রাজনগরে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার লাগামহীন দুর্নীতি : টাকা ছাড়া কারো ফাইল নড়ে না
শংকর দুলাল দেব॥ রাজনগর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসার সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম তাহমির দৌরাত্বে অতিষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক সহ পেনশন ভোগীরা। নগদ টাকা উৎকোচ ছাড়া কোন ফাইলই তিনি ছাড় দেন না। অবসরপ্্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পেনশনের টাকা উত্তোলনেও তাকে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা। এ ব্যপারে উপজেলা পরিষদের সমস্বয় সভায় সরকারি কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন বলে জানাযায়। বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত হলেও এখনো কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে দিনদিন ভূক্তভোগীর মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। এতে যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও রয়েছে।
ভূক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হাকিমে তাহমিরের রাজনগর পোষ্টিং হয়েছে মাস চারেক আগে। যোগদানের পর থেকেই তিনি আতঙ্ক হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন সরকারী অফিস ও পেনশন ভোগীদেও জন্য। বিভিন্ন অজুহাতে আটকে দিচ্ছেন ফাইল। টাকা নেয়ার জন্য ব্যাংকেই বসে থাকে তার লোকজন। মুজিব বর্ষের গৃহ নির্মানের টাকা ছাড় নিতেও দূর্ভোগ পোহাতে হয় সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের। তার অনৈতিক এই কর্মকান্ডের জন্য সরকারী বিভিন্ন কাজও ব্যাহত হচ্ছে। এনিয়ে ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উপজেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়। উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা তার বিরোদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ কওে বক্তব্য দেন। মুজিব জন্ম শতবর্ষ উপক্ষ্যে সরকারের নেয়া বিভিন্ন প্রকল্প ব্যাহত হচ্ছে বলেও তারা উল্লেখ করেন। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিগত ১৭ নভেম্বর সিলেট ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব একাউন্টস বরাবর (স্মারক নং-০৫.৪৬.৫৮৮০.০০৪.০১১.১৯.৪৯/১(৭) ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি পাঠান। চিঠিতে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম তাহমির বিরোদ্ধে বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানদের ও অন্য ভূক্তভোগীদের অভিযোগ থাকায় যে কোন সময় অপ্রিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান। ওই পত্রের আলোকে বিগত ২৪ নভেম্বর সিলেট কার্যালয়ের নিরীক্ষা ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (প্রশাঃ) নূরুল হক তদন্ত করতে রাজনগর আসেন। তদন্তকালে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা লিখিত বক্তব্য দেন। কিন্তু এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এদিকে উপজেলা ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তার বেতন বুকে কাজ করে দেয়ার জন্য ৮০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবী করেন তিনি। টাকা দেয়ার পরও তিনি কাজ করতে বিভিন্ন টালবাহানা করেন। এদিকে উপজেলার গড়গাঁও গ্রামের সাবেক কারারক্ষী আদ্দুল আহাদের পেনশনের কাজ অনলাইনে করে দেয়া জন্য তার কাছে ৩০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবী করেন। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ২৫ হাজার টাকা নিয়ে কাজ করলেও এখন ৫ হাজার টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে জানাযায়। এনিয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বিষয়টির ব্যাপারে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সৈয়দ আব্দুল হাকিম তাহমি বলেন, আমি বর্তমানে মিটিং এ আছি। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, তার কাছে জানতে পারবেন বলেই ফোন রেখে দেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পাল জানান, বিভিন্ন জনের মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায়ও এনিয়ে আলোচনা হয়েছে। তদন্তের দুমাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কেও বিষয়টি অবগত করবো।
মন্তব্য করুন