রাজনগরের কলেজ ছাত্রী শাম্মীর চার প্রেমিক ধর্ষনের পর হত্যা করে
এম. মছব্বির আলী॥ মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় চতুর্ভূজ প্রেমের বলী হয়েছেন কলেজ ছাত্রী শাম্মী বেগম (১৮)। ঘাতক প্রেমিকরাই তাকে পরিকল্পিতভাবে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষনেরপর হত্যা করেছে। হত্যার পরিকল্পনাকারী ও হত্যায় অংশ নেয়া ৪ প্রেমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন অর্থাৎ বুধবার সন্ধ্যায় ঘাতক ৪ প্রেমিক হত্যার মুল পরিকল্পনা করে বলে পুলিশ ও আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ধর্ষনের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ধর্ষনের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। তবে মেডিকেল টিমের প্রাথমিক রিপোর্টে ধর্ষনের আলামত রয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের কাছাড়ী করিমপুর গ্রামের হারুন মিয়ার মেয়ে তারাপাশা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্রী শাম্মি বেগমের সাথে (১৮) প্রেমের সম্পর্ক ছিল ওই এলাকার গনি মিয়ার ছেলে আলকুম মিয়ার (২৩)। এরপর ওই এলাকার তমজির আলীর ছেলে বরকত হোসেন সুমন (ওরফে বক্কর) (২৫), মকবুর মিয়ার ছেলে মোঃ দিপু মিয়া (২৫) ’র সাথে এবং সর্বশেষ মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সুনাটিকি গ্রামের ছকা মিয়ার ছেলে মাজহার মিয়ার (২৫) সঙ্গেও প্রেমের প্রেমের জালে জড়িয়ে পড়েন শাম্মী বেগম। একাধিক প্রেমে জড়িয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ হন প্রথম প্রেমিক আকলুম মিয়া। এনিয়ে আলকুম মিয়ার সঙ্গে শাম্মী আখতারের কয়েক বার ঝগড়াও হয়। ফোনে আলকুম মিয়া হত্যার হুমকিও দেয় শাম্মী বেগমকে।
নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন অর্থাৎ বুধবার সন্ধ্যায় এ নিয়ে ওই ৪ জন ঘাতক প্রেমিক কাছাড়ি এলাকায় বসে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যার পরিকল্পনা আসে মাজহারের মাথা থেকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বরকত হোসেন সুমন দুপুরে তাদের বাড়িতে গিয়ে একবার দেখে আসে। দিপু ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শাম্মী বেগমের বাড়িতে গিয়ে ওর মায়ের সঙ্গে গল্প করতে থাকে। রাত সাড়ে ৮ টার সময় শাম্মী বেগমের মোবাইল ফোনে একটি মিস্ডকল আসে। এরপর সে টয়লেটে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি।
পুলিশ জানায়, এদিকে লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশ শাম্মী বেগমের পিতা হারুন মিয়ার কথার ভিত্তিতে প্রথমে বরকত হোসেন সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোঃ দিপু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার বক্তব্যে অসংলগ্নতা পাওয়ায় তাদের আটক করা হয়। একই সময়য়ে শাম্মী বেগমের সহপাঠিকে দেয়া মোবাইল ফোনের হোয়াটসআপের একটি কথার সূত্রধরে ওই এলাকার আলকুম মিয়া (২৩) কে আটক করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আলকুম হত্যার ঘটনা স্বীকার করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার পরিকল্পনাকারী মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সোনাটিকি গ্রামের ছকা মিয়ার ছেলে মোঃ মাজহার মিয়াকে শুক্রবার রাতেই পুলিশ তার বাড়ি থেকে আটক করে। নিহত শাম্মী আখতারের বাবা ওই ৪ জনকে আসামী করে রাজনগর থানায় হত্যা মামলা (নং-২২) দায়ের করেছেন।
২১ মে রোববার মৌলভীবাজার আদালতে আলকুম হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানান রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বণিক।
এদিকে শনিবার তারাপাশা স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্থানীয় বাজারে শাম্মী হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে ছিলেন অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম খান, ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ মো. বশারত আলী, শিক্ষক মোবারক হোসেন, শিক্ষক শওকতুজ্জামান, আকবর আলী, টেংরা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রিপন মিয়া, রইছ আলী প্রমুখ।
রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বণিক বলেন, শাম্মী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ ঘাতক প্রেমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কি-না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ দিকে নিহত শাম্মি’র হারুন মিয়া ও মা নাছিমা বেগমের দাবী, শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে তারা বুঝতে পারছেন ধর্ষণের পর তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ পলাশ রায় জানান, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে । দু’এক দিনের মধ্যে পূর্ণঙ্গ রিপোর্ট পাওয়া যাবে।
মন্তব্য করুন