রাজনগরে আখ চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা
কুলাউড়া অফিস॥ আবারো আখচাষের দিকে ঝুঁকছেন রাজনগরের চাষিরা। স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় কুশিয়ার বা কুইয়ার। আগে চাষাবাদ ও খরচাপাতির পর কোনো লাভই থাকতো না। কিন্তু এখন গুড়ের দাম বৃদ্ধি ও ধানচাষে খরচ বেশি এবং আখচাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই আখচাষে আগ্রহী হয়েছেন। তাই বাপ-দাদার এ ব্যবসা আবারো দাঁড় করাতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের চাষিরা। আবার অনেকেরই আর্থিক সমস্যা ও মাড়াই মেশিনের দুষ্পাপ্যতার কারণে ধীর গতিতে এগুচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলায় একসময় প্রচুর জমিতে আখচাষ হতো। মধ্যখানে কমে গিয়েছিল।
৩-৪ বছর ধরে আবারো কৃষকরা বোরো জমিতে আখচাষ করছে। এসব কৃষক বাণিজ্যিকভাবে আখচাষ করতে চাইলে উন্নতমানের চারা আনতে হবে। এখানে যারাই চাষ করেন তারা স্থানীয় প্রজাতির আখ কাটিং করে লাগান। উন্নতমানের আখের চারা আনতে গেলে অনেক খরচ হয়ে যাবে। এজন্য স্থানীয় কৃষকরা এগোচ্ছেন না। সেকেলে পদ্ধতিতেই চলছে আখের চারা রোপণ, কাটা ও কাটিং এবং মাড়াই করা চলছে। কৃষকরা বলছেন, প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তা পেলে আরো বাড়ানো যাবে আখের চাষ। এতে স্থানীয় চাহিদার মিটানোর পাশাপাশি এ থেকে অর্থকড়ি আয় করাও সম্ভব। স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বর্তমানে মিটিপুর, দস্তিদারেরচক, আদমপুর ও ভুলানগর গ্রামে আখচাষ হয় বেশি। এ ছাড়াও কামারচাক, মূর্তিকোনা, উজিরপুর ও হরিপাশা গ্রামের লোকজনও আখচাষে ঝুঁকছেন। বর্তমানে ১০০ একরেরও বেশি জমিতে আখচাষ হচ্ছে। শীত মওসুমের শুতেই চাষিরা পরিপক্ষ আখ কেটে মাড়াইয়ের জন্য তৈরি করেন। আর অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে কাটিং করা আখচারা রোপণ করতে থাকেন। পরিপক্ষ আখ তুলে পাতাসহ সামনের অংশ কেটে রেখে দেন চারার জন্য। আবার ওই অংশকে চারা জমিতে রোপণ করে কিছুদিন পর খেতের জমিতে রোপণ করেন। এরপর শুরু হয় পরিচর্যা। দিতে হয় প্রচুর পরিমাণে পানি। মিঠিপুর গ্রামের আখচাষি মোছলেম উদ্দীন (৭০) বলেন, পাকা আখ জমি থেকে তুলে আনা আখ মাড়াইযন্ত্র দিয়ে মাড়াই করেন। এ যন্ত্রটি কুষ্টিয়ায় পাওয়া যায়। মাড়াই যন্ত্র চালাতে প্রয়োজন শক্তিশালী মহিষের। যন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত একটি বাঁশ মহিষের কাঁধে বেঁধে ও মহিষের চোখে হাতে বানানো চশমা পরিয়ে ঘুরাতে থাকেন। আর একজন পাশে বসে যন্ত্রে আখ দিতে থাকেন। নিচে রাখা পাত্রে জমতে থাকে আখের রস। আর এই রসকে আগেুনে ধারাবাহিকভাবে তাপ দিয়ে তৈরি হয় গুড়। এ বছর তিনি ১০ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছেন। এর থেকে তিনি অনেক লাভবান হবেন বলে আশা রাখেন। একই গ্রামের শুধাংশ দেব (৪৫) জানান, আখচাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকে ধানচাষ ছেড়ে দিয়ে আখচাষ করছেন। আর্থিক অস্বচ্চলতা না থাকলে এ এলাকায় আখচাষ আরো বেড়ে যেত। আখমাড়াই মেশিন ও মহিষের দাম বেশি থাকায় অনেকেই এ পেশায় ঝুঁকছেন না।
একটি মহিষ ক্রয় করতে ৭০ হাজার টাকারও বেশি লাগে। এছাড়াও কামারচাক, মূর্তিকোনা, উজরপুর ও হরিপাশা গ্রামের লোকজনও আখচাষে ঝুঁকছেন। রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ আজিজুর বলেন, এখানে কেউ বাণিজ্যিকভাবে আখচাষ করেন না। যারাই করেন তা দিয়ে স্থানীয়রা আখের রস বা গুড় তৈরির জন্য করেন। রাজনগরের কৃষি অফিস থেকে আখচাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়।
মন্তব্য করুন