রমজান মাস জাকাত আদায়ের সর্বোত্তম সময়
এহসান বিন মুজাহির : পবিত্র রমজানের দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের অষ্টম দিন আজ শুক্রবার। ঈমানদার নারী-পুরুষের ওপর এ মাসের প্রধান কর্তব্য হলো সিয়াম সাধনা করা। রমজানের সিয়াম পালনের মাধ্যমে রোজাদারগণ পরস্পরের প্রতি সহমর্মী ও সহানুভূতিশীল হন। রোজাকে দেহের জাকাতস্বরূপ বলা হয়েছে। জাকাত আদায় করলে যেমন মানুষের উপার্জিত সব সম্পদ পবিত্র হয় তেমনি রমজান মাসে রোজা পালন করলে সারা শরীর পবিত্র হয়ে যায়। হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদের জাকাত প্রদান করে, তার সম্পদ পবিত্র ও বৃদ্ধি হয’। বস্তুর পবিত্রতা হাসিলের জন্যযেমন জাকাত প্রদান করতে হয়, তেমনি মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য সত্যিকারের সিয়াম পালন করতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক বস্তুরই একটি জাকাত রয়েছে, আর মানুষের দেহের জাকাত হলো রোজা। (ইবনে মাজা) পবিত্র কুরআন কারীমে মহান আল্লাহপাক বিরাশি স্থানে নামাজের সঙ্গে সঙ্গে জাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন। যেখানে ‘নামাজ কায়েম করার কথা বলা হয়েছে সেখানেই বলা হয়েছে হয়েছে ‘জাকাত আদায় করার কথা’। জাকাত কোনো ঐচ্ছিক আমল বা ইবাদত নয়, এটা অবশ্য পালনীয়।
রমজানে জাকাত দানের আয়োজনটি খুববেশি লক্ষ্য করা যায়। এই আয়োজন খুব প্রশংসনীয়। ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ জাকাত আদায়ের জন্য কোনো মাস নির্ধারিত নেই। সম্পদের জাকাত দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নির্ধারিত না থাকলেও রমজান মাসই জাকাত আদায়ের সর্বোত্তম সময়। রমজান মাসে যেকোনো ধরনের ইবাদতসহ দান-সদকা করলে অন্য সময়ের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি সওয়াব দেয়া হয়। যদি কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একটি নফল ইবাদত করেন, তাহলে অন্যান্য মাসের সত্তর টি ফরজের সমান সওয়াব দেয়া হবে। তাই রমজান মাসে রোজাদার মুমিন বান্দারা একসঙ্গে জাকাত ও ফিতরা আদায় এ দুটি আর্থিক ইবাদত করে থাকেন। জাকাত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। যখন কোনো ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় ঠিক তখন থেকে যখন গিয়ে এক বছর পূর্ণ হবে তখন জাকাত আদায় করা ফরজ। হজরত আবুবকর সিদ্দিকের (রা.) যুগে জাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করা হয়েছিল। সচ্ছল এবং সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও জাকাত কেউ না দিলে মারাত্মক গোনাহ হবে। কিন্তু জাকাতের বিধান অস্বীকার করলে ইমানহারা হয়ে যাবে।
ইসলামে জাকাতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গতকালের প্রকাশিত নিবন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছিলো, আজ এসম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাতের প্রয়াস করা হলো। জাকাত ইসলামের প্রধান আর্থিক ইবাদত। কারো কাছে মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত কমপে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা সমান মূল্যের বর্ধনশীল সম্পদ এক বছর সঞ্চিত থাকলে তা থেকে চল্লিশ ভাগের একভাগ হারে জাকাত আদায় করতে হয়। যখন এ সম্পদ সঞ্চিত হবে, তখন থেকে চাঁদের হিসেবে এক বছর পূর্ণ হলে জাকাত ফরজ হয়। জাকাতের টারা বান্দা সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হয়। কুরআন কারীমের সূরায়ে বাকারার ২৭৬ নাম্বার আয়াতে এরশাদ হয়েছে -আল্লাহতায়ালা সদুকে নির্মূল করে দেন আর জাকাত-সদকাকে বাড়িয়ে দেন। জাকাত দানের মাধ্যমে জাকাতদাতার সম্পদ ও আত্মা পবিত্র হয়। পবিত্র কোরআনের সূরা তাওবার ১০৩ নাম্বার আয়াতে এরশাদ হয়েছে- ‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদের পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন এবং আপনি তাদের জন্য দোয়া করবেন’।
যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ। যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদেও কোনো আশঙ্কানেই, তারা চিন্তিতও হবে না (সুরা বাকারা:২৬১-২৬২)
হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন যখন কোনো বান্দা জাকাত আদায় করে তখন ফেরেশতাগণ তার জন্য এই দোয়া করেন হে আল্লাহ, যে ব্যক্তি তোমার পথে খরচ করছে তাকে তুমি আরো দান করো; আর যে ব্যক্তি সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখে, তোমার পথে খরচ করে না তুমি তার সম্পদকে ধ্বংস করে দাও। (বুখারি) জাকাত আদায় সব মুসলমানের ওপর ফরজ নয়,যেমন হজ আদায় সবার জন্য ফরজ নয়। এক্ষেত্রে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা জরুরি। আবার রমজান মাসেই জাকাত আদায় করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই।
(অসমাপ্ত) লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট
মন্তব্য করুন