রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা মহাপাপ
এহসান বিন মুজাহির॥ আত্মশুদ্ধি, নৈতিক প্রশিক্ষণ ও আত্মগঠনের মাস পবিত্র রমজানুল মোবারকের প্রথম দশকের রহমতের চতুর্থ দিন আজ। পবিত্র রমজান আসে জীবনকে পরিশুদ্ধ করার জন্য, পাপমুক্ত করার জন্য এবং তাকওয়া অর্জনের জন্য। অথচ এ পবিত্র মাসের আগমনকে পুঁজি করে একশ্রেণীর কালোবাজারি অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও দ্রব্যসামগ্রীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। ফলে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঘটে। এতে রোজাদার সাধারণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষকে নিদারুণ ভোগান্তি পোহাতে হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশে খাদ্যপণ্য মজুত ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মহাপাপ।
আমাদের দেশে রমজান আসলেই একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সবধরণের জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করার প্রবণতা খুব বেশি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজান মাসেই টাকার পাহাড় গড়ার মওকা খোঁজে। বিশেষ করে রমজানে রোজাদারদের ইফতার ও সাহরিতে ব্যবহৃত খাদ্য সামগ্রির দাম বাড়ানোর একটি প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। ফলে শহরের নির্ধারিত আয়ের মানুষের জীবনও কষ্টকর হয়ে পড়ে। পবিত্র রমজানে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করে রোজাদরকে কষ্ট দেয়া ইসলামে মহাপাপ। এবার রমজানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চক্র অবৈধভাবে মুনাফা লুটতে তৎপর হয়ে উঠেছে। পূর্বে স্বাভাবিক মূল্যে যারা খাদ্যশস্য ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি মজুদ করেছিলেন তারা স্বাভাবিক মূল্যে তা বাজারে সরবরাহ করেন না। ফলে বাজার হয়ে পড়ে আরো অস্থিতিশীল। ব্যবসায়ীরাও অধিক লাভের আশায় মালামাল মজুদ করে রাখেন।
রমজানের মত একটি ইবাদতের মাসও তাদের কাছে মুনাফা লাভের সুবর্ণ সুযোগ হয়ে আসে। অসাধুদের স্বেচ্ছাচারিতা সীমাহীন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। ধিক শত ধিক এই নিষ্ঠুর চরিত্রের মানুষদের প্রতি। এমন প্রবণতা কখনোই ইসলাম সমর্থন করেনা, এটা রমজানের শিক্ষার পরিপন্থি। অধিক লাভের আশায় মালামাল মজুদ করে চরম দামে বিক্রয় করা ইসলামে বড় গোনাহ।
বুখারি শরিফে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘ন্যায্যমূল্যে জিনিস সরবরাহকারী রিজিকপ্রাপ্ত আর মজুদ করে সংকট সৃষ্টিকারী অভিশপ্ত’। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুদ করে রাখে সে ব্যক্তি আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত এবং তার প্রতি আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন’। (মিশকাত)। এবিষয়ে আরও এরশাদ হয়েছে-‘যে ব্যক্তি (সংকট তৈরির জন্য) মজুদ করে সে পাপী ’। (তিরমিজি)।
রমজানের পবিত্রতা বিরোধী সব উপায়-উপকরণের লাগাম টেনে ধরতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অযৌক্তিকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। খাদ্যে ভেজাল, মজুদদারি, মুনাফাখোরি ও প্রতারণামূলক সব কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। অশ্লীলতা, অপকার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। সমাজের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনভাবে করতে হবে দায়িত্ব পালন। অসাধু মহলের বিরুদ্ধে কঠোর-কার্যকর পদক্ষেপ ভিন্ন গত্যন্তর নেই। সর্বস্তরের রোজাদার এবং ভোক্তা সাধারণ মজুতদদারি ও মুনাফাখোরির দুঃসহ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসাই রমজানের শিক্ষা।
এ বছরের রমজানটি অনেকের জন্য নিদারুণ কষ্টের। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য দেশে লকডাউন চলছে। কর্মজীবি ও খেটে খাওয়া মানুষজন এখন কর্মহীন হয়ে ঘরবন্দি। তাই ঘরবন্দি কর্মহীন মানুষসহ দুস্থ, গরিব, অভাবী মানুষের প্রতি রমজানের ইফতার সামগ্রীসহ সার্বিকভাবে সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও অধ্যক্ষ, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার।
মন্তব্য করুন