রাজনগরের ইউএনও’র আন্তরিক প্রচেষ্টায় ৩৪ বছর পর দেশে ফিরলেন অসুস্থ প্রবাসী অসিত লাল দে
শংকর দুলাল দেব॥ রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ৩৪ বছর পর নিজ জন্মভূমিতে ফিরলেন গুরুতর অসুস্থ অসিত লাল দে (৫৭)। তিনি অসুস্থ অবস্থায় বাহরাইনের একটি হাসপাতালে দির্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। অসিত লাল দে উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের মৃত উপেন্দ্র দে’র ছেলে।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও অসিত লালের পারিবারিক সূত্রে জানাযায়, রাজনগরের টেংরা ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের মৃত উপেন্দ্র দে’র দ্বিতীয় ছেলে অসিত লাল দে (৫৭) বিগত ১৯৮৮ সালে জীবন-জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনে পাড়ি জমান। বাহরাইন যাবার পর তিনি আপন বড়ভাই ঊমাপদ দে সহ পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। মাঝে-মধ্যে মামার বাড়ির লোকজনের সাথে কথা বলতেন বলে জানাযায়। প্রবাসে যাবার পর আর দেশেও আসেননি। চলতি বছরের ২৪ মার্চ হঠাৎ ব্রেইন স্ট্রোক করে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বাহরাইনের সালমানিয়া হাসপাতালে ভর্তি হন অসিত। প্রায় ৫ মাস ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি কোন বিল পরিশোধ করতে পারেননি। তার শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক দুরবস্থা দেখে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করে অসিত লালকে তার মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানায়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে বাহরাইনের মানামায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পালের সাথে যোগাযোগ করে। তৎক্ষনাৎ তিনি মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবগত করলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় সরকারি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অসিত লালকে দেশে ফেরত আনার বিষয়টি সমন্বয় করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর গত ১০ আগস্ট বুধবার অসিত লালকে দেশে ফেরত আনা হয়। এছাড়াও অসিতের পরিবারের আর্থিক দুরবস্থা থাকায় এবং দেশে তার চিকিৎসায় যাতে ব্যাঘাত সৃষ্ঠি না’হয় এজন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার পরিবারকে বাহরাইনের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে নগদ ৬১ হাজার টাকা সহযোগিতার ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড থেকে আরো আথির্ক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এদিকে ৩৪ বছর পর এক অনিশ্চিত জীবন থেকে নিজ মাতৃভূমিতে ফেরত আসায় অসুস্থ অসিত লাল দে ও তার পরিবারের লোকজন ভীষন খুশি।
ছোট ভাইকে ফিরে পেয়ে বড়ভাই ঊমাপদ দে বলেন, অসিত প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে কোন যোগাযোগ ছিলনা কিংবা কোন টাকাও পাঠায়নি। তার খোঁজ-খবর না’পেয়ে সব সময় খুব দুশ্চিন্তা করতাম। ভাইকে পেয়ে এখন দুশ্চিন্তা মুক্ত হলাম। এজন্য আমি ইউএনও মহোদয় সহ সকলকে ধন্যবাদ জানাই।
এব্যাপারে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পাল জানান, দীর্ঘদিন প্রবাসী অসিত লাল দে বাহরাইনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করে এবং বাংলাদেশ দূতাবাস আমার সাথে যোগাযোগ করলে বিষয়টি জেলা প্রশাসক অবগত করি এবং তার নির্দেশনায় অসিতকে দেশে আনার বিষয়টি সমন্বয় করি। ফলে বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাস ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় গত ১০ আগস্ট অসিত দেশে আসেন। তার চিকিৎসার জন্য ৬১ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে এবং আরো আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
মন্তব্য করুন