রাজনগরের আমৃত্যু কারাদন্ড প্রাপ্ত পলাতক যুদ্ধাপরাধী সামছুল রাজাকারের জানাযার নামাজে বাধা
আউয়াল কালাম বেগ॥ আন্তার্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আদালতের দেয়া রায়ে আমৃত্যু কারাদন্ড প্রাপ্ত মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার যুদ্ধাপরাধী সামছুল হোসেন তরফদার ওরফে আশরাফ (৬৫) মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন থেকে তিনি পক্ষাঘাত (প্যারালাইজড) ছিলেন।
এদিকে ২ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজের পর উপজেলার কর্ণিগ্রামের জামে মসজিদে জানাযার নামাজের আয়োজন করা হলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আছকির খানের বাধায় অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে জানাযা শেষে দাফন করা হয়েছে।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার সাজা প্রাপ্ত ৫ যুদ্ধাপরাধী মধ্যে পলাতক যুদ্ধাপরাধী রাজনগর সদর ইউনিয়নের বাগাজুরা গ্রামের মৃত আত্তর মিয়া তরফদারের ছেলে সামছুল হোসেন তরফদার ওরফে আশরাফের (৬৫) মৃত্যু হয়েছে শুক্রবার রাতে। এবছরের (২০১৮ সালের) ১০ জানুয়ারী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির ট্রাইব্যুনাল রাজনগর উপজেলার জামুরা গ্রামের মৃত ফরজান আলীর ছেলে নেছার আলী (৭৫) ও গয়াসপুর গ্রামের মৃত আব্দুন নূর চৌধুরীর ছেলে ওজায়ের আহমদ চৌধুরীকে মৃত্যুদ-াদেশ দেন। অপর আসামী রাজনগর সদর ইউনিয়নের বাগাজুরা গ্রামের মৃত আত্তর মিয়া তরফদারের ছেলে সামছুল হোসেন তরফদার ওরফে আশরাফ (৬৫), সোনাটিকি গ্রামের মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে মৌলভী ইউনুছ আহমদ (৭১) ও উত্তর নন্দীউড়া গ্রামের মৃত আলকাছ মিয়ার ছেলে মোবারক মিয়াকে (৬৬) আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে। ওই মামলায় ইউনুস আহমদ ও ওযায়ের আহমদ চৌধুরী জেল হাজতে রয়েছেন। বাকিরা পলাতক। পলাতক থাকাবস্থায় সামছুল হোসেন তরফদার ওরফে আশরাফ (৬৫) বৃহস্পতিবার রাতে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
এদিকে যুদ্ধাপরাধী সামছুল হোসেন তরফদার নতুন বাড়ি করে সদর ইউনিয়নের কর্ণিগ্রামে এসেছিলেন। শুক্রবার কর্ণিগ্রামের জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর জানাযার জন্য লাশ নিয়ে যাওয়া হলেও উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আছকির খানের বাধার মুখে জানাযা না পড়েই গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানাযা পড়ে রাজনগর থানা পুলিশের তত্ত্বাবধানে তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে জড়িত থাকার ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২ জনকে মৃত্যুদ- ও ৩ জনকে আমৃত্যু কারাদ-ের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল। এদের বিরুদ্ধে ১৮ জনকে হত্যা-গণহত্যা, নির্যাতন এবং ২২টি বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৪ সালে এদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে প্রশিকিউশন। পরে ২৬ মে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। ১৩ জন স্বাক্ষীর জবানবন্দি নেয়া হয়। আদালত এদের বিরুদ্ধে পরওয়ানা জারিপর ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ওজায়ের আহমদ চৌধুরীকে মৌলভীবাজার শহরের চৌমুহনা ও আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত মৌলভী ইউনুছ আহমদকে সোনাটিকি গ্রামের তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে রাজনগর থানা পুলিশ।
এব্যাপারে রাজনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মো. আছকির খান বলেন, সে আদালতের সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী। মুক্তিযোদ্ধের গৌরব রয়েছে। তার জানাযায় থাকা আমার ও আমার এলাকাবাসীর জন্য মানহানীকর। তারা এখানে জানাযায় নিয়ে এসে দুঃশ^াহস দেখিয়েছে।
রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী সামছুল হোসেন তরফদার দীর্ঘদিন থেকে পলাতক ছিল। শুক্রবার সকালে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশের তত্ত্বাবধানে তার লাশ দাফন করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন