রমজানে তারাবির নামাজে অফুরন্ত সওয়াব
এহসান বিন মুজাহির॥ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নামাজ। আর রমজান মাসে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের বাড়তি নেয়ামত হলো নামাজে তারাবি। পবিত্র রমজান মাসে সারাদিন রোজা রেখে রাতে তারাবির নামাজ পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর কাছে অতি পছন্দনীয়।
তারাবি শব্দটি একটি আরবি পরিভাষা। এর আভিধানিক অর্থ হলো আরাম করা, বিশ্রাম করা, ধীরে ধীরে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা ইত্যাদি। তারাবির নামাজের ফাঁকে ফাঁকে যেহেতু কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নেয়া হয় এবং নামাজের সময় প্রলম্বিত করে ইবাদতের মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়, এ জন্য একে তারাবির নামাজ বলা হয়ে থাকে। তারাবি শব্দটি আরবি তারভিহাতুন থেকে এসেছে। এর অর্থ বিশ্রাম করা, প্রশান্তি লাভ করা। তারাবি নামাজে যেহেতু প্রতি চার রাকাত পরপর একটু বিশ্রাম নিয়ে তাসবিহ ও দোয়া পাঠ করা হয়। তাই এই নামাজকে সালাতুত তারাবিহ বা তারাবি নামাজ বলা হয়। (আল কামুসুল ফিকহ)।
পবিত্র মাহে রমজানের বিশেষ ইবাদত হলো তারাবির নামাজ। এই নামাজ প্রতিদিন এশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর এবং বিতিরের আগে আদায় করা হয়। ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, গুরুত্বের দিক থেকে ওয়াজিবের কাছাকাছি। ওজর বা অপারগতা ছাড়া তারাবির নামাজ পরিত্যাগ করা বড় গোনাহ।
পবিত্র কোরআন নাযিলের মাসে নামাজের মাধ্যমে কোরআন খতম অশেষ সওয়াবের। এটা জামায়াত সহকারে আদায় করতে পারলে অপরিসীম ফজিলত রয়েছে।
আমাদের দেশে দুই ধরণের তারাবিহ প্রচলিত। একটি হলো সূরা তারাবি এবং অন্যটি হলো খতম তারাবি। সূরা তারাবি হলো পবিত্র কোরআনের যে কোন সূরা দিয়ে বিশ রাকাত নামাজ আদায় করা।
খতম তারাবিহ হলো রমজান মাসে সম্পূর্ণ কোরআন সহকারে তারাবিহ আদায় করা। উভয় পদ্বতিই ইসলাম আনুমোদন করে। তবে খতমে তারাবিতে সওয়াব বেশি। সুরা তারাবির মাধ্যমে নামাজ আদায় করলেও নামাজ আদায় হবে।
তারাবির নামাজের ফজিলত : তারাবির ফজিলত সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ বহু হাদিস রয়েছ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহপাক তোমাদের ওপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন এবং আমি মাহে রমজানে মাসব্যাপী আল্লাহর ইবাদতে দাঁড়ানো তোমাদের জন্য সুন্নাত হিসেবে নির্ধারণ করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি এ মাসে রোজা পালন করবে এবং আল্লাহর সামনে ইমান ও আন্তরিকতাসহ দাঁড়াবে, সে তার গুনাহ থেকে সেদিনের মতোই নিষ্কৃতি লাভ করবে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল’। (নাসায়ি প্রথম খণ্ড, ২৩৯ পৃষ্ঠা)।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়বে, তার অতীতের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বোখারি, হাদিস নং : ৩৬)।
হজরত আবুজার গিফারী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে তারাবি নামাজ পড়ল, ইমাম প্রস্থান করা পর্যন্ত (জামাতে নামাজ সমাপ্ত করে গেল) তার কিয়ামে লাইল (রাত জাগরণের সওয়াব পূর্ণরূপে) লিখিত হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ৮০৬)।
তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম : এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। আর এ নামজকেই ‘তারাবির নামাজ’ বলা হয়।
তারাবি নামাজের নিয়ত : আরবি এবং বাংলা উভয়ভাবে নিয়ত করা যাবে। আরবি নিয়ত হচ্ছে, নাওয়াাইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা, রকাআতাই সালাতিত তারাবিহ, সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআলা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।
বাংলায় নিয়ত হচ্ছে, আমি কেবলামুখি হয়ে দুই রাকাআত তারাবির সুন্নতে মুয়াাক্কাদাহ নামাজের নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার। (জামাআত হলে যোগ করতে হবে এ ইমামের পেছনে পড়ছি)।
তারাবির নামাজ কিভাবে পড়বেন : দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা। আবার দুই রাকাআত নামাজ পড়া। এভাবে ৪ রাকাআত আদায় করার পর একটু বিশ্রাম নেয়া। বিশ্রামের সময় তাসবিহ তাহলিল পড়া, দোয়া-দরূদ ও জিকির আজকার করা। তারপর আবার দুই দুই রাকাআত করে আলাদা আলাদা নিয়তে তারাবি আদায় করা।
জামাআতে তারাবি : ফরজ নামাজ ব্যতিত অন্য সকল নামাজ একাকী আদায় করা উত্তম। কিন্তু তারাবিহ নামাজ ব্যতিক্রম। তারাবির নামাজ জামাআতের সাথে আদায় করা শরীয়ত সম্মত। বরং তারাবি একাকী আদায় করার চেয়ে জামাআতবদ্ধভাবে আদায় করা উত্তম। কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তারাবিহর নামাজ জামাআতে আদায় করেছেন এবং জামাতে আদায়ের ব্যাপারে তাকিদ দিয়েছেন।
পবিত্র রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়া নারী পুরুষের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, কোনো কারণবশত যদি কেউ তারাবির নামাজ পড়তে না পারেন তাহলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। নামাজ না পড়ার শাস্তির ভোগ করতে হবে। সমাজের অনেকেই মনে করেন তারাবির নামাজ আদায় না করলে রোজা হবে না, অথচ এমন কোন কথা হাদিসে নেই। এটা সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তারাবির নামাজ একাগ্রতার সাথে আদায় করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : প্রধান শিক্ষক শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল ও সভাপতি কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক ঐক্য পরিষদ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।
মন্তব্য করুন