রাজনগরে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হচ্ছেনা : ক্ষতিগ্রস্থ ৪ হাজার কৃষক : প্রায় ২০কোটি টাকা ক্ষতির আশংকা

July 25, 2016,

শংকর দুলাল দেব॥ রাজনগরের কাউয়াদীঘি হাওর ও উজানের প্রায় দেড় হাজার হেক্টর আমন ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকদের প্রায় ২০ কোটি টাকা ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। পাহাড়ি ঢল ও ভারত থেকে নেমে আসা পানি বিভিন্ন খাল-বিল ও নদী পথ দিয়ে এসে কাউয়াদীঘি হাওরে পতিত হলে কাসিমপুরে স্থাপিত নিস্কাশন পাম্প গুলো পর্যাপ্ত পরিমান পানি নিস্কাশন করতে না’পারায় হাওর থেকে উঠে আসা পানি উজানের আমন ফসলের মাঠকে দীর্ঘদিন ধরে তলিয়ে রেখেছে।

water-around প্রতিকুল এ অবস্থার কারণে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার ৪০টি গ্রামের প্রায় ৪ হাজার দরিদ্র কৃষক। পানি উন্নয়ন বোর্ড সময় মতো হাওরের অতিরিক্ত পানি পাম্পের মাধ্যমে নিস্কাশন করতে না’পারায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে ভূক্তভোগি কৃষকরা মনে করছেন।
রাজনগর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাযায়, চলতি বছরে উপজেলায় মোট ১২ হাজার ৫২০ হেক্টর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় যা গতবারের তুলনায় ৭৭০ হেক্টর কম। এবার আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৩ হাজার ৫৪৩ মেঃ টন (চাউল)। যার বাজার মূল্য ১১৭ কোটি ৪০ লাখ ৫ হাজার টাকা। কিন্তু পাহাড়ি ঢল ও ভারত থেকে নেমে আসা পানি বিভিন্ন খাল-বিল ও নদী পথ দিয়ে এসে কাউয়াদীঘি হাওরে পতিত হলে কাসিমপুরে স্থাপিত নিস্কাশন পাম্প গুলো পর্যাপ্ত পরিমান পানি নিস্কাশন করতে না’পারায় হাওর থেকে উঠে আসা পানি উজানের আমন ফসলের মাঠকে দীর্ঘদিন ধরে তলিয়ে রাখায় প্রায় দেড়হাজার হেক্টর জমিতে এবার আমন ফসল আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিকুল এ অবস্থার কারণে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার ৪০টি গ্রামের প্রায় ৪ হাজার হাজার দরিদ্র কৃষক। সংশ্লিষ্ঠ বিভাগ জানায়, পানিতে তলিয়ে যাওয়া দেড় হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ না’হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় ২০ কোটি টাকা।

13726744_1742213322663023_7
উপজেলার মধিপুর গ্রামের আমন চাষি হীরা মিয়া (৬০) জানান, অতীতে সব সময়ই আমরা আমন চাষ করেছি। কিস্তু বিগত ৭/৮ বছর ধরে কাউয়াদীঘির অতিরিক্ত পানি নিস্কাসন নাকরার কারণে আমন আবাদ করা যাচ্ছেনা। আমন ফসলই আমাদের এলাকার চাষিদের প্রধান ফসল। কৃত্রিম এ সংকটের কারণে তা আবাদ করতে নাপারায় চরম ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে এলাকার হাজার হাজার দরিদ্র কৃষক।
এদিকে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে জেলার বৃহত্তম হাওর কাউয়াদীঘির বুরো ধান নিরাপদে উৎপাদনের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাউয়াদীঘি বুরো ক্যাচম্যান্ট এরিয়ার অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনের জন্য ১২শ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন ৮টি পাম্প বিশিষ্ঠ কাশিমপুর পাম্প হাউজ নির্মাণ করে।

13754590_1742493065968382_5 কিন্তু অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে হাওরের পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এদিকে পাউবো’র নিয়ন্ত্রনাধীন পাম্প হাউজের ৮টি পাম্প বিদ্যুতের লো’ভোল্টেজ ও পাম্প গুলোর নিস্কাশন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কারণে সময় মতো পানি নিষ্কাশন করতে না’পারায় হাওরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওরতীরবর্তী উজানের আবাদযোগ্য দেড় হাজার হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ৩৩ বছর পূর্বে স্থাপিত এসব পাম্প দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩/৪’শ কিউসেক এর বেশি পানি নিস্কাশন করা যাচ্ছেনা। এর মধ্যে বিদ্যুতের লো’ভোল্টেজ সমস্যার কারণে সব পাম্প এক সাথে চালানো সম্ভব হচ্ছেনা। যতটা পানি নিস্কাশন করা হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশী পানি হাওরে পতিত হচ্ছে। জানাযায়, এ সমস্যা নিরসনের জন্য ইতোপূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার কর্তৃক ডিপিপি প্রস্তাব যথাযত মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয় এবং এ প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে বিগত একনেক সভায় কাশিমপুরের জন্য আধূনিক ৮টি পাম্প বিশিষ্ঠ নতুন পাম্প হাউজ নির্মানের অনমোদন দেয়া হয়। সূত্র জানায়, বর্তমানে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এ পাম্প তৈরী ও ক্রয়ের জন্য জাপানী একটি প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হবে এবং পরবর্তী যথাযত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দ্রুত নতুন পাম্প হাউজের কাজ শুরু করা হবে। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন এ পাম্প হাউজ স্থাপিত হলে হাওর ক্যাচম্যান্ট এলাকার বাইরের পানিও নিস্কাশন করা সম্ভব হবে। এতে বুরো আবাদের পাশাপাশি আমন ধান আবাদ নিরাপদ করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্ঠ বিভাগ জানায়।

amon-dhan
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মোঃ সামসুল হক জানান, ১৯৮৩ সালে ১২শ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন পুরনো এ পাম্প গুলো দিয়ে এখন ৩/৪’শ কিউসেক এর বেশি পানি নিস্কাশন করা যাচ্ছে না। তারপর বিদ্যুতের ভোল্টেজ সমস্যা তো রয়েছে। এ সমস্যা নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রনালয়ে ডিপিপি প্রস্তাব পাঠানো হয় এবং বিগত একনেক সভায় কাশিমপুরের জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ৮টি পাম্প বিশিষ্ঠ নতুন পাম্প হাউজ নির্মানের অনমোদন দেয়া হয়। এ পাম্প তৈরী ও ক্রয়ের জন্য জাপানী একটি প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হবে। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন এ পাম্প হাউজ স্থাপিত হলে হাওর ক্যাচম্যান্ট এলাকার বাইরের পানিও নিস্কাশন করা সম্ভব হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে আগামীতে কাওয়দীঘি ও এর তীরবর্তী কৃষকদের বুরো এবং আমন আবাদে আর এ সমস্যা থাকবে না।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com