রাজনগরে আরো ১৪/১৫টি গ্রাম নদী ভাঙ্গনের কবলে কুশিয়ারা নদীর কালার বাজারে ২শ দোকান-পাট নদী গর্ভে

March 13, 2018,

স্টাফ রিপোর্টার॥ কুশিয়ারা নদী পাড়ের শত বছরের পুরানো নলুয়ারমূখ (কালারবাজার) এর দুই শতাধিক দোকান-পাট নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রায় ২০ বছর ধরে লাগাতার ভাঙ্গন বৃদ্ধিপাওয়ায় বাজারের ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দিন পাত কাটাচ্ছেন। রাজনগর,বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা থেকে আগত ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা এই ভাঙ্গন রোধ করতে পাউবোসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।

 মৌলভীবাজারের রাজনগর ও সদর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কুশিয়ারা নদী। প্রায় ১শ বছর ধরে এই নদী পথে লঞ্চ, ট্রলার ও জাহাজযোগে ব্যবসা করে আসছেন স্থানীয়রা। ২০ বছর ধরে বাজার ক্রমাগত ভাঙ্গনের কবলে পড়ায় ভাটা দেখা দেয় বাজারের ব্যবসায়। এর আগে নদীযোগে ঢাকা ও ভৈরব থেকে ওই বাজারে সকল প্রকার মালামাল সরবরাহ করা হতো। কিন্তু যেই দোকান-পাট বিলীন হচ্ছে তখন থেকে বাজারের ব্যবসায় বাধঁ লেগেছে। ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা বাজার ত্যাগ করে কিছুটা গুটিয়ে নিয়েছেন তাদের ব্যবসা বানিজ্য। তবে, যে গুনে বাজারটি তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে তা হলো-পাইকারী বাঁশ বিক্রি,বেতের তৈরি গ্রাম বাংলার হরেক রকম নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীসহ কৃষি ক্ষেতের লাঙ্গল-জোয়াল সহ আরো হরেকরকম  সামগ্রীর পৃথক হাট। এই হাট এখনো প্রতি শুক্র ও সোমবার বসে। প্রায় ১শ বছর আগে বাজার সংলগ্ন ছিক্কাগাঁও গ্রামের প্রয়াত কালা মিয়ার দেয়া এই কালারবাজারের নদী পাড়ে বসতো ধান-চালের পাইকারি হাট। সেই সময়ে উজান ও ভাটি অঞ্চলের শত শত কৃষকেরা নৌকা যোগে এসে ধান-চাল পাইকারি বিক্রি করতেন। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ,মৌলভীবাজার থেকে আসা পাইকারেরা এসে জড়ো হতেন তখন। সেই চেনা-জানা ধানের  হাট খুদ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে ধানের হাট।

ক্রমান¦য়ে প্রায় দুই যুগ ধরে এই বাজার থেকে প্রায় দুই শতাধিক কাঁচা-পাকা দোকান ও বাড়িঘর নদী গর্ভে চলে গেছে। মাটি ধসে নদীতে পড়ায় অনেক দোকান ঘর প্রায় শূন্যে ঝুলে আছে এখনো।

এছাড়াও উপজেলার বকসিপুর, আমনপুর,যোগিকোনা,কেশরপাড়া,সুনামপুর, উমরপুর ও ফতেপুর ইউনিয়নের বেড়কুড়ি,শাহাপুর,জাহিদপুরসহ আরো ৫/৬টি গ্রামে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাজারের পূর্ব পাশ্বে ভাঙ্গনরোধে বালু পাথরসহ কয়েকশত বস্তা দিয়ে নদী পাড় কার্পেটিং করলে পড়ের বছর আবার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সকল বস্তা নদীতে হারিয়ে যায়। তখন এ প্রতিবেদক পাউবো কর্তৃপক্ষের সাথে ওই বস্তায় কোন কাজ হয়নি জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলে তারা জানান, বস্তা ফেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা যাচাই-বাছাই করেছেন। এখন বুঝেছেন বাজার টিকিয়ে রাখতে হলে এখানে বৃহৎ বাজেট দিয়ে ব্লকের কাজ করাতে হবে। নলুয়ারমূখ কালারবাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আব্দুল আলীম বলেন, নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বাজারের এখন করূন অবস্থা। ভাঙ্গন পার্শ্বে ১০/১৫ টি বিল্ডিং ঝুলিয়ে আছে। যে কোন ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা।  তিনি আরো বলেন,গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সাংসদ সৈয়দা সায়রা মহসিন কালারবজারে নদী ভাঙ্গন পরিদর্শনে আসেন। তিনি তখন আক্ষেপ করে বলেন, প্রচুর লোকসমাগম হওয়া এই বাজার ভাঙ্গনমুক্ত করা প্রয়োজন। তিনি পাউবোসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ভাঙ্গনরোধ করবেন বলে পরিদর্শনে সকলকে আশ্বস্থ করেন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাইবো) মৌলভীবাজার এর নির্বাহি প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, কুশিয়ারা নদীর কালারবাজার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করতে হলে ব্লকের কাজ করতে হবে। আর এই কাজ ব্যয়বহুল। আমরা ব্লকের জন্য ঢাকায় একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলে আশা করছি এই কাজটি করা যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com