রাজনগরে আবার বন্যা, পানিবন্দী অর্ধলক্ষ মানুষ ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ
রাজনগর প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের রাজনগরে আবার বন্যা দেখা দিয়েছে। কুশিয়ারা নদী ও কাউয়াদীঘি হাওরের পানি বৃদ্ধি এবং পাহাড়ি ঢলে উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছেন। প্লাবন ও আশ্রয় কেন্দ্রের কারণে ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। আশপাশে পানি থাকায় আরো প্রায় ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হবার উপক্রম। এছাড়া মৌলভীবাজার-রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়ক বন্যার কারণে বাস যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাজনগরে কুশিয়ারা নদী ও কাউয়াদীঘি হাওরের পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় আবার বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে কুশিয়ারা নদীর ও কাউয়াদীঘি হাওর পাড়ের ফতেপুর, উত্তরভাগ, মুন্সিবাজার, পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। হাওর পাড়ের মানুষরা মারাত্মক দুর্যোগের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। এদিকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাস জনিত জ্বর এবং পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত নারী, শিশু ও বৃদ্ধ বয়সিদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন স্বজনেরা। দুর্গত এলাকার বেশীরভাগ লোকজন দরিদ্র হওয়ায় খাদ্য সংকট ও বিশুদ্ধ পানির সমস্যায় ভোগছেন। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এসব গ্রামের কৃষকেরা। দেখা দিয়েছে গো খাদ্য সংকট। বন্যার পানিতে ফতেপুর ইউনিয়ন ও বালাগঞ্জ এলাকার সঙ্গে বাস যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বাস যোগাযোগ বন্ধ থাকায় দুর্গত এলাকার মানুষজন প্রয়োজনীয় কাজে নৌকা নিয়ে যাতায়াত করছেন।
অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদী ও কাউয়াদীঘি হাওরে পানি বৃদ্ধির কারণে ফতেপুর, উত্তরভাগ, মুন্সিবাজার ও পাঁচগাঁও ইউনিয়নের কাশিমপুর, শাহপুর, আব্দুল্লাহপুর, জাহিদপুর, বেড়কুড়ি, হামিদপুর, বিলবাড়ি, শাহবাজপুর, মুনিয়ারপাড়, বেতাহুঞ্জা, গোবিন্দপুর, ফতেহপুর, বাঘমারা, বাঘেরবাড়ি, কামালপুর, মেদিনিমহল, সুনাটিকি, মিয়ারকন্দি, আমীরপুর, ধুলিজুড়া, কেউলা, বাঘেরবাড়িসহ প্রায় ৫০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ডুবে যাওয়া গ্রামগুলোর মানুষজন নিকটবর্তী আত্মীয়ের বাড়ি কিংবা উচু বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। গত সোমবার ও মঙ্গলবার দুদিনে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে উত্তরভাগ ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের মোট ৩’শ টি বন্যা দুর্গত পরিবারের মধ্যে ত্রান বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল মুড়ি, চিনি, চিড়া ও গুড়ো দুধ। এছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে শুকনো খাবার ও এক বেলা খিচুরী বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে ইউএনও অফিস জানায়।
এছাড়াও উত্তর অন্তেহরি, দক্ষিন অন্তেহরি, জাহিদপুর, কাশিমপুর, আব্দুল্লাহপুর, শাহপুর, বেড়কুড়ি, ফতেপুর, সুনামপুর, চালবন্দ, বাদেনারায়নপুর, শাহবাজপুর সহ ১৪ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে এবং ২টিতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলার ফলে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান কিংবা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। গত শনিবার থেকে বিদ্যালয় খোলার দিন হলেও বন্যার কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না। এছাড়াও মুন্সিবাজার, পাঁচগাঁও ও উত্তরভাগ ইউনিয়নের আরো প্রায় ১০টি বিদ্যালয়ের পানি প্রবেশ করছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাফর আল সাদেক জানান, দুর্গত এলাকায় ১৪টি বিদ্যালয় বন্যায় প্লাবিতও ২টিতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলায় াাপাতত ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এসব এলাকার শিক্ষার্থীদের যাতে ক্ষতি না হয় সে জন্য আপদকালীন সময়ে বিভিন্ন বাড়িতে পাঠদানের ব্যবস্থা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন, পিআইও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন। কামালপুর ও বকসিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩০টির মতো পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের উপস্থিতিতে গত দুদিনে ৩’শ টি বন্যা দুর্গত পরিবারের মধ্যে ত্রান সামগ্রীর বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে শুকনো খাবার ও এক বেলা খিচুরী বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন