রাজনগরে গবাধিপশু বিক্রি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় খামারিরা
শংকর দুলাল দেব॥ রাজনগর উপজেলার খামারিরা চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে পশু বিক্রি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। যত সময় যাচ্ছে এনিয়ে ততই শঙ্কা বাড়ছে তাদের। অন্যান্য বছর আরো আগে থেকে খামারে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেলেও এবছর লকডউনের কারণে ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম। তাছাড়া কুরবানির পশুর হাটের অনুমতি নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা থাকায় উদ্বিঘ্ন উপজেলার ছোট-বড় খামারিরা। লকডাউনে পশুখাদ্যের দাম বাড়ায় বিক্রি করতে যত দেরি হবে ততই ব্যায় বাড়বে বলে জানিয়েছেন তারা।
রাজনগরের বিভিন্ন খামার মালিকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, আকার ও জাত ভেদে একেকটি গরুকে দৈনিক ১শ থেকে ২শ টাকার দানাদার খাবার দিতে হয়। এছাড়া ঘাস, খড়, বিদ্যুৎ বিল ও শ্রমিক খরচ মিলিয়ে সারাবছরে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে হয়। অন্যান্য বছর বিয়ে সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গবাধিপশুর চাহিদা থাকলেও এবার এসবে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিক্রি করা যায়নি। আবার লকডাউন থাকায় দূরদুরান্ত থেকে ক্রেতারা আসতে পারছেন না। হাট বসবে না-কি খামার থেকে পশু কিনবেন এনিয়ে ক্রেতাদের মধ্যেও সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে বলে তারা মনে করছেন। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস অনলাইন ও ফেইসবুকের মাধ্যমে প্রচারণা করলেও মফস্বলে এ ব্যাপারে সুফল মিলবে কিনা এনিয়ে তাদের সন্দেহ রয়েছে। এ অবস্থায় বড় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি স্বল্প পুঁজির খামারিরা পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। তাদের আশা, এখনো গবাধিপশুর অস্থায়ী হাটের অনুমতি দিলে বড় অঙ্কের ক্ষতি থেকে বাঁচা যাবে। রাজনগর উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানাযায়, চলতি বছর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৬৬টি খামারে কুরবানিযোগ্য গরু ও মহিষ ৪ হাজার ৭শটি, ছাগল ও ভেড়া ২ হাজার ৫শটি রয়েছে। উপজেলায় সব মিলিয়ে এবার সাড়ে ৭ হাজার গবাধিপশুর চাহিদা রয়েছে।
উপজেলার সদরের রায়হান ডেইরি ফার্মের সত্ত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম বাবর জানান, তার খামারে শাহিওয়াল ও ফিজিয়ান মিলিয়ে ১২ টি বিক্রয়যোগ্য গরু রয়েছে। খাবার বাবদ এসব গরুর জন্য দৈনিক প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। আরো রয়েছে বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিক খরচ। এতে বছরে অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। যত সময় যাচ্ছে তত ব্যয় বাড়ছে। ঈদকে সামনে রেখে গরু গুলো বিক্রি করতে না পারলে বড় লোকসানে পরতে হতে পারে। ঈদের আগে অন্তত ৭ দিন লকডাউন তুলে দিয়ে পশুর হাটের অনুমতি দিলে গরু গুলো বিক্রি করে দিতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি। মনসুরনগর ইউনিয়নের চকিরাঐ গ্রামের শরীফা এগ্রো খামারের পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের খামারে ৭০টি বিক্রয়যোগ্য গরু রয়েছে। অন্যান্য বছর বিয়ে, শিরণী ইত্যাদি অনুষ্ঠানে গরু বিক্রি করা গেলেও এসব অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবার গরু বিক্রি করা যায়নি। এখন কুরবানির সময়ে লকডাউন থাকায় হাটবাজার বন্ধ। ক্রেতারাও আসতে পারছেন না। ফলে দুশ্চিন্তা তো আছেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা নিবাস চন্দ্র পাল জানান, আমরা অনলাইনে ও ফেসবুকে গবাধিপশুর ছবি ও বিস্তারিত তথ্য প্রচার করে খামারিদের সহযোগিতা করতে চেষ্টা করছি। পশু আগে কিনে রাখার ঝামেলা এড়াতে অনেকে দেরিতে ক্রয় করেন। আরো সময় গেলে আশা রাখি খামারিরা গবাধিপশু বিক্রি করতে পারবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা পাল বলেন, কুরবানির পশুর অস্থায়ী হাটের ব্যাপারে জেলা প্রশাসন থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি। তবে সাপ্তাহিক হাটগুলোতে গবাধিপশু বিক্রি করা যাবে।
মন্তব্য করুন