(ভিডিওসহ) রাজনগরে আলোচিত জোড়া খুন, ২২ জনকে আসামী করে মামলা : গ্রেপ্তার ৫
ইমাদ উদ দীন॥ মৌলভীবাজারের রাজনগরে ফতেহপুর ইউনিয়নের তুলাপুর গ্রামে ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সংঘর্ষে আলোচিত জোড়া খুনের ঘটনায় ২২ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন খুন হওয়া আপন দুই ভাই হেলাল মিয়া ও কাজল মিয়ার বোন সুলতানা বেগম।
২৫ সেপ্টম্বর রাজনগর থানায় মামলানং-২০, তারিখ ২৫ সেপ্টম্বর ২০২২ ইংরেজি সি: ধারা ১৪৩/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩০২/১১৪/৩৪) দায়ের করেন।
মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ ও ৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। আসামীরা হলেন রাজনগরের সুনামপুর এলাকার উজ্জ্বল দাস (২৮), অর্জুন দাস (৩০), রাজেন্দ্র কুমার দাস রাজু (৪২), রজত দাস (৪০), সজল দাস (৫০), সঞ্জয় দাস সাধু (৪৮), পরিতুষ দাস (৩০), ঝন্টু সেন (৩৫)। একই উপজেলার তুলাপুর এলাকার নান্টু সেন (৩৮), পিন্টু সেন(৩০), শশদর দাস শশই (৫৩), ইসলাহ উদ্দিন (৪৮)। ভেড়িরগাঁও এলাকার মোঃ খসরু মিয়া (৪৫), লাংলাকুনা এলাকার আলী আহমদ (৩৮), সফাতপুর এলাকার শাহিন (২৮), কান্দিগাঁও এলাকার কাওছার (২৯), সফাতপুর এলাকার মুহিবুল (২৮)। এছাড়া আরও ৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। মামলায় স্বাক্ষী হয়েছেন ১৩ জন।
মামলার বিবরণ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, জমি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলছিলো উত্তরভাগ ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামের রাজেন্দ্র দাস রাজু (৪২) ও ফতেহপুর ইউনিয়নের তুলাপুর গ্রামের হোমিও ডা: ধীরু দাসের মধ্যে। ওই দিন রাজু দাসের লোকজন বিরোধপূর্ণ ওই জায়গায় গাছের চারা রোপন করে দখলে নিতেগেলে ধীরু দাস ও রাজু দাস এর মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে সংর্ঘষ বাঁধে। এ সময় রাজু দাসের লোকজন অতর্কিত হামলা চালায়। রাজু দাস সিলেট ও রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাড়া করে লোকজন এনে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায়। ওই বিরোধপূর্ণ জায়গার সমাধানের জন্য চলা সালিশ বিচারক ইউপি সদস্য মোঃ লুৎফুর রহমান পরিস্থিত হয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলে রাজু দাসের লোকজন তার উপরও হামলা চালায়। এসময় সংঘর্ষ থামাতে যেয়ে একতরফা হামলায় ১৫ জন আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর আহত হন ওই ইউপি সদস্যসহ ৭ জন।
আহতদের স্থানীরা উদ্ধার করে সিলেট এম.এ.জি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হেলাল মিয়া ও কাজল মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনার পর পর স্থানীয় এলাকাবাসী ঘেরাও দিয়ে হামলাকারী অস্ত্রধারী ৫ জনকে একটি বাড়িতে আটকে রাখে। এর মধ্যে ২ জন রক্তমাথা ছিল। পরে রাজনগর থানা পুলিশের কাছে তাদেরকে তুলে দেয়। তারা হলেন উজ্জ্বল দাস, রজত দাস, রাজেন্দ্র দাস রাজু, সজল দাস, খছরু মিয়া। তবে পুলিশ বলছে ঘটনার দিন ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ২ জনকে সুনামগঞ্জ থেকে উজ্জ্বল দাস ও রজত দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিনয় ভূষণ রায় এ বিষয়ে জানান, গ্রেপ্তারকৃত ৫ জনের মধ্যে রাজেন্দ্র দাস রাজু, সজল দাস ও খছরু মিয়াকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করলেও মামলার ১ নং আসামী উজ্জ্বল দাস (২৮), ৪নং আসামী রজত দাস (৪০) কে চিকিৎসার জন্য সুযোগ দিলে এরা পালিয়ে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার জয়নগর (শারফিন) এলাকা আত্মগোপন করে। পরে রোববার রাতে তাদেরকে আটক করা হয়।
গ্রেপ্তার অভিযানে ছিলেন রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিনয় ভূষণ রায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সওকত মাসুদ ভূঁইয়া, এসআই সুলেমান আহমদসহ অন্যান্যরা। আসামীদেরকে ওই দিনই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদেরও গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় আহত সালিশ বিচারক ইউপি সদস্য মোঃ লুৎফুর রহমান জানান, স্থানীয় এলাকাবাসী হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত উজ্জ্বল দাস, রজত দাস, রাজেন্দ্র দাস রাজু, সজল দাস, খছরু মিয়া আটক করে একটি বাড়ির কক্ষে রাখে। পরে পুলিশের কাছে ওই ৫ জনকে সোপর্দ করা হয়। এর একটি ভিডিও তাদের কাছে রয়েছে। তিনি বলেন ৫জন ছাড়া নতুন করে এখনো কোনো আসামী ধরা হয়নি। মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামীরা এই সুযোগে হয়ত দেশ ছেড়েও পালাতে পারে। তিনি আরও বলেন সংঘর্ষ থামাতে যেয়ে ওদের পরিকল্পিত হামলায় ২টি প্রাণ চিরতরে নিভেগেল। আহত আরও অনেকেই এখনো জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমরা প্রশাসনের কাছে ও দেশ বাসীর কাছে ন্যায় বিচার চাই। লুৎফুর রহমান বলেন মামলায় দায়েরের পর থেকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকিধমকি দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন