রাজনগরে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ, দীর্ঘ হচ্ছে করোনায় মৃত্যুর মিছিলও
আউয়াল কালাম বেগ॥ রাজনগরে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। গত কয়েক দিনে মারা গেছেন ১২ জন। শনাক্ত হয়েছেন ৬২ জন। এদিকে করোনার উপসর্গ জ্বর কাশি ও সর্দি ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। হাসপাতালের আউটডোরে রোগীর প্রচন্ড ভীর প্রতিনিয়ত। তাদের সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ হিমসিম খেতে হচ্ছে।
হাসপাতাল ও বিভিন্ন সুত্রে জানাযায় রাজনগরে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে ধাবিত হওয়ায় মানুষ চিন্তিত। প্রতিদিন হাসপাতালের আউট ডোরে করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে শত শত রোগী জটলা করছেন। নমুনা পরিক্ষায়ও করোনা সনাক্তের হার আগের চেয়ে অনেক গুন বেড়েছে। গত কয়েক দিনে ৬২ জনের দেহে করোনা পজিটিভ সনাক্ত হয়েছেন এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই জন ডাক্তার পরিসংখ্যানবিদ শুসিতল পাল, অফিস সহকারী, ষ্টোর কিপার সহ ৮ জন স্টাফ করোনা আক্রান্ত আছেন। এরা আক্রান্ত হওয়ায় জনবল সংকটে পরেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গ্রাম থেকে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগী বা অন্যান্য রোগী সামাল দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে ডাক্তারদের। এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় অনেকে হোম আইসোলেশন বেচে নিয়েছেন আবার অনেক আত্বীয়স্বজন রোগী নিয়ে সিলেট হাসপাতালমুখী হচ্ছেন আবার করোনা রোগীর সাথে পাল্লা দিয়ে দীর্ঘ হচ্ছে করোনায় মৃত্যুর মিছিলও গত কয়েক দিনে করোনায় মারা গেছেন ১২ জন।
অভিঞ্জ মহল বলছেন পরিস্থিতি ভালো না। বাস্তব চিত্র আরও ভিন্ন। করোনায় ও উপসর্গ নিয়ে গত কয়েক দিনেই মারা গেছেন এ উজেলায় শতাধিক মানুষ। হোম আইসোলেশনে উপজেলার বাহিরে হাপাতালে, গাড়িতে, এম্বুলেন্সে মারা যাচ্ছে রোগী। তাদের হিসাবও উঠছে না উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান বিভাগে
চাটুরা গ্রামের ডাঃ ব্যোমকেশ দেবের স্ত্রী প্রণতি রানি দেব (৬০) করোনা সনাক্ত হয়ে ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে মারা যান নিজ বাড়িতে।
বড়দল গ্রামের শেখ আব্দুল মান্নান (৬৫) ৩০ জুলাই সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা সনাক্ত হয়ে মারা যান।
তুলাপুর গ্রামের এক মহিলা (৪০) ২৮ জুলাই করোনা উপসর্গ নিয়ে হোম আইসোলেশনে মারা যান।
ডেফলউড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর মিয়ার স্ত্রী লিমা বেগম (২১) সন্তান প্রসবের ৭ দিন পর করোনায় মারা যান। লিমার সন্তান প্রসবের সময় হলে ২১ জুলাই সিলেটের একটি প্রাইভেট মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেলে অস্ত্রোপচারে জন্ম হয় কণ্যা সন্তানের ।
জন্মের কয়েক ঘণ্টা পর লিমা আক্তার নমুনা টেস্ট করালে রিপোর্টে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয় ২৭ জুলাই তিনি সিলেট নর্থইস্ট হাপাতালে মারা যান।
তুলাপুর গ্রামের মোঃ জিলা মিয়া (৬১) ১৯ জুলাই সিলেট উসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা সনাক্ত হয়ে মারা যান।
বছির মহল গ্রামের পীরের বাড়ির খন্দকার নজাবত আলীর স্ত্রী, (৫০) ১৬ জুলাই সিলেটের একটি ক্লিনিকে করোনা সনাক্ত হয়ে মারা যান।
কান্দিগাঁও গ্রামে মা ও দুই মেয়ে এক পরিবারের তিন জন করোনায় মারা গেছেন। খোঁজ নিয়ে জানাযায় কান্দিগাঁও গ্রামের লিটন মহরীরের মা ৭০ বয়সী বৃদ্ধার করোনা উপসর্গ দেখা দেয় নমুনা পরিক্ষায় পজিটিভ আসে ১০ জুলাই তিনি হোম আইসোলেশনে মারা যান। তাঁর সংস্পর্শে আসায় মেয়ে রেবা বেগম (৪৫) ১৩ জুলাই করোনা সনাক্ত হয়ে সিলেটর একটি হাসপাতালে মারা যান। সংস্পর্শে আসা আরেক মেয়ে চুয়াবালি গ্রামের ইবা বেগম (৩০) সিলেট মা ও শিশু হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান।
টেংরা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী করতল গ্রামের আব্দুল হান্নান (৫২) করোনা সনাক্ত হয়ে সিলেট একটি প্রাইভেট হাসপাতালে কিছু দিন আগে মারা গেছেন। ১০ জুলাই পূর্ব মশরিয়া গ্রামে কয়ছর মিয়া করোনা উপসর্গ নিয়ে নিজ বাড়িতে মৃত্যু বরণ করেন। মৃতের দাফন কাপনের কাজ সম্পন্ন করে সেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকরীম ফিউনারেল ফাউন্ডেশন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বর্নালী দাস বলেন কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে হাসপাতালে কাজের চাপ বেড়েছে অনেক গুন । তাছাড়া হাসপাতালের দুই জন ডাক্তারসহ ৮ জন স্টাফ করোনা আক্রান্ত তারা হোম আইসোলেশনে আছেন এতে হাসপাতালে দেখা দিয়েছে জনবল সংকট। করোনা সময়ে ভ্যাকসিন টিকা, নমুনা সংগ্রহ কোভিড সংক্রান্ত অন্যান্য কাজ এগুলি বারতি কাজ সব দিকই সামাল দিতে হচ্ছে অল্প সংখ্যক লোক দিয়ে। তিনি আরো বলেন কোন মানুষ যাতে হাসপাতালের সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় স্টাফ দের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে আমার।
মন্তব্য করুন