রমজান মাসে বিনাবেতনে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ ও ঈদ বোনাস প্রদানের দাবি

February 20, 2025,

আসন্ন রমজান মাসে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, ঈদুল ফিতরে এক মাসের মজুরির সমান উৎসব বোনাস প্রদান; ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রম আইন কার্যকর এবং মহান মে দিবসে মজুরিসহ ছুটি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবিতে ২০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মৌলভীবাজারে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন। হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া স্বাক্ষরিত স্মারকলিপির অনুলিপি শ্রমঅধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স, হোটেল মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় রমজান মাস আসার পূর্বেই দ্রব্যমূল্যের চলমান উর্দ্ধমূখী বাজার ইতোমধ্যে আরও লাগামহীন হয়ে চলছে। এরকম সময়ে রমজান মাসকে সামনে রেখে ব্যবসা মন্দার অজুহাতে হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের সামনে রয়েছে ব্যাপক চাকুরিচ্যুতির আশঙ্কা। এমনিতেই সারা বছর হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুতি করা, স্বাস্থ্য সম্মত কর্মপরিবেশ ও থাকা-খাওয়ার সু-ব্যবস্থা না থাকা, কথায় কথায় বিনা কারণে চাকুরিচ্যুতি করা, নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র না দিয়ে শ্রমআইনগত সুবিধা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন ইত্যাদি সমস্যা-সংকট নিয়ে হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা চালাতে হয়। তদোপুরি রমজান মাস আসলে আরেক দফা ছাঁটাই নির্যাতনের খড়্গ নেমে আসে শ্রমিকদের কর্মজীবনে। আসন্ন রমজান মাসে যারা চাকুরিতে নিয়োজিত তাদেরকে আরেক দফা ছাঁটাই করা হলে তারা কোথায় যাবে? চাল, ডাল, তেল, লবন, আদা, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতিতে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়ছে। তাছাড়া দফায় দফায় জ¦ালানির মূল্য বৃদ্ধিসহ বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া, চিকিৎসা, শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির ফলে জাতীয় ও জনজীবনের সংকট প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজে ধনী-গরীবের বৈষম্য দ্রুত বৃদ্ধি হচ্ছে। অথচ বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে হোটেল-রেস্টুরেন্ট-মিস্টি-বেকারি শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। আজকের বাজারদর হিসেব করলে দেখা যায় একজন মানুষের কোন রকমে খেয়ে বেঁচে থাকতে হলে তিন বেলা খাবারের জন্য দৈনিক (৫০+১০০+১০০) টাকা = ২৫০ টাকা খরচ করতে হয়। সেখানে ৬ সদস্যের একটি শ্রমিক পরিবারে বাসাবাড়িতে খরচ হিসেব ধরলে মাসে ৪০/৪৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। এর সাথে বাসাবাড়া, চিকিৎসা, সন্তানের শিক্ষা, বিনোদন, যাতায়াতসহ অন্যান্য সকল প্রয়োজন যুক্ত করেই মজুরি নির্ধারণ হওয়া যৌক্তিক। অথচ আমাদের নামে মাত্র মজুরি প্রদান করছে মালিকরা। তদোপরি রমজান মাস আসলে ব্যবসা মন্দার অজুহাত দেখিয়ে অধিকাংশ মালিকরা হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের বিনা বেতনে ছাঁটাই করে দেন। ফলে পবিত্র এই মাসে ছাঁটাইকৃত হোটেল রেস্টুরেন্ট মিস্টি বেকারী শ্রমিকদের জীবনে নেমে আসে চরম অনিশ্চয়তা, পরিবার-পরিজন নিয়ে শ্রমিকরা সিয়াম সাধনার পরিবর্তে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন। এমনকি শ্রমিকরা ঈদের আনন্দ উৎযাপন থেকেও বঞ্চিত হয়। অথচ শ্রমিকদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে মালিকদের পুঁজি আরাম-আয়েশ বৃদ্ধি হয় আর শ্রমিকদের সৃষ্ট মুনাফায় মালিকপক্ষ মহাধুমধামে ঈদ উৎযাপন করেন। ঈদ উৎসবের সময় হোটেল রেস্টুরেন্ট মিস্টি বেকারী শ্রমিকরা কোন উৎসব বোনাস পান না। শুধু আইনগতভাবে নয় ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের দিক থেকেও হোটেল-রেস্টুরেন্ট-মিস্টি-বেকারি শ্রমিকদের রমজান মাসে বিনাবেতনে ছাঁটাই করা অন্যায়। হোটেল শ্রমিকরা দৈনিক ১০/১২ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম করে অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন, যার কারণে হোটেল শ্রমিকদের  মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এছাড়া শ্রমআইন অনুযায়ী বছরে ১১ দিন উৎসব ছুটি প্রদানের আইন থাকলেও মালিকরা তার তোয়াক্কা করেন না। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ শ্রম আইন-এর ৫ ধারায় নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র, ৬ ধারায় সার্ভিস বই, ২(১০) ধারায় চাকুরীচ্যূতি জনিত ৪ মাসের নোটিশ পে, প্রতিবছর চাকুরীর জন্য ৪৫ দিনের গ্রাচ্যুয়েটি, ১০৩ ধারায় সপ্তাহে দেড়দিন সাপ্তাহিক ছুটি, ১০৮ ধারায় দৈনিক ৮ ঘন্টা সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা কাজ, অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ মজুরি প্রদান, ১১৫ ধারায় বছরে ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি, ১১৬ ধারায় ১৪ দিন অসুস্থাতার ছুটি, ১১৭ ধারায় প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য ১ দিন অর্জিত ছুটি, ১১৮ ধারায় ১১ দিন উৎসব ছুটি  ও উৎসব বোনাস প্রদানের আইন থাকলেও হোটেল শ্রমিকদেরকে এই সকল আইনগত অধিকার হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শ্রম আইনে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ ও বাসস্থানের বিধান থাকলেও শ্রমিকরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে ও থাকতে বাধ্য হন। তাই আসন্ন রমজান মাসে বিনাবেতনে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ ও ঈদুল ফিতরে এক মাসের মজুরির সমান উৎসব বোনাস প্রদান, বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে হোটেল সেক্টরে নিম্নতম মজুরি ৩০ হাজার টাকা ঘোষণা ও ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রমআইন কার্যকর এবং মহান মে দিবসে মজুরিসহ ছুটি কার্যকর করার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের  আইনগত সহযোগিতা করার জোর দাবি জানান।-প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com