটি টমোটোর নার্সারী করে স্ত্রীর বড় ভাই আলিম মিয়ার সাথে সারা দিন সেখানেই কাজ করেন। স্ত্রীকে নির্যাতন করে এভাবে শ্বশুর বাড়িতে গড়ে তোলা নার্সারীতে কাজ করার প্রশ্নই উঠতো না।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক এ প্রতিনিধিকে বলেন, তাঁর কাছে গৃহবধূ লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি সরেজমিন তদন্ত্রক্রমে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেনকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেনও নির্যাতিত গৃহবধূর অভিযোগ গ্রহনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উভয় পক্ষের সাথে তার প্রাথমিক আলাপ হয়েছে। খুব দ্রত সময়ে সামাজিকভাবে বৈঠক করে সমস্যার নিষ্পত্তি করবেন।
মন্তব্য করুন