রাজনগরের মাহমুদ মিয়া সবজি ও ফল চাষে কোটিপতি
শংকর দুলাল দেব॥ মৌলভীবাজার জেলার রাজনগরে ১৫ জাতের সবজি ও ৩০ জাতের ফল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষক মাহমুদ মিয়া (৫০)। তিনি উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের উত্তর চাটি মেলাগড় গ্রামের মৃত মন্তাজ মিয়ার ছেলে। কৃষি কাজ করেই জীবীকা নির্বাহ করেন তিনি। এক সময় ভিটে মাঠি কিছুই ছিল না তার। সহায় সম্বলহীন মাহমুদ মিয়া বিগত ২০০৭ সালের নিজ উদ্যোগে মামা শ্বশুরের ৮ বিঘা ধানি জমি লীজ নিয়ে প্রথমে সবজি ও কলা চাষাবাদ শুরু করেন। প্রথম বছরই সবজি ও কলা বিক্রি করে তিনি সফলতা পান। এর পর তার আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তিনি সবজি ও ফল চাষ করে কোটিপতি।
সরেজমিনে গিয়ে মাহমুদ মিয়া ও স্থানীয়দের সাথে আলাপে জানা যায়, মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের মেলাগড় গ্রামের মৃত মন্তাজ মিয়ার ছেলে ৬ সন্তানের জনক মাহমুদ মিয়া (৫০) পিতার মৃত্যুর পর একেবারে অসহায় হয়ে যান। পিতা জীবিত থাকতেই একমাত্র সম্বল বসত ভিটা বিক্রি করে দেন। সব হারিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নেন নানা বাড়িতে। ভিটে-মাঠিহীন মাহমুদ মিয়া পিতার মৃত্যুর পর কোন উপায় না পেয়ে কিছু একটা করার চিন্তা ভাবনা করেন। কি করবেন, না করবেন এসব চিন্তা থেকেই বিগত ২০০৭ সালের বিভিন্ন জনের নিকট থেকে ১ লাখ টাকা ধার-দেনা করে পার্শ্ববর্তী উত্তর চাটি মেলাগড় গ্রামের মামা শ্বশুর জব্বার মিয়ার নিকট থেকে ৮ বিঘা ধানি জমি লীজ নিয়ে নিজ উদ্যোগে প্রথমে সবজি ও কলা চাষের সিদ্ধান্ত নেন। ধানের চেয়ে সবজি ও ফলের চাষ লাভজনক ভেবে প্রথমে কলা ও কিছু সবজি চাষের জন্য ওই জমি প্রস্তুত করেন তিনি। নিজের তত্বাবধানে কিছু শ্রমিক দিয়ে প্রায় ৮ মাস পরিচর্যা করে ওই বছরই মোট ৩ লাখ টাকার সবজি ও কলা বিক্রি করেন বলে তিনি জানান। তার শুরুটা সফল হওয়ায় পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে তিনি কাঁচকলা, পেঁপে, বড়বটি, ঝিংগা, লাউ, শসা, নালিতা, পুই শাক, মরিচ, বেগুন, কড়লা, ঢেঁড়শ সহ প্রায় ১৫ জাতের সবজি চাষ শুরু করেন। পাশাপাশি কলা, পেয়ারা, মাল্টা, লেবু, কমলা, সাতকরা, কুল, কামরাঙ্গা, বেলেম্বু, জলপাই, আম, আঁখ, জাম্বুরা, লেচু, জাম, আমলকি, কাঁঠাল, আমড়া, আনারফল, আঙ্গুরসহ প্রায় ৩০ জাতের ফলের চাষ শুরু করেন। তার খামারে প্রতিদিন ৫জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের প্রত্যেককে প্রতিদিন ৫শ টাকা করে মোট ২হাজার ৫শ টাকা পারিশ্রমিক দিতে হয়। প্রতিদিন তার খামারের ফল ও সবজি বিক্রি করে গড়ে ৭হাজার টাকা করে মাসে ২লাখ ১০ হাজার টাকা আয় হয়। এর মধ্যে প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা করে মাসে ৯০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। সকল ব্যয় শেষে তার মাসে ১লাখ ২০ হাজার টাকা করে বছরে তার ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। তার খামারে ২টি বিদেশী গরু রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২লাখ ৫০হাজার টাকা। এই আয় থেকে মাহমুদ মিয়া মামা শ্বশুরের লীজ নেয়া ৮ বিঘা জমি, প্রতিবেশীদের নিকট থেকে আরো ৮ বিঘা জমি, নিজের বাড়ির জন্য ১৬ শতাংশ ভূমি, ২টি সিএনজি গাড়ি ক্রয় করেন। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা। এছাড়াও তার ২ ছেলেকে প্রায় ৭ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ পাঠিয়েছেন। ১ ছেলে ও ১ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ওই আয় থেকে। জানা যায়, তার এই ফলের বাগান ও সবজি খামারের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে ৩০টি মাল্টার চারা, ৩০টি লেচুর চারা, বেস্টনীর জন্য নগদ ৩হাজার টাকা, ৩ বছরে বিভিন্ন ধরণের ৯০ কেজি সার এবং ১টি স্প্রে মেশিন পেয়েছেন। সব মিলিয়ে তিনি এখন রাজনগরের সফল চাষি ও কোটি টাকার স্থাবর, অস্থাবর সম্পদের মালিক।
এ ব্যাপারে চাষি মাহমুদ মিয়া জানান, পিতার মৃত্যুর পর নিঃস্ব অবস্থায় কিছু একটা করার চিন্তা-ভাবনা করতে থাকি। এক পর্যায়ে ২০০৭ সালে ১ লাখ টাকা ধার করে মামা শ্বশুড়ের ৮বিঘা জমি লীজ নিয়ে কলা ও কিছু সবজি চাষ শুরু করি এবং ওই বছরই খরচ বাদে আমার খরচ বাদে ২লাখ টাকা লাভ হয়। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। নিরলস পরিশমের মাধ্যমে আজ আমার ফলের বাগান ও সবজি খামার থেকে সব খরচ বাদে বছরে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। প্রায় ১৬ বছরের পরিশ্রমে সঞ্চিত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন এসেছি। কৃষক মাহমুদ মিয়ার কথা শোনেছি। সরেজমিনে তার ফল বাগান ও সবজি খামার দেখতে যাবো। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা প্রয়োজন সেটা অবশ্যই করা হবে।
মন্তব্য করুন