রাজনগরে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত ২৮ গ্রামের ৩০ হাজার বানভাসি মানুষ
শংকর দুলাল দেব॥ রাজনগরে ২৮ গ্রামের ৩০ হাজার বানভাসি মানুষ এবার ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। অব্যাহত বন্যা ও জলাবদ্ধতায় এসব এলাকার মানুষ এখন জানমাল নিয়ে বেঁচে থাকার চিন্তায় ব্যস্ত। টানা ২০ দিনের বন্যা ও জলাবদ্ধতায় কুশিয়ারা পাড়ের এসব মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ১৬ জুন উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এসব এলাকা প্লাবিত হয়।
সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানাযায়, ১৬ জুন রাজনগরের উত্তরাঞ্চলের উত্তরভাগ ও ফতেপুর ইউনিয়নের ২৮টি গ্রাম মূহুর্তেই প্লাবিত হয়। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের উত্তরে কুশিয়ারা পাড়ের এসব গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। ফলে বিপাকে পড়েছে এসব এলাকার মানষুজন। দুর্গত মানুষের কথা বিবেচনা করে তাৎক্ষনিক সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪শ পরিবারের ২হাজার মানুষকে ৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। টানা ২০ দিনের বন্যায় প্লাবিত হয় সহ¯্রাধিক ঘরবাড়ি, ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ২৫টি মসজিদ, ৫টি মন্দির, ঈদগাহ, কবরস্থান সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা। এদিকে করবস্থানে পানি থাকায় গত ২ জুলাই সোনামপুর গ্রামের নজির মিয়া(৭৫) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেলে তাকে ৬কিঃমিঃ দুরবর্তী পাহাড়ি এলাকা নয়াটিলা গ্রামে দাফন করা হয় বলে জানা যায়। পবিত্র ঈদুল আযহার প্রস্তুতি সম্পর্কে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘরবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার সব জাগায় বন্যার কারণে জলাবদ্ধতা সর্বপরি আর্থিক দৈন্যতা থাকায় এবারের পবিত্র ঈদুল আযহার আনন্দ-উচ্ছাস তাদের মধ্যে নেই।
এদিকে এসব এলাকার মানুষের মধ্যে খাদ্য সংকট সহ দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। জানাগেছে, দুর্গত মানুষের জন্য বিভিন্ন খাদ্য সহায়তা, ঔষধ, স্যালাইন সহ বিভিন্ন সহায়তা করছে উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ ও সামাজিক সংগঠন। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে বন্যা দুর্গত মানুষের মধ্যে ২২’শ প্যাকেট শুকনা খাবার, ৫শ পেকেট রান্না সামগ্রী ও ১০৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও আগামী ৮ জুলাই শুক্রবার দুর্গত এলাকায় বরাদ্ধকৃত শিশু খাদ্য ও গো খাদ্য বিতরণ করা হবে বলে ইউএনও অফিস জানায়। স্থানীয় সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, জেলা পরিষদ প্রশাসক মিছবাহুর রহমান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাান খান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিলন বখত সহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন ও খাবার বিতরণ করেছেন।
উত্তভাগ যুবলীগ সভাপতি মকলু মিয়া জানান, বন্যা শুরু হওয়া থেকে দিনরাত দুর্গত মানুষের জন্য কাজ করছি, যাতে কোন ভাবেই মানুষ কষ্ট নাপায়। স্থানীয় চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি সহ বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ কাজ করছেন বানভাসি মানুষের জন্য। তবে এই মূহুর্তে দুর্গত এলাকার দরিদ্র মানুষের ঘরবাড়ি নির্মাণ ও কৃষি জমি আবাদের জন্য সার, বীজ সহ আর্থিক সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পাল জানান, এ পর্যন্ত বন্যা দুর্গতদেও মাঝে ২২’শ প্যাকেট শুকনা খাবার ও ১০৫ মেট্রিক টন জিআর চাল বিতরণ করা হয়েছে। আগামী শুক্রবার দুর্গত এলাকায় শিশু খাদ্য ও গো খাদ্য বিতরণ করা হবে।
মন্তব্য করুন